অবৈধ অর্থ ফেরত পাঠাতে যুক্তরাজ্যকে তিন সংস্থার আহ্বান
প্রকাশিত: জুন ১১, ২০২৫, ১২:২৯ রাত

ছবি: সংগৃহিত
অন্তর্বর্তী সরকারের সময় পাচারকৃত সম্পদ পুনরুদ্ধারে আন্তর্জাতিক উদ্যোগ জোরালো হচ্ছে
যুক্তরাজ্য সফরে থাকা বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের উপস্থিতিকে ঘিরে লন্ডনে পাচারকৃত অর্থ ফেরত পাঠানোর দাবিতে আন্তর্জাতিক চাপ বাড়ছে। মঙ্গলবার (১০ জুন) একটি যৌথ বিবৃতিতে যুক্তরাজ্য সরকারের প্রতি এই বিষয়ে জরুরি ও কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছে দুর্নীতিবিরোধী তিনটি প্রভাবশালী সংস্থা- ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি), স্পটলাইট অন করাপশন এবং ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল ইউকে।
বিবৃতিতে তারা যুক্তরাজ্যে বসবাসরত বাংলাদেশি 'অলিগার্ক' বা প্রভাবশালী ব্যক্তিদের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ এবং পাচার হওয়া অবৈধ অর্থ জব্দের জন্য যুক্তরাজ্যের আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর ভূমিকা জোরদার করার দাবি জানায়। এদের অনেকে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠ সহযোগী এবং তাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও সম্পদ পাচারের অভিযোগ রয়েছে বলে বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়।
এ প্রসঙ্গে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক উত্তরণ ও জবাবদিহিমূলক সুশাসনের এই বিরল সুযোগ বাস্তবায়নে যুক্তরাজ্যের সক্রিয় ভূমিকা প্রয়োজন। দুর্নীতির বিরুদ্ধে চলমান সংগ্রামে যুক্তরাজ্যে পাচার হওয়া সম্পদ ফেরত আনা একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।
স্পটলাইট অন করাপশনের নির্বাহী পরিচালক সুসান হাওলি বলেন, আর দেরি না করে যুক্তরাজ্য সরকারকে এখনই কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। শুধু বক্তব্য নয়, আইন প্রয়োগে দৃঢ়তা দেখাতে হবে।
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল ইউকে-এর পলিসি ডিরেক্টর ডানকান হেমস বলেন, যদি যুক্তরাজ্য সরকার সত্যিই অর্থপাচারের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে থাকে, তবে শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠদের মালিকানাধীন ৪০০ মিলিয়ন পাউন্ডের সম্পদের জবাবদিহি নিশ্চিত না করা হলে সেই যুদ্ধ কেবল কথার ফুলঝুরি হয়ে থাকবে।
ব্রিটিশ দৈনিক দ্য অবজারভার এবং ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল ইউকে-এর এক যৌথ অনুসন্ধান প্রতিবেদনে দাবি করা হয়, যুক্তরাজ্যে শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠদের মালিকানাধীন সম্পদের পরিমাণ কমপক্ষে ৪০০ মিলিয়ন পাউন্ড। এরই মধ্যে যুক্তরাজ্যের ন্যাশনাল ক্রাইম এজেন্সি (NCA) ৯০ মিলিয়ন পাউন্ড মূল্যের অবৈধ সম্পদ জব্দ করেছে বলে নিশ্চিত করেছে সংশ্লিষ্ট সূত্র।
বর্তমান সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ইউনূস ইতিমধ্যেই দুর্নীতি দমন এবং অবৈধ অর্থ ফেরত আনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তাঁর ভাষ্য অনুযায়ী, শেখ হাসিনার দীর্ঘ ১৫ বছরের শাসনামলে প্রতিবছর গড়ে ১১ বিলিয়ন পাউন্ড (প্রায় ১৬ বিলিয়ন ডলার) করে অর্থ পাচার হয়েছে।
বাংলাদেশ সরকারের গঠিত ‘শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিশনের’ তথ্য অনুসারে, ২০০৯ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে প্রায় ২৩৪ বিলিয়ন ডলার পাচার হয়েছে, যা দেশের অর্থনৈতিক কাঠামোর ওপর গভীর নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে।
বাংলাদেশে নিযুক্ত ব্রিটিশ হাইকমিশনার ইতোমধ্যে অন্তর্বর্তী সরকারকে শান্তি ও জবাবদিহিতা প্রতিষ্ঠায় পূর্ণ সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন। ব্রিটিশ পররাষ্ট্র সচিব আরও একধাপ এগিয়ে বলে দিয়েছেন, অর্থপাচারের স্বর্ণযুগ শেষ হয়েছে।
এই মন্তব্যে স্পষ্ট যে, যুক্তরাজ্য এখন অর্থপাচারবিরোধী লড়াইয়ে কঠোর অবস্থান নিতে প্রস্তুত এবং তা বাংলাদেশের মতো ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর জন্য আশাব্যঞ্জক বার্তা বয়ে আনছে।
বর্তমান সময়ে বাংলাদেশে স্বচ্ছতা, জবাবদিহি এবং দুর্নীতিবিরোধী অভিযানের নতুন অধ্যায় শুরু হয়েছে। এই প্রেক্ষাপটে যুক্তরাজ্যের মতো গুরুত্বপূর্ণ অংশীদারদের সহায়তা শুধু আর্থিক পুনরুদ্ধার নয়, বরং রাজনৈতিক ও সামাজিক স্থিতিশীলতার দিক থেকেও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। পাচারকৃত অর্থ ফিরিয়ে আনার এই যৌথ প্রচেষ্টা ভবিষ্যতের ন্যায়ভিত্তিক ও টেকসই বাংলাদেশ নির্মাণে সহায়ক ভূমিকা রাখতে পারে।
বাংলাধারা/এসআর