গুলশানে বিএনপির গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক
জাতীয় রাজনীতির অনিশ্চয়তায় করণীয় ঠিক করতে বসছে স্থায়ী কমিটি
প্রকাশিত: মে ২৬, ২০২৫, ০৮:০১ রাত

ফাইল ছবি
রাজনৈতিক অস্থিরতা, সীমান্ত পরিস্থিতি এবং অন্তর্বর্তী সরকারের ভূমিকাকে ঘিরে জনমনে তৈরি হওয়া প্রশ্ন- এসব কিছুর মধ্যেই আজ সোমবার রাতে গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে বসছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটি। রাত সাড়ে আটটায় গুলশানে চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে অনুষ্ঠিতব্য এ বৈঠকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে সভাপতিত্ব করবেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল করিম খান গণমাধ্যমকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম হিসেবে এই বৈঠকটি শুধু রুটিন সভা নয়, বরং চলমান জটিল ও উত্তপ্ত রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে এটি একটি কৌশল নির্ধারণী সমাবেশে রূপ নিতে যাচ্ছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
বিএনপির একাধিক নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে, বৈঠকে বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ এজেন্ডা রয়েছে। বিশেষভাবে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বিএনপি ও অন্যান্য রাজনৈতিক দলের সাম্প্রতিক সংলাপ এবং তার ফলাফলকে। আলোচনায় উঠে আসবে সরকারের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ছড়িয়ে পড়া আন্দোলন এবং সচিবালয়কেন্দ্রিক উত্তপ্ত পরিস্থিতি।
বৈঠকে ভারতের সীমান্ত দিয়ে ‘পুশইন’ অব্যাহত থাকার বিষয়টি বিশেষভাবে গুরুত্ব দিয়ে আলোচনা করা হবে। একই সঙ্গে চট্টগ্রামে সাম্প্রতিক সময়ে ‘কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট’ (কেএনএফ)-এর ২০ হাজার ইউনিফর্ম জব্দের বিষয়টি নেতাদের অবহিত করা হবে। এর পেছনে কী ধরনের নিরাপত্তা ঘাটতি বা রাষ্ট্রীয় ব্যর্থতা কাজ করছে, তা নিয়েও আলোচনা হবে বলে জানা গেছে।
গত শনিবার রাতে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে বিএনপি একটি লিখিত বক্তব্য দিয়েছে। সেখানে তারা স্পষ্টভাবে জানিয়েছে, দীর্ঘ ১৬ বছরের ফ্যাসিবাদবিরোধী লড়াই এবং রক্তাক্ত ছাত্র গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে গঠিত অন্তর্বর্তী সরকারের নিরপেক্ষতা নিয়ে এখন জনমনে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
বিএনপির অভিযোগ, সরকারের সাম্প্রতিক কর্মকাণ্ড, উপদেষ্টাদের ভূমিকা এবং প্রশাসনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে পক্ষপাতদুষ্ট আচরণ এই সরকারের নিরপেক্ষ অবস্থানকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে। দলটির দাবি, বিশেষ করে যারা সরাসরি রাজনৈতিকভাবে যুক্ত, এমন উপদেষ্টারা সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করছেন এবং তাদের দ্রুত অব্যাহতি দেওয়া উচিত।
বৈঠকে চলমান আন্দোলনকে কীভাবে আরও সংগঠিত করা যায়, প্রশাসনিক জটিলতা ও দমননীতি মোকাবিলায় দলীয় অবস্থান কী হবে, সেসব নিয়েও বিস্তৃত আলোচনা হবে বলে জানা গেছে।
সূত্র মতে, স্থায়ী কমিটির সদস্যরা সরকারের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক কর্মসূচি বর্ধিতকরণ, জনসম্পৃক্ততা বাড়ানো এবং আন্তর্জাতিক মহলের দৃষ্টি আকর্ষণের বিষয়ে দিকনির্দেশনা দেবেন।
সাম্প্রতিক সময়ে রাজনৈতিক পালাবদলের পর দেশে যে অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্বে এসেছে, তা নিয়ে বিভিন্ন মহলে যেমন প্রত্যাশা তৈরি হয়েছিল, তেমনি হতাশাও জন্ম নিয়েছে। বিএনপি মনে করছে, এই পরিস্থিতিতে দলীয়ভাবে একটি সুস্পষ্ট, যুক্তিসঙ্গত এবং জনগণের আস্থা অর্জনে সক্ষম অবস্থান নেওয়া জরুরি।
সেদিক থেকে আজকের বৈঠক শুধু বিএনপির জন্য নয়, বরং দেশের সামগ্রিক রাজনৈতিক গতিপথের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
বাংলাধারা/এসআর