যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাব হত্যা-দুর্ভিক্ষ চালিয়ে যাওয়ার পথই প্রশস্ত করছে: হামাস
প্রকাশিত: মে ৩০, ২০২৫, ০১:৫৯ দুপুর

ছবি: সংগৃহিত
গাজায় যুদ্ধবিরতির নামে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যে নতুন প্রস্তাবনা দিয়েছে, সেটিকে ‘চলমান গণহত্যা ও দুর্ভিক্ষের ধারাবাহিকতা’ হিসেবেই দেখছে হামাস। ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী এই সংগঠনটি মনে করছে, প্রস্তাবটি বাস্তবসম্মত কোনো শান্তির নিশ্চয়তা দেয় না, বরং ইসরায়েলকে আরও সময় ও সুযোগ করে দিচ্ছে হামলা চালিয়ে যাওয়ার।
আল–জাজিরার এক প্রতিবেদনে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন ইসরায়েলের সঙ্গে সমন্বয় করে যে নতুন যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব এনেছে, তা এখনো ‘আলোচনার পর্যায়ে’ রয়েছে। তবে হামাসের বক্তব্য বলছে, এই প্রস্তাব গাজার নিরীহ জনগণের ওপর হত্যাযজ্ঞ বন্ধ করবে না, বরং পরিস্থিতি আরও খারাপের দিকে ঠেলে দেবে।
হামাসের রাজনৈতিক ব্যুরোর সদস্য বাসেম নাইম বলেন, “এই চুক্তি আমাদের জনগণের ন্যায্য কোনো দাবিই পূরণ করে না। যুদ্ধ বন্ধ, সেনা প্রত্যাহার ও মানবিক সহায়তার নিশ্চয়তা- প্রতিটি ক্ষেত্রেই এটি ব্যর্থ।”
তবে তিনি জানান, সংগঠনের নেতারা পূর্ণ জাতীয় দায়িত্ববোধ থেকেই প্রস্তাবটি যাচাই-বাছাই করছেন।
হোয়াইট হাউসের জনসংযোগ কর্মকর্তা ক্যারোলিন লেভিটের ভাষ্য অনুযায়ী, ইসরায়েল প্রস্তাবে স্বাক্ষর করেছে এবং ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক দূত স্টিভ উইটকফ তা হামাসের কাছে জমা দিয়েছেন। যদিও এই প্রস্তাবের পূর্ণ বিবরণ এখনো প্রকাশ হয়নি।
হামাসের জ্যেষ্ঠ নেতা সামি আবু জুহরি রয়টার্সকে বলেন, “এই প্রস্তাবে যুদ্ধ বন্ধের স্পষ্ট কোনো প্রতিশ্রুতি নেই। গাজা থেকে ইসরায়েলি সেনা প্রত্যাহারের কথাও উল্লেখ করা হয়নি। এমনকি মানবিক সহায়তা প্রবেশে কোনো নির্ভরযোগ্য নিশ্চয়তাও দেওয়া হয়নি।”
ইসরায়েল সরকারও আনুষ্ঠানিকভাবে এই প্রস্তাব অনুমোদনের কথা জানায়নি। তবে ইসরায়েলের সংবাদমাধ্যমগুলোর বরাতে জানা যায়, প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু গাজায় আটক জিম্মিদের স্বজনদের বলেছেন, তিনি প্রস্তাব মেনে নিতে প্রস্তুত।
ইসরায়েলি বিশ্লেষক আকিভা এলদার আল-জাজিরাকে বলেন, নেতানিয়াহুর এই ‘সহানুভূতিশীল’ অবস্থান আসলে একটি রাজনৈতিক চাল। তিনি বলেন, “নেতানিয়াহু জানেন, এই প্রস্তাব হামাস কখনোই গ্রহণ করতে পারবে না। আর এতে তিনি বিশ্ববাসীর সামনে হামাসকে ‘অশান্তির দায়ী’ হিসেবে তুলে ধরতে পারবেন।”
আকিভা আরও বলেন, “এমন ঘটনা অতীতেও ঘটেছে। ইসরায়েল নিজের ইচ্ছেমতো প্রস্তাব দিয়ে পরে দোষ চাপিয়েছে হামাসের ঘাড়ে।”
উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, চলতি সপ্তাহের শুরুতেই হামাস দাবি করেছিল, তারা স্টিভ উইটকফের সঙ্গে একটি ‘সাধারণ রূপরেখা’তে একমত হয়েছে। সেই রূপরেখায় ছিল স্থায়ী যুদ্ধবিরতি, ইসরায়েলি সেনা প্রত্যাহার, অবাধ মানবিক সহায়তা ও গাজার প্রশাসনের জন্য একটি পেশাদার কমিটি গঠনের কথা।
এমনকি তখন বলা হয়েছিল, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প নিজেই ৬০ দিনের মধ্যে যুদ্ধবিরতি কার্যকরের এবং সেনা প্রত্যাহারের নিশ্চয়তা দেবেন।
কিন্তু পরে উইটকফ এই শর্তগুলোকে ‘পুরোপুরি অগ্রহণযোগ্য’ বলে দাবি করেন। রয়টার্সকে তিনি বলেন, “হামাস যে বিষয়গুলো বলছে, তা আমাদের প্রস্তাবে নেই।”
গাজায় যুদ্ধবিরতি প্রতিষ্ঠার প্রতিটি প্রচেষ্টাই এখন পর্যন্ত ব্যর্থ হয়েছে। মূল কারণ, দুই পক্ষের চরম মতানৈক্য। ইসরায়েলের দাবি, হামাসকে অস্ত্রহীন হতে হবে। অন্যদিকে হামাস বলছে, ইসরায়েলি সেনাদের সম্পূর্ণভাবে গাজা ছাড়তেই হবে।
এই বাস্তবতায় যুদ্ধবিরতির নামে আনা প্রস্তাবগুলো যখন মানবিক সংকট নিরসনের বাস্তব পদক্ষেপ দিতে ব্যর্থ হয়, তখন সেগুলো ফিলিস্তিনিদের কাছে হয়ে ওঠে আরেকটি কূটনৈতিক প্রতারণা।
বাংলাধারা/এসআর