বাড্ডায় সন্ত্রাসীদের গুলিতে বিএনপি নেতা নিহত: এলাকায় আতঙ্ক, তদন্তে নেমেছে পুলিশ
প্রকাশিত: মে ২৬, ২০২৫, ০১:৩১ রাত

ফাইল ছবি
রাজধানীর বাড্ডায় সংঘটিত এলোপাতাড়ি গুলির ঘটনায় নিহত হয়েছেন গুলশান থানা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কামরুল আহসান সাধন। শনিবার (২৫ মে) দিবাগত রাত সাড়ে ১১টার দিকে মধ্য বাড্ডার গুদারাঘাট এলাকায় সাবেক কমিশনার কাইয়ুমের বাড়ির সামনে ঘটে এই চাঞ্চল্যকর ঘটনা।
স্থানীয়রা জানান, রাতে হঠাৎ গুলির শব্দে পুরো এলাকা কেঁপে ওঠে। মুহূর্তেই আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে গুদারাঘাট এলাকায়। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, মোটরসাইকেলে করে আসা দুইজন অজ্ঞাতনামা সন্ত্রাসী সাধনকে লক্ষ্য করে পরপর গুলি ছুড়লে তিনি মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। আশঙ্কাজনক অবস্থায় স্থানীয় নেতাকর্মী ও স্বজনরা তাকে উদ্ধার করে রাজধানীর জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
নিহতের আত্মীয় ইসমাইল হোসেন, যিনি তার ভাগ্নি জামাই হিসেবে পরিচিত, জানান, “আমি চোখের সামনে দেখেছি- দুইজন শ্যুটার হেলমেট পরে এসেছিল। কোনো কথাবার্তা না বলেই গুলি ছুড়েছে।”
ঘটনার পরপরই গুলশান ও বাড্ডা থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে তদন্ত শুরু করে। ঘটনাস্থল থেকে কয়েকটি গুলির খোসা উদ্ধার করা হয়েছে। রাতেই পুলিশ আশপাশের সিসিটিভি ফুটেজ জব্দ করেছে বলে জানিয়েছে বাড্ডা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাইফুল ইসলাম। তিনি বলেন, “ঘটনাটি অত্যন্ত স্পর্শকাতর। আমরা ঘটনাস্থল ঘিরে রেখেছি এবং জড়িতদের শনাক্তে কাজ করছি।”
তিনি আরও জানান, এখনো পর্যন্ত এই হত্যাকাণ্ডের পেছনে কারা জড়িত বা কী উদ্দেশ্যে এ ঘটনা ঘটেছে তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তবে এটি পূর্বপরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড বলেই প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে।
কামরুল আহসান সাধন গুলশান থানা বিএনপির একজন সক্রিয় নেতা ছিলেন। দলের বিভিন্ন আন্দোলন-সংগ্রামে তিনি সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন বলে দাবি করেন তার রাজনৈতিক সহকর্মীরা। নিহতের ঘনিষ্ঠজনরা জানান, সম্প্রতি স্থানীয় রাজনীতিতে তিনি বেশ দৃশ্যমান ছিলেন এবং বিভিন্ন কর্মসূচিতে সক্রিয় অংশ নিচ্ছিলেন।
হত্যাকাণ্ডের পর স্থানীয় বিএনপি নেতাকর্মীদের অনেকে এটিকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে দাবি করেছেন। তারা বলছেন, কামরুল সাধনের রাজনৈতিক অবস্থান এবং সাম্প্রতিক কার্যক্রমই তাকে এই হত্যার টার্গেটে পরিণত করতে পারে। এ বিষয়ে দলের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক বক্তব্য এখনো আসেনি।
নিহতের বাসায় গিয়ে দেখা যায়, স্তব্ধ পরিবেশ। স্বজনদের কান্নায় ভারী হয়ে আছে চারপাশ। সাধনের স্ত্রী বারবার মূর্ছা যাচ্ছিলেন। পরিবারের সদস্যরা এখনো এই আকস্মিক ঘটনাকে মেনে নিতে পারছেন না।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, রাজধানীর বুকে এমন প্রকাশ্য গুলির ঘটনা শুধু আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিকেই প্রশ্নবিদ্ধ করে না, একইসাথে নাগরিক নিরাপত্তার ওপর বড়সড় চাপ তৈরি করে। দ্রুত সময়ের মধ্যে জড়িতদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনা না গেলে এ ধরনের ঘটনা আরও বেড়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন অনেকেই।
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, “আমরা ভিকটিমের রাজনৈতিক ও ব্যক্তিগত জীবন দুটো দিক থেকেই তদন্ত করছি। আশপাশের এলাকায় ও সোর্স নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে শিগগিরই শ্যুটারদের শনাক্ত করা সম্ভব হবে বলে আশা করছি।”
রাজধানীর মতো নিরাপত্তা-ঘেরা শহরে প্রকাশ্যে একজন রাজনীতিককে টার্গেট করে হত্যা নিঃসন্দেহে উদ্বেগজনক। এটি যদি রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড হয়, তবে তা দেশের গণতান্ত্রিক পরিবেশের জন্য এক অশনি সংকেত।
অপরাধীদের দ্রুত শনাক্ত করে বিচারের আওতায় আনা না গেলে শুধু নিহতের পরিবার নয়, পুরো রাজনৈতিক অঙ্গনেই ছড়িয়ে পড়বে আতঙ্ক ও অনিশ্চয়তা।
বাংলাধারা/এসআর