শান্তির পথে পিছু হটছে যুক্তরাষ্ট্র
যুদ্ধ থামাতে মস্কো-কিয়েভকেই বসতে হবে মুখোমুখি
প্রকাশিত: মে ০৪, ২০২৫, ১২:৩৮ দুপুর

ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ থামাতে আর মধ্যস্থতার ভূমিকায় দেখা যাবে না যুক্তরাষ্ট্রকে। যুদ্ধবিরতির বিষয়ে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের অনমনীয় মনোভাবের কারণে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে ওয়াশিংটন। এবার শান্তির উদ্যোগে মুখোমুখি আলোচনায় বসার দায়িত্ব তুলে দেওয়া হয়েছে কিয়েভ ও মস্কোর হাতে।
বৃহস্পতিবার মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ট্যামি ব্রুস বলেন, "আমরা আমাদের সহযোগিতার কৌশলে পরিবর্তন আনছি। বিশ্বের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে ছুটে গিয়ে আলোচনায় অংশ নেওয়ার সময় এটা নয়। এখন যুদ্ধ থামাতে উভয় পক্ষকেই নির্দিষ্ট প্রস্তাব নিয়ে আলোচনায় বসতে হবে।"
এই ঘোষণার মধ্য দিয়ে যুক্তরাষ্ট্র কার্যত জানিয়ে দিল, তারা আর ‘শান্তির মধ্যস্থতাকারী’ নয়। সিদ্ধান্তটি এলো এমন এক সময়, যখন ইউক্রেন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে একটি বড় ধরনের খনিজ সম্পদ সংক্রান্ত চুক্তি সই হয়েছে। চুক্তির কয়েকদিন পরই যুক্তরাষ্ট্রের এই অবস্থান বদল নিয়ে চলছে নানা আলোচনা।
এদিকে, যুদ্ধ থামার আশায় যারা অপেক্ষায় ছিলেন, তাদের হতাশ করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স। ফক্স নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, "এ যুদ্ধ খুব শিগগির শেষ হচ্ছে না- এটাই বাস্তবতা। দুই পক্ষই জানে, শান্তি স্থাপনের জন্য কী কী শর্ত দরকার। এখন আলোচনা করে চুক্তিতে পৌঁছানোই একমাত্র উপায়।"
প্রসঙ্গত, সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসার আগেই ইউক্রেনকে যুদ্ধের জন্য দায়ী করে বেশ কয়েকবার কড়া ভাষায় সমালোচনা করেছিলেন। কিন্তু সম্প্রতি পুতিনের প্রতি তাঁর হতাশাও প্রকাশ পাচ্ছে। কয়েকটি সূত্র জানিয়েছে, ইউক্রেনে অস্ত্র সরবরাহে ট্রাম্প ইতোমধ্যে তাঁর প্রশাসনকে সবুজ সংকেত দিয়েছেন।
অন্যদিকে, মস্কো মুখে শান্তি আলোচনার আগ্রহ দেখালেও, বাস্তবে তা প্রতিফলিত হয়নি। গত সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্রের দেওয়া এক শান্তি প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে ক্রেমলিন। প্রস্তাবে রাশিয়ার দখলে থাকা ইউক্রেনীয় অঞ্চলগুলোর আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি না দেওয়ার প্রস্তাব ছিল, যা পুতিনের প্রশাসনের কাছে ‘অগ্রহণযোগ্য’ হিসেবে বিবেচিত হয়েছে।
বর্তমানে যুদ্ধ-পূর্ব ইউক্রেনের প্রায় ২০ শতাংশ ভূখণ্ড রুশ বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। এই বাস্তবতায়, শান্তি প্রতিষ্ঠা তখনই সম্ভব, যখন দুই পক্ষ বাস্তবসম্মত অবস্থানে এসে সরাসরি আলোচনায় বসবে- এমনটাই বারবার তুলে ধরছে যুক্তরাষ্ট্র।
বিশ্লেষকদের মতে, মধ্যস্থতার পথ থেকে যুক্তরাষ্ট্রের সরে দাঁড়ানো যুদ্ধের কূটনৈতিক সমাধানকে আরও কঠিন করে তুলবে। এখন দেখার বিষয়, কিয়েভ ও মস্কো মুখোমুখি আলোচনায় বসার মতো মানসিক প্রস্তুতি দেখায় কিনা।
বাংলাধারা/এসআর