ঢাকা, রবিবার, ১৫ জুন ২০২৫, ৩১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

কালুরঘাট সেতুতে ট্রেন দুর্ঘটনা: নিহত ৩, বরখাস্ত ৪ রেলকর্মী, তদন্ত কমিটি গঠন

নিজস্ব প্রতিবেদক

 প্রকাশিত: জুন ০৬, ২০২৫, ০৯:১১ সকাল  

ছবি: সংগৃহিত

চট্টগ্রামের ঐতিহাসিক কালুরঘাট সেতুতে ভয়াবহ এক ট্রেন দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন তিনজন, যাদের মধ্যে রয়েছে দুই বছরের একটি শিশুও। কক্সবাজার থেকে ছেড়ে আসা চট্টগ্রামগামী পর্যটক এক্সপ্রেস ট্রেনের সঙ্গে বেশ কয়েকটি যানবাহনের সংঘর্ষে এই মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে। দুর্ঘটনার পরপরই রেলপথ মন্ত্রণালয় চার সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে এবং প্রাথমিকভাবে চার রেলকর্মীকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।

ঘটনাটি ঘটে বৃহস্পতিবার (৫ জুন) রাত সোয়া ১০টার দিকে, চট্টগ্রামের কালুরঘাট সেতুর বোয়ালখালী অংশে। প্রত্যক্ষদর্শীদের ভাষ্যমতে, সেতুর ওপর একটি গাড়ি যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে থেমে গেলে সৃষ্টি হয় যানজট। এ সময় ট্রেন চালকের দায়িত্ব ছিল লাইনম্যানের সংকেতের অপেক্ষায় থাকা। কিন্তু নিয়ম না মেনে সংকেত উপেক্ষা করে ট্রেনটি সেতুর দিকে এগিয়ে যায়, ফলে সেতুর ওপর আটকে থাকা অটোরিকশা, মাইক্রোবাস ও মোটরসাইকেলগুলো ট্রেনের ধাক্কায় দুমড়ে-মুচড়ে যায়।

এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় তিনজন নিহত হন। তাঁদের মধ্যে রয়েছে এক শিশুসহ কয়েকজন যাত্রী। নিহতদের পরিচয় ও আহতদের চিকিৎসাসংক্রান্ত বিস্তারিত এখনও প্রক্রিয়াধীন। দুর্ঘটনার তীব্রতায় সেতুর ওপর যানবাহনের ধ্বংসস্তূপ ছড়িয়ে পড়ে, সৃষ্টি হয় দীর্ঘ সময়ব্যাপী যোগাযোগ বিঘ্ন।

রেলপথ মন্ত্রণালয় ঘটনার পরই দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। শুক্রবার (৬ জুন) সকালে মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা (সিনিয়র তথ্য অফিসার) রেজাউল করিম সিদ্দিকী সাংবাদিকদের বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

প্রাথমিক তদন্তে দায়িত্বে অবহেলার প্রমাণ মেলায় সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে চার রেলকর্মীকে। তাঁরা হলেন- 

  • ট্রেনের গার্ড সোহেল রানা (হেড কোয়ার্টার, চট্টগ্রাম)
  • লোকোমাস্টার গোলাম রসুল (টি নম্বর-৫৩০)
  • সহকারী লোকোমাস্টার আমিন উল্লাহ (টি নম্বর-৭২৩)
  • অস্থায়ী গেটকিপার মাহবুব (টিএলআর)

এ ছাড়া, দুর্ঘটনার প্রকৃত কারণ অনুসন্ধানে চার সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির নেতৃত্বে রয়েছেন চট্টগ্রাম বিভাগের বিভাগীয় পরিবহন কর্মকর্তা (ডিটিও)। অন্যান্য সদস্যরা হলেন—

  • ডিএমই (লোকো)
  • ডিভিশনাল ইঞ্জিনিয়ার-১
  • বিভাগীয় চিকিৎসক (পাহাড়তলী, চট্টগ্রাম)

কমিটিকে আগামী তিন কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

এই দুর্ঘটনা আবারও দেশের রেল নিরাপত্তা ব্যবস্থার দুর্বল দিকগুলোর প্রতি ইঙ্গিত করে। সংকেত উপেক্ষা, সমন্বয়হীনতা এবং অবহেলার কারণে এমন দুর্ঘটনা শুধু প্রাণহানিই ঘটায় না, বরং জনগণের মধ্যে রেল ব্যবস্থার ওপর আস্থাও কমিয়ে দেয়।

কালুরঘাট সেতুর মতো গুরুত্বপূর্ণ ও ব্যস্ততম একটি স্থানে এমন দুর্ঘটনা গোটা রেল ব্যবস্থাপনাকে নাড়িয়ে দিয়েছে। তদন্ত কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে দোষীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের পাশাপাশি, সার্বিক নিরাপত্তা জোরদার ও সংকেত ব্যবস্থার আধুনিকায়নের দাবি তুলেছেন ভুক্তভোগী পরিবার ও সাধারণ মানুষ।


বাংলাধারা/এসআর