চতুর্থ দিনেও বন্ধ চক্ষু হাসপাতালের সেবা, দুর্ভোগে রোগীরা
প্রকাশিত: মে ৩১, ২০২৫, ১২:০৩ দুপুর

ছবি: সংগৃহিত
জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে চতুর্থ দিনের মতো চিকিৎসাসেবা বন্ধ রয়েছে। জুলাইয়ের গণঅভ্যুত্থানে আহতদের সঙ্গে হাসপাতালের চিকিৎসক ও কর্মচারীদের মধ্যে সংঘর্ষ এবং উত্তেজনার জেরে গত বুধবার সকাল থেকে বন্ধ রয়েছে সব ধরনের সেবা কার্যক্রম। এতে প্রতিদিন শত শত রোগীকে ফিরে যেতে হচ্ছে।
আজ শনিবারও একই পরিস্থিতি বিরাজ করছে। ভোর থেকেই রোগীরা লাইনে দাঁড়িয়ে থাকলেও চিকিৎসা না পেয়ে হতাশ হয়ে ফিরে গেছেন। চিকিৎসা না পেয়ে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন তারা।
আজিমপুর থেকে আসা আজিজ মিয়া বলেন, ‘সরকারি হাসপাতাল যখন চার দিন ধরে বন্ধ, তখন সাধারণ মানুষ কোথায় যাবে? বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নেওয়ার সামর্থ্য নেই। তাহলে আমরা কী করবো?’
চলমান সংকট নিরসনে শুক্রবার হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ, প্রশাসনের সচিব, ছাত্র প্রতিনিধি ও আন্দোলনকারীদের সঙ্গে একাধিক বৈঠক হলেও কোনো কার্যকর সিদ্ধান্ত আসেনি। আন্দোলনকারীদের একজন, রোহান আহমেদ, যিনি হাসপাতালেই চিকিৎসাধীন, বলেন, ‘আমরা এখনও হাসপাতালে আছি, কিন্তু সব সেবা বন্ধ। খাবার ও ওষুধও বাইরে থেকে আনতে হচ্ছে।’
তিনি জানান, দুপুরে আবারও বৈঠক হয়েছে, তবে তাতেও সমাধান আসেনি। এর আগের বুধবার আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠকেও আলোচনায় বসা হয়। ওই বৈঠকে এনসিপির নেতৃবৃন্দসহ উপদেষ্টারা উপস্থিত ছিলেন এবং আহত কিছু আন্দোলনকারীকে অন্য হাসপাতালে স্থানান্তরের প্রস্তাব দেওয়া হয়।
হাসপাতাল সূত্র জানায়, চিকিৎসক ও কর্মচারীরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। তারা অভিযোগ করেছেন, আন্দোলনকারী জুলাই যোদ্ধাদের একটি অংশ সহিংস আচরণ করেছেন, হাসপাতালের ভেতর হামলা ও ভাঙচুর করেছেন। এতে আতঙ্কে রয়েছেন সবাই।
ভারপ্রাপ্ত পরিচালক ডা. জানে আলম বলেন, ‘চিকিৎসকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত তারা কাজে ফিরতে চাইছেন না। আমরা প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছি, চেষ্টা করছি দ্রুত সেবা চালুর।’
হাসপাতালের একাধিক সূত্র জানায়, ২৫ মে চারজন আহত আন্দোলনকারী সঠিক চিকিৎসা না পাওয়ার অভিযোগ এনে বিষপান করেন। এরপর ২৭ মে এক আহত তরুণ পরিচালকের কক্ষে গিয়ে নিজের শরীরে পেট্রোল ঢেলে আগুন ধরিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। এই ঘটনাগুলোই উত্তেজনার পারদ চরমে তুলে দেয়।
সবচেয়ে ভয়াবহ ঘটনা ঘটে গত বুধবার বেলা ১১টার দিকে, যখন জুলাই যোদ্ধা, হাসপাতাল কর্মচারী এবং রোগীদের স্বজনদের মধ্যে ত্রিমুখী সংঘর্ষ হয়। ঘটনার পর নিরাপত্তাজনিত কারণে হাসপাতালের পুরো সেবা কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়া হয়।
চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের বহির্বিভাগে প্রতিদিন গড়ে ১২০০ থেকে ১৫০০ রোগী চিকিৎসা নিয়ে থাকেন। কিন্তু টানা চারদিন ধরে সেবা বন্ধ থাকায় এসব রোগীকে অন্য হাসপাতালে ছুটতে হচ্ছে।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, বর্তমানে হাসপাতালের অভ্যন্তরে ৫০ জন জুলাই যোদ্ধা ভর্তি আছেন। আত্মহত্যার চেষ্টা করা চারজনকে সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং একজনকে সিএমএইচে স্থানান্তর করা হয়েছে। এছাড়া প্রায় ১৫০ জন সাধারণ রোগী হাসপাতাল ছেড়ে গেছেন।
সেবা বন্ধের এই অচলাবস্থা কবে কাটবে-তা কেউ নিশ্চিত করে বলতে পারছেন না। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এবং প্রশাসন বারবার আলোচনায় বসলেও কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। চিকিৎসকরা নিরাপত্তা নিশ্চিত না হলে কাজে ফিরতে নারাজ। আর সাধারণ রোগীরা রয়ে গেছেন চরম ভোগান্তিতে।
বাংলাধারা/এসআর