ঢাকা, রবিবার, ১৫ জুন ২০২৫, ৩১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

রংপুরে জাপা নেতার আলটিমেটাম, পাল্টা প্রতিরোধে মাঠে এনসিপি ও ছাত্র আন্দোলন

নিজস্ব প্রতিবেদক

 প্রকাশিত: মে ২৯, ২০২৫, ১২:০৭ দুপুর  

ছবি: সংগৃহিত

রংপুর সিটি করপোরেশনের অপসারিত মেয়র ও কাউন্সিলরদের পুনর্বহালের দাবিতে বিক্ষোভ ও সাত দিনের আলটিমেটাম দিয়েছেন জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান ও সদ্য অপসারিত মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা। বুধবার (২৮ মে) বিকেলে নগর ভবনের সামনে আয়োজিত সমাবেশ থেকে তিনি হুঁশিয়ারি দেন, দাবি মানা না হলে ঈদের পর রংপুর শহর অচল করে দেওয়া হবে।

তবে তার এই ঘোষণা ঘিরে রাতেই পাল্টা আন্দোলনে নেমেছে জাতীয় নাগরিক কমিটি (এনসিপি) ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। তারা মোস্তফার বক্তব্যকে ‘রাজনৈতিক প্ররোচনা’ আখ্যা দিয়ে প্রতিবাদ সমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিল করেছে। এনসিপি নেতারা জাপাকে আখ্যায়িত করেছেন ‘আওয়ামী লীগের দোসর ও ফ্যাসিস্ট সহযোগী’ হিসেবে এবং মোস্তফার গ্রেপ্তারের দাবিও তুলেছেন।

বুধবার রাত ৯টার দিকে রংপুর প্রেস ক্লাবের সামনে জড়ো হন এনসিপি এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীরা। সেখান থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল নগর ভবনের দিকে রওনা হয়ে জাহাজ কোম্পানি মোড়ে গিয়ে শেষ হয়। পরে সেখানে অনুষ্ঠিত প্রতিবাদ সমাবেশে সংগঠনের নেতারা ক্ষোভ প্রকাশ করেন।

এনসিপির রংপুর জেলা সংগঠক আলমগীর নয়ন সমাবেশে বলেন, “যারা দীর্ঘ ১৬ বছর আওয়ামী লীগের ছত্রছায়ায় থেকে গুম-খুন-দুর্নীতির অংশীদার হয়েছে, তারা আজ নিজেদের গণতন্ত্রের মুখোশ পরে মিছিল করছে। প্রশাসনকে হুঁশিয়ার করে দিতে চাই-এদের অবিলম্বে গ্রেপ্তার করুন। অন্যথায় রংপুরে আমরা কঠোর কর্মসূচিতে যাব।”

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মহানগর আহ্বায়ক ইমতিয়াজ আহমেদ ইমতি বলেন, “খুনি হাসিনা পালিয়ে গেছে, কিন্তু তার দোসররা এখনো মাঠে। জাতীয় পার্টি হলো সেই ফ্যাসিস্ট সরকারের সহচর, যারা আন্দোলন দমন, গুম-খুনে সরাসরি জড়িত ছিল। তাদের এখন রাজনীতি করার কোনো অধিকার নেই। অবিলম্বে জাতীয় পার্টিকে নিষিদ্ধ করার দাবি জানাচ্ছি।”

এর আগে দুপুরে নগর ভবনের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশে মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা বলেন, “আমরা অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা এবং স্থানীয় সরকার উপদেষ্টাকে বলছি, আগামী সাত দিনের মধ্যে আমাদের পুরনো অবস্থানে ফিরিয়ে দিন। তা না হলে ঈদের পর নগর ভবনের সামনে অনির্দিষ্টকালের জন্য অবস্থান নেব।”

তিনি আরও বলেন, “আমরা কোনো দলীয় স্বার্থে নয়, জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়ে দায়িত্ব পালন করেছি। আজ প্রশাসনিক সিদ্ধান্তে আমাদের অপসারণ করা হয়েছে। এটা রংপুরবাসীর সঙ্গে অবিচার।”

জাতীয় পার্টির এই দাবির মুখে এনসিপি ও ছাত্র আন্দোলনের প্রতিবাদ কর্মসূচি রংপুরের রাজনীতিকে নতুন করে উত্তপ্ত করে তুলেছে। একই ইস্যুতে দুটি বিপরীতমুখী অবস্থান রংপুরের রাজনীতিতে সংঘাতের শঙ্কা বাড়িয়ে তুলছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

একদিকে ক্ষমতাচ্যুত জনপ্রতিনিধিদের ফিরিয়ে আনার দাবি, অন্যদিকে গণতন্ত্র ও ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনের পক্ষ থেকে সেই দাবির বিরুদ্ধেই পাল্টা আন্দোলন-সব মিলিয়ে রংপুর এখন উত্তপ্ত রাজনৈতিক কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে।


বাংলাধারা/এসআর