ঢাকা, রবিবার, ১৫ জুন ২০২৫, ১ আষাঢ় ১৪৩২

শুঁটকি মাছে বিষাক্ত কীটনাশক: শিশুদের জন্য মারাত্মক ঝুঁকি, গবেষণায় ক্যানসারের শঙ্কা

নিউজ ডেস্ক

 প্রকাশিত: মে ১৪, ২০২৫, ০২:১০ দুপুর  

ছবি: সংগৃহিত

বাংলাদেশের জনপ্রিয় খাদ্যপণ্য শুঁটকি মাছের মধ্যে পাওয়া গেছে ক্যানসার সৃষ্টিকারী রাসায়নিক উপাদান। আজ বুধবার রাজধানীতে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে প্রকাশিত এক গবেষণা প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এই ভয়ংকর তথ্য।

বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের আয়োজনে অনুষ্ঠিত এই অনুষ্ঠানে জানানো হয়, দেশের চারটি অঞ্চল—চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, বাগেরহাট ও নাটোরের চলনবিল এলাকা থেকে সংগ্রহ করা ২৬০টি শুঁটকি নমুনার মধ্যে ১৩ শতাংশেই কীটনাশকের উপস্থিতি শনাক্ত হয়েছে। এসব রাসায়নিকের মধ্যে সবচেয়ে বেশি পাওয়া গেছে এন্ডোসালফান সালফেট, যা আন্তর্জাতিকভাবে ক্যানসার সৃষ্টিকারী উপাদান হিসেবে চিহ্নিত।

গবেষণাটি পরিচালনা করেছেন বাগেরহাটে অবস্থিত বাংলাদেশ চিংড়ি গবেষণা কেন্দ্রের সিনিয়র বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা আরিফুল ইসলাম। তিনি জানান, “আমরা যে পরিমাণ কীটনাশক পেয়েছি, তা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। বিশেষ করে শিশুদের শরীরের জন্য এই বিষাক্ত উপাদানগুলো মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকির কারণ হতে পারে।”

প্রতিবেদনে বলা হয়, শুঁটকি সংরক্ষণ ও প্রক্রিয়াকরণে ব্যবহৃত চার ধরনের কীটনাশকের মধ্যে সবচেয়ে বিপজ্জনক হচ্ছে এন্ডোসালফান সালফেট। এই উপাদানের পরিমাণ নির্ধারিত সীমার চেয়ে অনেক বেশি পাওয়া গেছে যা দীর্ঘমেয়াদে মানুষের শরীরে ক্যানসার, স্নায়বিক সমস্যা এবং হরমোনগত বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে পারে।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান আবদুস জাকারিয়া। তিনি বলেন, “শুঁটকি আমাদের ঐতিহ্যবাহী খাদ্য, কিন্তু এর নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এখন সময়ের দাবি। আমরা সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনা করে কঠোর নিয়ন্ত্রণের উদ্যোগ নেব।”

সভাপতিত্ব করেন নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের সদস্য মো. মোস্তফা। তিনি বলেন, “ভোক্তার খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হলে উৎপাদন থেকে বাজারজাতকরণ পর্যন্ত প্রতিটি ধাপে নজরদারি বাড়াতে হবে। প্রয়োজনে মাঠপর্যায়ে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানও জোরদার করা হবে।”

বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, শুঁটকিতে বিষাক্ত রাসায়নিকের ব্যবহার বন্ধে অবিলম্বে সচেতনতামূলক কার্যক্রম শুরু করা জরুরি। পাশাপাশি প্রান্তিক পর্যায়ের শুঁটকি উৎপাদনকারীদের প্রশিক্ষণ ও নিরাপদ সংরক্ষণ প্রক্রিয়ার ব্যবস্থা না করলে এই সংকট আরও প্রকট আকার ধারণ করতে পারে।

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভোক্তারা যাতে নিরাপদ খাবার পায়, সেজন্য সরকার, উৎপাদক এবং বিক্রেতা—সব পক্ষের সমন্বিত উদ্যোগ প্রয়োজন।

শুঁটকি মাছের মতো জনপ্রিয় খাদ্যপণ্যে ক্যানসারের মতো মরণব্যাধির ঝুঁকি থাকাটা আমাদের জন্য একটি বড় সতর্ক সংকেত। এই সংকটে এখনই উদ্যোগ না নিলে ভবিষ্যতে তার চড়া মূল্য দিতে হতে পারে পুরো জাতিকে।


বাংলাধারা/এসআর