শেখ হাসিনাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে অভিযোগপত্র দাখিল
প্রকাশিত: জুন ০১, ২০২৫, ০২:০৪ দুপুর

ফাইল ছবি
ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আনুষ্ঠানিক অভিযোগপত্র দাখিল করেছে প্রসিকিউশন বিভাগ। রোববার দুপুর ১২টার দিকে ট্রাইব্যুনালের রেজিস্ট্রার দপ্তরে এ অভিযোগপত্র দাখিল করেন প্রসিকিউটর গাজী এম এস তামিম।
অভিযোগপত্রে শেখ হাসিনা ছাড়াও অভিযুক্ত হিসেবে রয়েছেন সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পলাতক আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন। বর্তমানে মামুন কারাগারে থাকলেও কামাল আত্মগোপনে রয়েছেন বলে জানানো হয়েছে।
গত জুলাই ও আগস্ট মাসে গণঅভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের প্রেক্ষিতে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে মোট পাঁচটি গুরুতর অভিযোগ আনা হয়েছে। এর মধ্যে শেখ হাসিনাকে 'মাস্টারমাইন্ড' এবং ‘সুপিরিয়র কমান্ডার’ হিসেবে অভিযুক্ত করা হয়েছে, যার নির্দেশেই রাষ্ট্রীয় বাহিনীগুলো নিরস্ত্র ও শান্তিপূর্ণ আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে সহিংস অভিযান চালায়।
প্রসিকিউশনের ভাষ্যমতে, শেখ হাসিনা সরাসরি রাষ্ট্রীয় বাহিনীকে হেলিকপ্টার, ড্রোন, এপিসি ও মারণাস্ত্র দিয়ে আক্রমণের নির্দেশ দেন। তার নির্দেশে গুলিতে বহু আন্দোলনকারী নিহত ও পঙ্গু হন। অভিযোগপত্রে উল্লেখ আছে, ৩, ৪ ও ৫ আগস্ট তারিখে এই সহিংসতার মাত্রা চরমে ওঠে।
মামলার তদন্তে উঠে এসেছে শেখ হাসিনার একাধিক ফোনালাপ, যেগুলোতে গুলি চালানোর নির্দেশনার প্রমাণ মেলে। এ ছাড়াও রয়েছে ড্রোন ও হেলিকপ্টার ব্যবহারের শিডিউল, উদ্ধারকৃত গুলির খোসা, ঘটনাস্থলের ভিডিও ফুটেজ এবং জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত সংবাদের কাটিং।
তদন্ত সংস্থা গত ১২ মে এসব প্রমাণসহ তদন্ত প্রতিবেদন ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটরের কাছে হস্তান্তর করে। এরপর আনুষ্ঠানিক অভিযোগপত্র দাখিল হলো।
প্রসিকিউশন জানিয়েছে, মামলায় সাক্ষী হিসেবে ডাক্তার, আইনজীবী, সাংবাদিক, চিকিৎসকসহ প্রায় ৩৫ থেকে ৪০ জনকে রাখা হয়েছে। যাঁরা সরাসরি আহত হয়েছেন, শহীদ পরিবারের সদস্য যাঁরা দাফনে ছিলেন, এমনকি চিকিৎসা প্রদানকারী চিকিৎসকরাও সাক্ষী হিসেবে আদালতে উপস্থিত হবেন।
অভিযোগপত্র অনুযায়ী পাঁচটি অভিযোগের সংক্ষিপ্ত বিবরণ এমন:
১. শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্দোলনের সময় ‘উস্কানি’ ও ‘প্ররোচনার’ মাধ্যমে মানবতাবিরোধী অপরাধে ভূমিকা রাখা।
২. সরাসরি গুলির আদেশ প্রদান।
* ৩-৫. নির্দিষ্ট তিনটি ঘটনায় সংঘটিত হত্যাকাণ্ড, গুম এবং গুরুতর শারীরিক ক্ষতির মতো অপরাধ, যেগুলোর প্রত্যক্ষ বাস্তবায়নে আইজিপি মামুন এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কামালের ভূমিকা ছিল।
প্রসিকিউশন সূত্রে জানা গেছে, আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গৃহীত হওয়ার পর ট্রাইব্যুনাল অভিযুক্তদের আদালতে হাজির হওয়ার নির্দেশ জারি করবেন। এ সংক্রান্ত শুনানি দ্রুতই নির্ধারিত হতে পারে।
গত ১৪ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে প্রথম অভিযোগ ট্রাইব্যুনালে জমা পড়ে। ওই অভিযোগের ভিত্তিতেই এই মামলা করে প্রসিকিউশন বিভাগ।
বাংরাধারা/এসআর