ঢাকা, শনিবার, ১৪ জুন ২০২৫, ৩১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা: লিভ টু আপিলের শুনানি মঙ্গলবার

নিজস্ব প্রতিবেদক

 প্রকাশিত: মে ২৬, ২০২৫, ১১:৪৩ দুপুর  

ফাইল ছবি

২০০৪ সালের ২১ আগস্ট রাজধানীর গুলিস্তানে আওয়ামী লীগের সমাবেশে ভয়াবহ গ্রেনেড হামলার ঘটনায় রাষ্ট্রপক্ষের করা লিভ টু আপিলের শুনানির পরবর্তী দিন ঠিক করা হয়েছে মঙ্গলবার, ২৭ মে।

সোমবার (২৬ মে) প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান বেঞ্চে অনুপস্থিত থাকায় এদিন আপিল শুনানি শুরু হতে পারেনি। ফলে আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি এম ইমান আলী না থাকায় বিচারপতি মো. আশফাকুল ইসলামের নেতৃত্বাধীন পাঁচ সদস্যের বেঞ্চ মঙ্গলবার শুনানির জন্য নতুন তারিখ নির্ধারণ করেন।

গত বছরের ১ ডিসেম্বর বহুল আলোচিত এ মামলায় হাইকোর্ট থেকে আসে এক চমকপ্রদ রায়। এতে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ যাবজ্জীবন ও মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত সব আসামিকে খালাস দেন বিচারপতি এ কে এম আসাদুজ্জামান ও বিচারপতি সৈয়দ এনায়েত হোসেনের হাইকোর্ট বেঞ্চ।

এর আগে বিচারিক আদালত ২০১৮ সালের ১০ অক্টোবর রায় দিয়েছিল, যেখানে সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, সাবেক উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টুসহ ১৯ জনকে মৃত্যুদণ্ড এবং তারেক রহমানসহ আরও ১৯ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দণ্ডিত করা হয়। এছাড়াও আরও ১১ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ড দেওয়া হয়েছিল।

২০০৪ সালের ২১ আগস্ট। রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসবিরোধী সমাবেশ চলাকালে চালানো হয় নারকীয় গ্রেনেড হামলা। হামলায় নিহত হন দলের মহিলা বিষয়ক সম্পাদক আইভি রহমানসহ ২৪ জন। আহত হন শতাধিক নেতাকর্মী, যাদের অনেকেই আজও পঙ্গুত্ব নিয়ে বেঁচে আছেন। হামলার লক্ষ্য ছিলেন সে সময়কার বিরোধী দলীয় নেতা শেখ হাসিনা, যিনি অল্পের জন্য প্রাণে রক্ষা পান।

ঘটনার পর হত্যা ও বিস্ফোরকদ্রব্য আইনে দুটি মামলা দায়ের করে পুলিশ। পরে ২০০৮ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে সিআইডি তদন্ত শেষ করে অভিযোগপত্র দেয়।

২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে এই মামলার অধিকতর তদন্তের নির্দেশ দিলে তারেক রহমানসহ বিএনপির শীর্ষ নেতাদের নাম আসামির তালিকায় যুক্ত হয়।

ডেথ রেফারেন্স ও আপিল শুনানির প্রক্রিয়া শুরু হয় ২০২২ সালের ৫ ডিসেম্বর। বিচারপতি সহিদুল করিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের বেঞ্চে শুনানি চলতে থাকে। কিন্তু ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার ঐতিহাসিক আন্দোলনের পর উচ্চ আদালতের পুনর্গঠন হয়, যার ফলে নতুন করে বিচারপতি এ কে এম আসাদুজ্জামান ও বিচারপতি সৈয়দ এনায়েত হোসেনের বেঞ্চে শুনানি সম্পন্ন হয়।

হাইকোর্টের রায়ে সব আসামি খালাস পাওয়ার পর রাষ্ট্রপক্ষ উচ্চ আদালতে লিভ টু আপিল করে, যার শুনানি এবার শুরু হতে যাচ্ছে সর্বোচ্চ আদালতে।

২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলা শুধু একটি হত্যাকাণ্ডই নয়, বরং এটি বাংলাদেশের রাজনীতিতে এক ভয়াবহ এবং নৃশংস অধ্যায়। আওয়ামী লীগ একে 'রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় পরিচালিত সন্ত্রাসী হামলা' হিসেবে উল্লেখ করে থাকে, অন্যদিকে বিএনপি বরাবরই এই অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে।

হাইকোর্টের রায় নিয়ে সামাজিক ও রাজনৈতিক অঙ্গনে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। অনেকে এই রায়কে বিচার বিভাগের স্বাধীনতার ফল হিসেবে দেখলেও, অনেকে এটিকে রাজনৈতিক প্রভাবিত বলে মনে করেন।

২৭ মে থেকে শুরু হতে যাওয়া লিভ টু আপিলের শুনানি কেবল ২১ আগস্ট মামলার ভবিষ্যত নয়, বরং বাংলাদেশের সাম্প্রতিক বিচারব্যবস্থার গ্রহণযোগ্যতা ও নিরপেক্ষতা নিয়ে নতুন করে আলোচনার জন্ম দিতে পারে।

এখন সময় বলবে, এই ভয়াবহ ঘটনার আইনি চূড়ান্ততা কীভাবে লেখা হয়। তবে নিশ্চিতভাবে বলা যায়, ২১ আগস্ট হামলা মামলার এই অধ্যায় আরও একবার জাতির নজর কাড়বে—আইনি, রাজনৈতিক ও নৈতিক সব দিক থেকেই।


বাংলাধারা/এসআর