ঢাকা, রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ৭ পৌষ ১৪৩১

নওগাঁর বদলগাছীতে নিয়ম না মেনে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির চাল বিতরণের অভিযোগ

উজ্জ্বল কুমার সরকার নওগাঁ জেলা প্রতিনিধি

 প্রকাশিত: ডিসেম্বর ০৯, ২০২৪, ১১:০৬ রাত  

নওগাঁর বদলগাছীতে নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে পরিপত্রের নির্দেশনা না মেনে বিভিন্ন খরচের নামে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির চাল বিক্রির লাভের টাকা লুটপাট করার অভিযোগ উঠেছে উপজেলা খাদ্যবান্ধব কমিটিসহ জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের বিরুদ্ধে।খোঁজ নিয়ে জানা যায়, উপজেলা খাদ্যবান্ধব কমিটির সহায়তায় উপজেলার ৮টি ইউনিয়নের সচিবদের (ইউনিয়ন পরিষদ প্রশাসনিক কর্মকর্তা) কে ডিলার সাজিয়ে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির চাল বিক্রি করে লাভের টাকা নিজেদের পকেটে রেখেছে বলে এমন অভিযোগ পাওয়া গেছে। তবে ইউপি সচিবরা বলছেন উপকারভোগীদের কাছে চাল বিক্রি করতে বিভিন্ন খাতে টাকা খরচ হয়েছে। চাল বিক্রির লাভের টাকা থেকে খরচ বাদ দিয়ে বাকী টাকা সরকারি কোষাগারে জমা দেওয়া হবে।বিষয়টি নিয়ে কেউ কেউ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লিখেন “ডিলার নিয়োগের মাধ্যমে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির চাল বিক্রির কথা থাকলেও তা না করে ৮টি ইউনিয়ন পরিষদের সচিব কে ডিলার বানিয়ে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির চাল বিক্রি করছে। বিক্রির লাভের টাকা কার পকেটে যাবে। এ নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা করে ফেসবুকে স্ট্যাটাস ও দিয়েছেন।স্থানীয় সচেতন মহলের অভিযোগ, নিয়ম অনুযায়ী ডিলার নিয়োগ করে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির চাল বিক্রির কথা। কিন্তু তা না করে উপজেলা খাদ্যবান্ধব কমিটির সভাপতি উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও সদস্য সচিব উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক ইউনিয়ন পরিষদের সচিবদের ডিলার বানিয়ে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির চাল বিক্রির লাভের টাকা হরিলুটের পায়তারা করছে। ইউনিয়ন পরিষদের সচিব ও জনপ্রতিনিধিসহ সবাই বেতনভূক্ত কর্মচারি। চাল বিক্রির লাভের টাকা সচিবদের পকেটে কেন থাকবে। ইউনিয়ন পরিষদের যেকোন কাজ করার দাায়িত্ব তাদেরই। সুতরাং চাল বিক্রির পুরো লাভের টাকা সরকারি কোষাগারে জমা করার আহ্বান জানান তারা। উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক অফিস সূত্রে জানা গেছে, অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে গত ৭ই আগষ্ট উপজেলার সকল পুরাতন খাদ্যবান্ধব ডিলার বাতিল করে এবং ১২ই নভেম্বর উপজেলার নতুন ডিলারের তালিকা প্রকাশ করে উপজেলা খাদ্যবান্ধব কমিটি। আবারও ১৪ই নভেম্বর অভিযোগ হলে ১৮ই নভেম্বর নতুন ডিলার নিয়োগ স্থগিত করে উপজেলা খাদ্যবান্ধব কমিটি। এর কারণে উপজেলার ৭ হাজার ৭ শত ৫৫ জন খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির আওতায় উপকারভোগী দুই মাস ধরে চাল না পেয়ে পরে চরম বেকায়দায় পড়ে। উপকারভোগীদের কথা চিন্তা করে গত ১৯শে নভেম্বর (মঙ্গলবার) নিয়মনীতি মেনে নওগাঁ সদর ও বদলগাছী উপজেলার অক্টোবর মাসের চাল নভেম্বর মাসে বিতরণের জন্য খাদ্য অধিদপ্তরের মহা পরিচালক বরাবর একটি পরিপত্র জারি করে খাদ্য মন্ত্রণালয়। এমন নির্দেশনা পেয়ে জেলা খাদ্য অফিসের নির্দেশনায় উপজেলা কমিটির সহায়তায় ইউনিয়ন কমিটির মাধ্যমে চাল বিক্রির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। কিন্তু নভেম্বর মাসের চাল ও বিতরণ করার সিদ্ধান্ত নেন। এবং ইউনিয়ন পরিষদের সচিবগণ ১৩ টাকা কেজি ধরে ব্যাংকে টাকা জমা দিয়ে চাল উত্তোলন করে চাল বিক্রি করছেন বলে জানান, গত ২৬শে নভেম্বর মঙ্গলবার থেকে ২ ডিসেম্বর সোমবার সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত ৮টি ইউনিয়ন পরিষদ সরে জমিনে ঘুরে দেখা যায়, ইউপি চেয়ারম্যান, সদস্য, সচিব, এবং গ্রাম পুলিশ মিলে মোট ৭ হজার ৭শত ৫৫ জন খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির উপকারভোগী পরিবারের কাছে কেজি প্রতি ২ টাকা বেশী লাভে একসাথে অক্টোবর-নভেম্বর দুই মাসের চাল বিক্রি করছেন। এতে লাভ হয় ৯ লাখ ৩০ হাজার ৬ শত টকা। তবে চাল বিক্রির পুরো লাভের টাকা সরকারি কোষাগারে জমা না করে ইউপি সচিবরা নিজেদের পকেটে রেখেছে। ফলে এই টাকা হরিলুট হওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। বদলগাছী উপজেলার মেহরাব সাঈদ, নাহিদ আখতার, আঞ্জুমান আরাসহ একাধিক ইউপির সচিবগণ জানান আমাদের কে চাল পৌঁছে দিয়েছে ও চাল বিতরণ করতে বলা হয়েছে আমরা করেছি। ইউনিয়ন পরিষদ থেকে চাল উত্তলোন করার জন্য টাকা ট্রেজারির মাধ্যমে ব্যাংকে জমা দিয়েছেন বলে জানতে চাইলে তিনারা বলেন, ব্যাংকে কে টাকা জমা করেছে/ দিয়েছে তা আমরা বলতে পারবো না। তবে ইউএনও স্যার এবং উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক অফিসের নির্দেশনায় চাল বিতরন করা হচ্ছে। চাল বিক্রির লাভের টাকা কোথায় যাবে বলে প্রশ্ন করলে তারা বলেন তা আমরা জানি না। আমাদের নামে উপজেলা প্রশাসন ব্যাংকে টাকা জমা করেছে। আমরা উপজেলা প্রশাসনের সহায়তায় চাল বিতরণ করছি। লাভের টাকাও তাদেরকেই বুঝে দিবো।খাদ্যবান্ধব চাল বিতরণের ব্যপারে উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা সাবরিনা মোস্তারী বলেন, জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মহোদয়ের দিক নির্দেশনায় ইউনিয়ন কমিটির মাধ্যমে খাদ্য বান্ধব কর্মসূচির চাল বিক্রির সিদ্ধান্ত হয়। নির্দেশনা অনুযায়ী চাল বিক্রি করছেন সচিবরা। ইউনিয়ন পনিষদের সচিবরা বলছেন আমরা খাদ্যবান্ধবের চাল উত্তলোনের জন্য কোন টাকা জমা দেই নি আমাদের নামে টাকা জমা করেছেন উপজেলা প্রশাসন বলে প্রশ্ন করলে তিনি কিছুটা এড়িয়ে গিয়ে বলেন সচিবদের নামেই টাকা জমা হয়েছে। তারাই টাকা জমা করেছে। লাভের প্রায় সাড়ে ৯ লাখ টাকা কোথায় যাবে বলে অপর প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, ৭০ শতাংশ টাকা রেখে বাকী টাকা সরকারি কোষাগারে জমা হবে। খাদ্যবান্ধব চাল বিতরণ ও লাভের টাকার ব্যপারে জানতে চাইলে উপজেলা খাদ্যবান্ধব কমিটির সভাপতি ও উপজেলা নিবার্হী অফিসার (ইউএনও) মাহবুব হাসান বলেন, এ বিষয়ে জেলা এবং উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কর্মকতার্রা ভালো বলতে পারবেন। খাদ্যবান্ধব চাল বিতরণ ও লাভের টাকার ব্যাপারে জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা মো. ফরহাদ হোসেন মুঠোফোনে বলেন, যারা চাল বিক্রি করছেন তারাই লাভের টাকা পাবেন। অতিরিক্ত ৩০ শতাংশ লাভের টাকা সরকারি কোষাগারে জমা হবে। লাভের টাকা ভাগ- বাটোয়ারা হবে বলে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের এরকম কোন আদেশ আছে কি না বলে প্রশ্ন করলে তিনি এমন বিষয়টি এড়িয়ে যান।