যশোরে এইচআইভি আক্রান্ত নারীর দ্বিতীয় সন্তানের জন্ম: মানবিকতার এক অনন্য দৃষ্টান্ত
প্রকাশিত: জুন ০১, ২০২৫, ০৫:১৮ বিকাল

ছবি: সংগৃহিত
যশোরে এইচআইভি (এইডস) আক্রান্ত এক নারী অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে জন্ম দিয়েছেন তার দ্বিতীয় সন্তান। মানবিক বিবেচনায়, সব ধরনের সতর্কতা মেনে রোববার যশোর জেনারেল হাসপাতালে সফলভাবে সম্পন্ন হয় এ জটিল সিজারিয়ান অপারেশন। মা ও নবজাতক বর্তমানে সুস্থ রয়েছেন এবং তাদের নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, এইডস আক্রান্ত নারীর অস্ত্রোপচারের জন্য কয়েক দিন ধরেই চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীরা বিশেষ প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। অবশেষে রোববার সকাল ১০টায় অপারেশন শুরু হয়ে শেষ হয় দুপুর ১২টায়। গাইনী বিশেষজ্ঞ ডা. জেসমিন সুলতানার নেতৃত্বে সাত সদস্যের একটি অভিজ্ঞ চিকিৎসক দল অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে অপারেশনটি সম্পন্ন করেন।
অপারেশনের পরে হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মো. হুসাইন শাফায়াত বলেন, “এই ধরনের অপারেশন অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ হলেও মানবিক দিক বিবেচনায় আমরা সর্বোচ্চ সতর্কতা নিয়ে এটি সম্পন্ন করেছি। মা ও নবজাতক উভয়েই বর্তমানে সুস্থ আছেন।”
এইডস আক্রান্ত রোগীর অস্ত্রোপচারের পর সংক্রমণ রোধে বিশেষ সতর্কতা হিসেবে হাসপাতালের গাইনি বিভাগের অপারেশন থিয়েটার দুই দিনের জন্য বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, এ ধরণের অপারেশনকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন বিভাগের চিকিৎসকদের মধ্যে মতবিরোধ দেখা দিয়েছিল। কারণ, যশোর জেনারেল হাসপাতালে এইডস রোগীর জন্য বিশেষায়িত অপারেশন সুবিধা নেই। এমনকি অপারেশনের পর থিয়েটারকে তিন দিন পুরোপুরি বন্ধ রাখতে হয়, যা হাসপাতালের স্বাভাবিক চিকিৎসাসেবা ব্যাহত করতে পারে।
তাই অনেকেই পরামর্শ দিয়েছিলেন রোগীকে বিশেষায়িত হাসপাতালে স্থানান্তরের জন্য। কিন্তু আর্থিকভাবে অস্বচ্ছল হওয়ায় ওই নারী ঢাকায় গিয়ে চিকিৎসা করাতে অপারগ ছিলেন। ফলে শেষ পর্যন্ত মানবিক দিকটিকেই প্রাধান্য দিয়ে যশোরেই অস্ত্রোপচারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
মনিরামপুর উপজেলার ওই গৃহবধূর জীবনের গল্প এক জীবন্ত দৃষ্টান্ত। ২০১৮ সালে অ্যাপেন্ডিসাইটিসের চিকিৎসা নিতে গিয়ে প্রথম সার্জারির মুখোমুখি হন তিনি। এরপর শহরের একটি বেসরকারি ক্লিনিকে চিকিৎসা নেন। কিন্তু কিছুদিন পর তার শরীরে ধরা পড়ে প্রাণঘাতী এইচআইভি ভাইরাস। এরপর থেকেই গোপনে চিকিৎসা চলছিল। এইডস আক্রান্ত অবস্থাতেই দ্বিতীয়বারের মতো গর্ভবতী হন তিনি।
২০১৯ সালে একই হাসপাতালে তার প্রথম সন্তানেরও সিজারিয়ান অপারেশন হয়েছিল। তখনও চিকিৎসকরা ঝুঁকি নিয়ে সফলভাবে অপারেশনটি করেন। এটি যশোর জেনারেল হাসপাতালে এইডস আক্রান্ত রোগীর দ্বিতীয় সিজারিয়ান অপারেশন।
অর্থনৈতিক অসচ্ছলতা ও চিকিৎসা ব্যবস্থার সীমাবদ্ধতার মাঝে, এই ঘটনা একটি বড় উদাহরণ হয়ে উঠেছে। একদিকে চরম ঝুঁকি, অন্যদিকে এক অসহায় নারীর পাশে দাঁড়ানোর ডাক- চিকিৎসকরা শেষ পর্যন্ত মানবিকতার পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন।
এই ঘটনাটি প্রমাণ করে, চিকিৎসা শুধুমাত্র পেশাগত দায়িত্ব নয়- এটি একটি মানবিকতা ও সহানুভূতির বহিঃপ্রকাশও। যশোর জেনারেল হাসপাতালের চিকিৎসক ও কর্মীদের এই উদ্যোগ শুধু একটি শিশুর জন্মদানের সফলতা নয়, বরং সমাজে ভিন্নধর্মী, মানবিক ও ইতিবাচক নজির স্থাপন করেছে।
বাংলাধারা/এসআর