ঢাকা, সোমবার, ১৬ জুন ২০২৫, ২ আষাঢ় ১৪৩২

চাকরিতে ফিরতে না পারলে রাজপথ ছাড়বেন না ইআরপিপি স্বাস্থ্যকর্মীরা

নিজস্ব প্রতিবেদক

 প্রকাশিত: জুন ১৬, ২০২৫, ০২:৪৮ দুপুর  

ছবি: বাংলাধারা

করোনাভাইরাস মহামারির ভয়াবহ সময়ে যারা জীবন ঝুঁকিতে ফেলে দেশের স্বাস্থ্যব্যবস্থাকে টিকিয়ে রেখেছিলেন, সেই ইআরপিপি প্রকল্পভুক্ত স্বাস্থ্যকর্মীরা আজ নিজ অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়ে রাজপথে। গত পাঁচ মাস ধরে বেতন না পাওয়া, বয়সসীমা পেরিয়ে যাওয়ায় নতুন চাকরির অযোগ্যতা এবং চাকরি থেকে ছাঁটাইয়ের মতো চরম বাস্তবতায় দাঁড়িয়ে তারা এখন দাবি তুলেছেন- চাকরি স্থায়ীকরণ ও বকেয়া পরিশোধের।

সোমবার (১৬ জুন) সকাল ১১টা থেকে রাজধানীর মহাখালীতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের প্রধান ফটকে অবস্থান কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছেন কোভিড-১৯ ইমার্জেন্সি রেসপন্স অ্যান্ড প্যানডেমিক প্রিপেয়ারডনেস (ইআরপিপি) প্রকল্পের অধীনে আউটসোর্সিং ভিত্তিতে নিয়োজিত এসব স্বাস্থ্যকর্মীরা। আজ ছিল তাদের আন্দোলনের তৃতীয় দিন।

নিপসমে কর্মরত মেডিকেল টেকনোলজিস্ট আবু সুফিয়ান বলেন, প্রায় পাঁচ বছর কাজ করেছি এই প্রকল্পে। এখন বয়স ৩৫ পেরিয়েছে, সরকারি চাকরির আবেদনের সুযোগ নেই। অথচ যাদের কোনো অভিজ্ঞতা নেই, তাদের নিয়োগের প্রস্তুতি চলছে। এটা শুধু অবিচার নয়, আমাদের আত্মমর্যাদায় সরাসরি আঘাত।

আন্দোলনকারীরা জানান, করোনা মহামারির সময় সরকার গঠিত এই প্রকল্পের অধীনে তারা আরটি-পিসিআর ল্যাব, আইসিইউ, আইসোলেশন সেন্টারসহ ফ্রন্টলাইনে কাজ করেছেন। কিন্তু প্রকল্প "শেষ" হওয়ার অজুহাতে তাদের চাকরি থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। অথচ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ঘোষণামতে প্রকল্পটি ২০২৫ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত চালু থাকার কথা।

ডাটা অপারেটর আব্দুর রহমান বলেন, করোনার সময় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের আহ্বানে কাজ করেছি, অথচ আজ সেই অধিদপ্তরের সিঁড়িতেই বসে থাকতে হচ্ছে। ঘরে ছোট বাচ্চা, স্কুলের বেতন দিতে পারিনি। পরিবার চালাতে গিয়ে দিশেহারা।

আন্দোলনকারীরা বলছেন, তারা কেবল চাকরি ফিরে পেতে নয়, মর্যাদা ফিরে পেতেও আন্দোলনে নেমেছেন। তাদের তিন দফা মূল দাবি:

  • চাকরি স্থায়ী করে রাজস্ব খাতে অন্তর্ভুক্তি
  • চার-পাঁচ মাসের বকেয়া ভাতা পরিশোধ
  • প্রকল্পের মেয়াদ থাকা অবস্থায় চাকরিচ্যুতির বৈধতা পুনর্বিবেচনা

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের প্রধান ফটকের সামনে স্লোগান-সংবলিত প্ল্যাকার্ড হাতে দাঁড়িয়ে থাকা এসব স্বাস্থ্যকর্মীদের কণ্ঠে ছিল আক্ষেপ, কিন্তু সেই আক্ষেপে ছিল অদম্য দৃঢ়তা। আন্দোলনকারীদের একজন বলেন, ভয়ঙ্কর সেই সময়টায় যদি পেছনে না তাকিয়ে কাজ করতে পারি, আজ যখন অবস্থা কিছুটা স্বাভাবিক, তখন আমরা কেন উপেক্ষিত হবো?

আন্দোলনরতরা অভিযোগ করেন, তাদের বাদ দিয়ে এখন নতুন নিয়োগের পাঁয়তারা চলছে। অথচ তারা শুরু থেকেই প্রশিক্ষিত এবং অভিজ্ঞ। এই অবস্থাকে ‘অবিচারকে পুরস্কৃত করা’ বলেই মনে করছেন তারা।

এখনো পর্যন্ত স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক কোনো আলোচনা হয়নি। আন্দোলনকারীরা জানিয়েছেন, দাবি না মানা পর্যন্ত তারা অবস্থান কর্মসূচি চালিয়ে যাবেন, প্রয়োজনে যাবেন কঠোর কর্মসূচিতে।

একজন আন্দোলনকারী চিকিৎসাকর্মী বলেন, আমরা জানি এই আন্দোলন সহজ হবে না। কিন্তু পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেলে মানুষ আর কিছু হারানোর ভয় পায় না। যতক্ষণ না চাকরিতে ফিরছি, ততক্ষণ রাজপথ ছাড়বো না।

দেশের স্বাস্থ্যখাতের এই নীরব যোদ্ধাদের বাস্তবতা আমাদের সামনে তুলে ধরছে এক গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন-সংকটকালে যারা বুক পেতে দেয়, স্থিতিশীল সময়ে তারা কি অবজ্ঞার পাত্র হয়ে যাবে?

 

বাংলাধারা/এসআর