যে কারণ বাঁচিয়ে রাখবে মাহবুবুল হককে
প্রকাশিত: জুলাই ২৮, ২০২৪, ০৩:০১ দুপুর
ছবি: সংগৃহীত
'চলন্তিকা', 'ব্যবহারিক বাংলা ভাষার অভিধান', 'সমকালীন বাংলা ভাষার অভিধান', 'ইংলিশ টু বাংলা অভিধান', বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস' বইয়ের মতো এই 'বাংলা বানানের নিয়ম' ভাষাবিদ মাহবুবুল হকের অবশ্য প্রয়োজনীয় একটা বই। আমাদের কাছে অভিধান গ্রন্থের মতো মর্যাদা পেয়েছিল প্রায়। হয়ে উঠেছিল বিষয় ও প্রয়োজনের নিরিখে সার্বক্ষণিক সঙ্গী হওয়া বইগুলোর অন্যতম।
এসব কারণে, কেন জানি মনে হয়েছিল, এই লেখকও বুঝি অনেক বয়োজ্যেষ্ঠ। কিন্তু না, তিনি মোটেই বয়োজ্যেষ্ঠ কেউ ছিলেন না, অন্তত সেই সময়ের নিরিখে। বরং, তরুণ বয়সেই তিনি বানানের গুরুত্ব অনুভব করে লিখেছিলেন ওরকম প্রয়োজনীয় একটা বই। বানান সংক্রান্ত বইয়ের লেখক হিসেবে তিনি পালন করেছিলেন পথিকৃতের ভূমিকা। বানানেরও যে একটা শৃঙ্খলা আছে, আছে তার দীর্ঘ অতীত, বংশ ধারা, উৎপত্তি ও বিবর্তনের পরম্পরা; সেসবের প্রথম ধারণা পেয়েছিলাম আমরা উনার বই পড়ে।
মাহবুবুল হকের সঙ্গে ব্যক্তিগত সখ্য গড়ে ওঠার সুযোগ হয়েছিল, পেশাগত কারণে। তখনই আবিস্কার করি, অজাতশত্রু বলতে যাদেরকে বোঝানো হয়, তিনি ছিলেন তাদের প্রতিনিধিস্থানীয়, অন্যতম প্রতিভূজন। কারও সম্পর্কে কোনদিন ভুলক্রমেও উচ্চারণ করেননি কোন কটূকথা, চয়ন করেননি অশ্রাব্য কোন শব্দ। ছিলেন মৃদুভাষী, মিশুক ও বন্ধুবৎসল এক সজ্জন মানুষ। প্যাঁচগোছের বালাই ছিল না যাপিত জীবনের সর্বাবস্থায়। 'বাংলা বানানের নিয়ম' লেখা মানুষটি নিরবে-নিভৃতে ব্যক্তির জীবনাচারণের নিয়মও লিখে গেছেন ব্যক্তির রোজনামচায়।
সংসার সমরাঙ্গনে তিনি ছিলেন অহিংসবাদের ধারক ও বাহক। শেক্সপীয়র বলেছিলেন 'পৃথিবী একটা রঙ্গমঞ্চ, এখানে সবসময় দুই বা তারও অধিক পক্ষ দ্বারা অভিনয় চলতে থাকে।' মাহবুবুল হকও নিশ্চয় জানতেন অমেয় এই উবাচ। এই বাস্তবতাকে মেনে নিয়েও তিনি যাপন করে গেছেন আদর্শস্থানীয় এক জীবন। সমস্ত কোলাহলকে পাশ কাটিয়ে মত্ত থেকেছেন সৃষ্টির সাধনায়। লিখেছেন চল্লিশেরও অধিক বই।
'বাংলা বানানের নিয়ম' বইকে আমরা একদা জ্ঞান করতাম অভিধানতুল্য, অবশ্য সেটা প্রয়োজনের নিরিখেই। ভাষাবিদ মাহবুবুল হক পরবর্তীতে একাধিক অভিধান বই রচনা করে আমাদের সেই জ্ঞানকে কেবল সমীহও করেননি, মর্যাদাও দিয়েছেন। এই লেখায় আমরা আলোচনা কেন্দ্রীভূত রাখতে চাই উনার গবেষণালব্ধ গ্রন্থ 'নজরুল তারিখ অভিধান' নিয়ে।
মাহবুবুল হকের 'নজরুল তারিখ অভিধান' কাজী নজরুল ইসলামের জীবন ও কর্ম নিয়ে লেখা একটা গবেষণা গ্রন্থ। বইটি নানা কারণে গুরুত্ববহ। নজরুল আমাদের জাতীয় কবি। উনার লেখা কবিতা, গান, গল্প, উপন্যাস, প্রবন্ধ, অভিভাষণ, নাটক জাতীয় জীবনের নানা ক্ষেত্রে বিশেষভাবে চর্চিত। আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধের দিনগুলোতে কবির কবিতা ও গান যুগিয়েছে বিশেষ অনুপ্রেরণা ও লড়াই-সংগ্রামে একাত্ম হওয়ার বীজমন্ত্র।
ন্যায়সঙ্গত যে কোন আন্দোলনে নজরুলের সৃজনশীল কাব্য ও কথাসাহিত্য এবং মননশীল গদ্য বাতিঘরের ভূমিকায় পথ দেখায়, আলোর উৎস হয়। মানুষের মুক্তি ও অধিকার আদায়ে কবি সর্বদায় যোগান শক্তি ও সাহস। এ কারণে প্রয়োজন বেশি বেশি নজরুল চর্চার, যার কোন বিকল্প নেই বাংলা ও বাঙালির আসমানদারিতে। সমাজ-রাষ্ট্রে যত বেশি কবির জীবন ও কর্ম নিয়ে চর্চা হবে মানুষ ততবেশি আত্মসচেতন হয়ে উঠবে। কিন্তু কবি ছিলেন ভীষণ রকমের বাউন্ডুলে। যে কথা কবি লেখালেখির প্রথম প্রভাতে নিজেই উল্লেখ করেছেন প্রতীকিভাবে, গল্পের আশ্রয়ে।
মাহবুবুল হক 'নজরুল তারিখ অভিধান' বইয়ে উল্লেখ করেছেন, ''মে ১৯১৯ : করাচি সেনানিবাসে লেখা নজরুলের গল্প 'বাউলেন্ডলের আত্মকাহিনী' সওগাত পত্রিকার জ্যৈষ্ঠ ১৩২৬ সংখ্যায় প্রকাশিত হয়। এটিই নজরুলের প্রথম প্রকাশিত গল্প। গল্পটি পরে 'রিক্তের বেদন' গল্পগ্রন্থে সংকলিত হয়েছে। এভাবে গল্প রচনার মাধ্যমে বাংলা সাহেত্যে লেখক রূপে নজরুলের সকুণ্ঠ আত্মপ্রকাশ ঘটে।''
নজরুলের মতো প্রতিভাবান ও একইসঙ্গে বাউন্ডুলে একজন কবির জীবন ও কর্মকে সবিস্তারে জানতে হলে 'নজরুল তারিখ অভিধান' এর মতো বই অবশ্য পাঠ্য। মাহবুবুল হক এরকম শ্রমসাধ্য একটা গবেষণা দিয়ে জাতির বৃহত্তর আকাঙ্ক্ষা ও প্রয়োজনকে মর্যাদা দিয়েছে বলে আমরা মনে করি। নজরুলকে নিয়ে সবচেয়ে প্রয়োজনীয় কাজটি করেছেন আবদুল কাদির।
নজরুল রচনাবলী সম্পাদনা করে তিনি কবির দুর্লভ রচনাসমূহকে একত্রিত করার পাশাপাশি দূর করেছেন কালের গ্রাসে হারিয়ে যাওয়ার শঙ্কা ও সংশয়। নজরুল রচনাবলী সংগৃহীত অবস্থায় পাওয়ার কারণেই সম্ভব হয়েছে উনার জীবন ও কর্ম নিয়ে গবেষণার দ্বারোদ্বাঘাটন। গবেষকদের পক্ষে আলো ফেলা সম্ভব হয়েছে নজরুল প্রতিভায়। প্রতিনিয়ত নতুন নতুন গবেষণায় উন্মোচিত হয়েছে কবির জীবন, কর্ম ও সময়ের অজানা ও বিভ্রান্তির ঘেরাটোপে বন্দী অধ্যায়সমূহ।
আবদুল কাদির রচনাবলী যেমন নজরুল প্রতিভা অনুসন্ধান, মূল্যায়ন ও বিশ্লেষণের সুযোগ করে দিয়েছে গবেষকদের সমুখে। ঠিক তেমনি 'নজরুল তারিখ অভিধান' গবেষক ছাড়াও নজরুলপ্রেমী ও আম মানুষকে দিয়েছে কবিকে সংক্ষেপে, সহজে ও তাৎক্ষণিকভাবে জানা ও বোঝার অপার সুযোগ।
অভিধানের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা কারোরই অজানা নয়। অভিধান অন্যান্য বইয়ের তুলনায় সাধারণত একটু ঢাউস আকৃতির হয়। অবশ্য ছোট অভিধানেরও দেখা মেলে, তবে সেটা বিশেষ সংস্করণের। অভিধান যা ধারণ করে তার তুলনায় তাকে ছোটই বলতে হয়, অনেকটা বিন্দুতে সিন্ধু ধারনের মত। 'নজরুল তারিখ অভিধান'ও নজরুল চর্চায় ধারণ করেছে ঠিক একই সামর্থ্য ও সক্ষমতা।
কাজল, আমি সারারাত জেগে উচ্চারণ অভিধানের কাজ করি। তার পর 'আচ্ছালাতু খাইরুম মিনান নাউম' শব্দ শুনে সবাই যখন জেগে উঠে আমি তখন দুই ঘণ্টার জন্য ঘুমাতে যাই।
নজরুলকে নিয়ে গবেষণা ও চর্চা অপ্রতুল নয় মোটেই। এ সম্পর্কিত প্রতিষ্ঠানও রয়েছে সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে। নজরুলের নামে রয়েছে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ও। এদেশের মতো নজরুলের জন্মভূমি পশ্চিমবঙ্গে নজরুল চর্চার বিস্তার এতোটা না হলেও, তাকে হ্রস্ব বলার সুযোগ নেই। এই বাস্তবতায় নজরুলকে নিয়ে এরকম একটা গবেষণা সবার জন্যই আশাবাদের এবং চর্চা জারি রাখার ক্ষেত্রে বিশেষ সহযোগের। মাহবুবুল হক বিষয়ের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা অনুধাবনপূর্বক বাস্তবে রূপদান করে সকলের যে প্রশংসাভাজন হয়েছেন, তা বলা বাহুল্য।
মাহবুবুল হকের দৃষ্টি ও গুণের তারিফ না করলে অন্যায় হবে। আমরা জানি, অভিধান গ্রন্থ রচনা করার মতো দুরুহ, পরিশ্রমসাধ্য গবেষণা, জ্ঞানকাণ্ডের জগতে আর দ্বিতীয়টা নেই। যে কোন অভিধানের পেছনে থাকে একজীবনের সাধনা । 'বঙ্গীয় শব্দকোষ' রচনায় হরিচরণ বন্দ্যোপাধ্যায় যেমনটা করেছিলেন। 'বাঙলা উচ্চারণ অভিধান' রচনায় নরেন বিশ্বাস জারি রেখে গেছেন যে উদাহরণ।
এই লেখককে আলাপ প্রসঙ্গে নরেন বিশ্বাস একবার বলেছিলেন : ''কাজল, আমি সারারাত জেগে উচ্চারণ অভিধানের কাজ করি। তার পর 'আচ্ছালাতু খাইরুম মিনান নাউম' শব্দ শুনে সবাই যখন জেগে উঠে আমি তখন দুই ঘণ্টার জন্য ঘুমাতে যাই। কারণ আটটায় আবার বিশ্ববিদ্যালয়ে যেতে হবে।' উনার এই ত্যাগের বিনিময়ে আমরা পেয়েছি 'বাঙলা উচ্চারণ অভিধান'। আর এই বই রচনা করতে গিয়ে উনি হারিয়েছেন দৃষ্টিশক্তি এবং মৃত্যুর দূত দ্রুত কড়া নেড়েছে দরোজায়।
একজন হরিচরণ বন্দ্যোপাধ্যায়, একজন নরেন বিশ্বাস জানেন একটা অভিধান রচিত হয়ে কতোটা শ্রমে-ঘামে আর নিদ্রাহীন রাতের বদৌলতে। নিদারুণ এই সত্য মাহবুবুল হকও জানতেন। তারপরও তিনি লিখেছেন দুই কুড়ি বই। প্রণয়ন করেছেন 'বাংলা বানানের নিয়মসহ আরও তিনটি অভিধান গ্রন্থ'। এক. নজরুল তারিখ অভিধান, দুই. খটকা বানান অভিধান ও তিন. শেখ মুজিব তারিখ অভিধান। কোন কোন মানুষ থাকেন যারা একাই কাঁধে নেন সম্মিলিত মানুষের দায়। মাহবুবুল হক তেমনই একজন। নিরবে নিভৃতে যিনি পালন করে গেছেন, জাতির বৃহত্তর কল্যাণে প্রয়োজনীয় কার্যাবলী সম্পন্ন করার দায়, দায়িত্ব ও কর্তব্যবোধ।
কাজী নজরুল ইসলাম জন্মগ্রহণ করেছিলেন খ্রিস্টাব্দ ১৮৯৯-এ। মারা যান ১৯৭৬-এ। এই উপমহাদেশের সবচেয়ে জটিল ও কূটিল সময়ের ভেতর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে উনার জীবনধারা। ১৯৪২-র শেষাশেষি কঠিন ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়ে বাকরহিত হন। তারপরও উনার সৃজনসম্পদ ছিল ইতিহাসের বাঁকবদলের বিশেষ পাথেয়। বাকস্তব্ধ অবস্থাতেও ইতিহাস উনাকে ছেড়ে যাননি। এক জীবনে কত তরঙ্গের অভিঘাত এসে পড়তে পারে তা জানতে ও বুঝতে হলে নজরুলের জীবন ও কর্মকে বুঝতে হবে বিশেষেভাবে। এক্ষেত্রে আমাদের জন্য বিশেষভাবে সহায়ক বই হল 'নজরুল তারিখ অভিধান'। যারা গবেষণা করতে চান তাদের কথা স্বতন্ত্র। কিন্তু এই বর্গের বাইরের সকলের জন্য এই বই পাঠের বিকল্প নেই।
২৪ জুলাই দিবাগত রাত্রে মাহবুবুল হক শেষ করেছেন ইহজাগতিক অধ্যায়। জন্মেছিলেন ১৯৪৮ খ্রিস্টাব্দে। পেশাগতভাবে অধ্যাপনার পাশাপাশি নিবেদিত ছিলেন লেখালেখি ও গবেষণায়।' নজরুল তারিখ অভিধান' সবদিক দিয়ে সুচারুভাবে সম্পাদিত একটি বই। তারপরও এই বই যখন আমরা নিবিড়ভাবে পাঠ করি, তখন প্রত্যাশা জাগে আরও, হাজির হয় কিছু প্রশ্ন, কিছু ত্রুটিও চোখ এড়ায় না। এসবই যে, উনার কীর্তির কাছে বুদবুদ বিশেষ তা স্বীকার করতেও দ্বিধা নেই। তারপরও সেসব বলা ভাল, আগামির কোন গবেষক যদি এব্যাপারে দৃষ্টি রাখে সেই প্রত্যাশায়।
মাহবুবুল হক,'নজরুল তারিখ অভিধান'-এ সংক্ষেপে উনার জীবন ও কর্মের সকল দিক ধরার চেষ্টা করেছেন দিন-তারিখের নিক্তিতে। সবই জারি আছে সংক্ষেপে, সহজে ও তাৎক্ষণিকতার ভিত্তিতে। অভিধানের ক্ষেত্রে এমনটাই হয়, যা স্বাভাবিক ও সঙ্গতও বটে। তথ্য-উপাত্ত যে সব বই থেকে নেওয়া হয়েছে, সেসব উল্লেখ করা যেত কি? সহায়ক তথ্যপঞ্জি, ও বই-পত্রের নাম অবশ্য দেওয়া হয়েছে। আমাদের প্রত্যাশা ঠিক এই জায়গায় নয়। একেবারে সন তারিখের ওখানে, বিস্তারিত জানার জন্য কোন বই কি উল্লেখ করা যেত না? কোন কোন অভিধানে তো এরকম উল্লেখ থাকে, বিস্তারিত দেখুন অমুক বইয়ে।
তথ্যগত দুই একটি ত্রুটিও দৃষ্টি এড়ায়নি আমাদের। যেমন: এক. ১৯২৪ সালের জানুয়ারি মাসে মাঝামাঝিতে কারামুক্তি ঘটে নজরুলের, যা এই বইয়ে উল্লেখ নেই। ১৯২৪-র ৯ জানুয়ারির পর ৭ ফেব্রুয়ারির কথা উল্লেখিত হয়েছে।
মাহবুবুল হক সম্ভবত বেশি গভীরে যাওয়ার চেষ্টা করেননি, তাৎক্ষণিকতাকে দিয়েছেন প্রাধান্য ও গুরুত্ব। তার চেয়ে বেশিকিছু যারা চান তারা তালাশ করে নেবেন প্রয়োজনীয় বইপত্র। তিনি একজন গবেষক হিসেবে উৎসুক্য জাগাতে চেয়েছেন। অনুশীলনের সুযোগ ও সূচনার ক্ষেত্র তৈরি করে দিয়েছেন। আমরা মনে করি, লেখকের এই কৌশল যুৎসই ও যথার্থ।
দুই. ১৯২৩ সালের ১৪ এপ্রিল নজরুলকে বহরমপুরে জেলে পাঠাবার নাম করে সাধারণ কয়েদি হিসেবে হুগলি জেলায় পাঠানো হয়। এ্ই প্রসঙ্গে কিছুই লেখা হয়নি এই বইয়ে। ১৯২৩ সালের এপ্রিল মাসে উল্লেখ করে লেখা হয়েছে, 'দীওয়ান-ই-হাফিজ-এর ৮ সংখ্যক গজল ('যদিই কান্তা শিরাজ সজনী') ১৩৩০ বৈশাখের বঙ্গীয় মুসলমান সাহিত্য পত্রিকায় প্রকাশিত হয়।
ঋত্বিক মল্লিকের লেখা 'নজরুলের ধূমকেতু সম্পাদকীয় বিষয়সূচী ও অন্যান্য' বইয়ের আলোকে আমরা তালাশ করেছি এরকম আরও কয়েকটি অংসগতি, তথ্যের অপূর্ণতা। মাহবুবুল হক সম্ভবত বেশি গভীরে যাওয়ার চেষ্টা করেননি, তাৎক্ষণিকতাকে দিয়েছেন প্রাধান্য ও গুরুত্ব। তার চেয়ে বেশিকিছু যারা চান তারা তালাশ করে নেবেন প্রয়োজনীয় বইপত্র। তিনি একজন গবেষক হিসেবে উৎসুক্য জাগাতে চেয়েছেন। অনুশীলনের সুযোগ ও সূচনার ক্ষেত্র তৈরি করে দিয়েছেন। আমরা মনে করি, লেখকের এই কৌশল যুৎসই ও যথার্থ।
দেশে তারিখ অভিধান রচনার মতো পরিশ্রমসাধ্য কাজ করার নজির একেবারেই অপ্রতুল। এখনও মূলধরায় আদৃত নয় এ ধরণের গবেষণা। বিদ্যায়তনিক পরিসরে স্বীকৃতিও পায়নি তেমনভাবে । এ ধরণের বইপত্রের অনুপস্থিতিই সাক্ষ্য দেয় এর বাস্তবতা ও হাল হকিকত। মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান এক্ষেত্রে রেখে গেছেন উল্লেখযোগ্য অবদান। বেদনার হল উনার নির্মিত ধারাকে শক্তিশালী করার ক্ষেত্রে দৃশ্যমান উদ্যোগ নেওয়া হয়নি কোন তরফেই ।
মাহবুবুল হক সেই প্রচেষ্টায় সলতে জ্বালানোর চেষ্টা চালিয়েছেন একান্তই ব্যক্তিগত দায়, দায়িত্ব ও কর্তব্যবোধ থেকে। উনার মৃত্যুর মধ্যে দিয়ে সেই সলতে কি নিভে যাবে, সেই প্রশ্ন হাজির হয়েছে, শ্রদ্ধাঞ্জলি লেখার এই পরিসরেও। মনে করি, এ জাতির আপন প্রয়োজনেই যেমন কখনওই ভুলে যাওয়া সম্ভব নয় কাজী নজরুল ইসলামকে, তেমনি ভুলে যাওয়া সম্ভব নয় নজরুল রচনাবলীর প্রথম সম্পাদক আবদুল কাদিরকে, ভুলে যাওয়া যাবে না 'নজরুল তারিখ অভিধান' প্রণয়ক মাহবুবুল হককে।