খেলাপি ঋণে নতুন রেকর্ড: ৪ লাখ ২০ হাজার কোটি টাকা ছাড়াল
প্রকাশিত: জুন ১৫, ২০২৫, ০৭:০১ বিকাল

ছবি: সংগৃহিত
বাংলাদেশের ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ আরও এক ধাপ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪ লাখ ২০ হাজার ৩৩৪ কোটি টাকায়। যা মোট বিতরণ করা ঋণের ২৪ দশমিক ১৩ শতাংশ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ হালনাগাদ তথ্য বলছে, ২০২৫ সালের মার্চ শেষে দেশে মোট বিতরণ করা ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৭ লাখ ৪১ হাজার ৯৯২ কোটি টাকা। এর মধ্যে প্রায় এক-চতুর্থাংশই এখন খেলাপি।
তিন মাস আগেও, অর্থাৎ ২০২৪ সালের ডিসেম্বর শেষে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ৩ লাখ ৪৫ হাজার ৭৬৫ কোটি টাকা। তখন মোট ঋণের অনুপাতে খেলাপি ঋণের হার ছিল ২০ দশমিক ২০ শতাংশ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর সম্প্রতি এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, "আমরা আর কোনো খেলাপি ঋণের তথ্য গোপন করব না। প্রকৃত চিত্র তুলে ধরা হচ্ছে। পরবর্তী ধাপে খেলাপি আদায়ে আইনি ও প্রশাসনিক ব্যবস্থা জোরদার করা হবে। একই সঙ্গে নতুন ঋণ যেন দ্রুত খেলাপিতে পরিণত না হয়, সে জন্য কঠোরতা বাড়ানো হচ্ছে।"
বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, দীর্ঘদিন ধরে গোপন রাখা ‘রিস্ট্রাকচার্ড’ ও ‘রিসিডিউলড’ ঋণের তথ্য এবার সরাসরি খেলাপি হিসাবেই ধরা হয়েছে। এর ফলে হঠাৎ করেই খেলাপির অঙ্কটা অতীতের যেকোনো সময়ের তুলনায় অনেক বেশি বেড়ে গেছে।
বিশ্লেষকদের মতে, আওয়ামী লীগ সরকারের সময় রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতায় গড়ে ওঠা কিছু প্রভাবশালী ব্যবসায়ী গোষ্ঠী হাজার হাজার কোটি টাকার ঋণ নিয়েছিল যেগুলোর সিংহভাগই ফিরিয়ে আনা যায়নি। এস আলম, বেক্সিমকোসহ অনেক বড় গ্রুপ বর্তমানে খেলাপির তালিকায়। তাদের মধ্যে কেউ এখন বিদেশে পলাতক, কেউ আবার দেশের ভেতরে হলেও মামলার সম্মুখীন।
২০২৪ সালের ৫ আগস্টের আগ পর্যন্ত ঋণ পরিশোধ না করেও নানা ফাঁকফোকর ব্যবহার করে ‘নন পারফর্মিং’ ঋণকে ‘রেগুলার’ দেখানোর সুযোগ ছিল। তবে বর্তমান সরকারের আমলে সেই সুযোগ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এখন অনেকেই খেলাপির তালিকায় যুক্ত হচ্ছেন।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত ডিসেম্বর থেকে মার্চ- মাত্র তিন মাসে বিতরণ করা ঋণের পরিমাণ ৩০ হাজার ৫৯০ কোটি টাকা বেড়েছে। কিন্তু এই ঋণের বিপরীতে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ৭৪ হাজার ৫৬৯ কোটি টাকা।
অর্থাৎ নতুন বিতরণকৃত ঋণের তুলনায় খেলাপি ঋণ বেড়েছে দ্বিগুণেরও বেশি। যা আর্থিক খাতে বিপজ্জনক সংকেত হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, ব্যাংকিং খাতে এমন অস্বাভাবিক হারে খেলাপি ঋণের বাড়তে থাকা দেশের বিনিয়োগ পরিবেশ ও আর্থিক শৃঙ্খলার জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়াবে। তাদের মতে, শুধু আইনি কড়াকড়ি নয়, রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ বন্ধ ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করলেই কেবল ব্যাংক খাতে স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনা সম্ভব।
বাংলাধারা/এসআর