ঢাকা, রবিবার, ১৫ জুন ২০২৫, ১ আষাঢ় ১৪৩২

ডিসেম্বরে মধ্যেই নির্বাচন করতে হবে: তারেক রহমান

আহমেদ শাহেদ:

 প্রকাশিত: মে ২৯, ২০২৫, ০২:১৪ রাত  

ছবি: বাংলাধারা

ক্ষমতা ধরে রাখার খেলা বন্ধ করুন, রাজনীতির মাঠে আসুন। ডিসেম্বরে মধ্যেই নির্বাচন হতে হবে। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বুধবার বিকেলে নয়াপল্টনে ‘তারুণ্যের সমাবেশে’ প্রধান অতিথির বক্তব্যে এই হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন।

তিনি বলেন, এই সরকারের কেউ যদি রাজনীতি করতে চায় বা ক্ষমতায় থাকতে চায়, তাহলে বলব—ক্ষমতা ছেড়ে জনগণের কাতারে আসুন। অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনেই আগামী ডিসেম্বরে নির্বাচন করতে হবে। আর একদিনও বিলম্ব সহ্য করা হবে না।

তারেক রহমান বিএনপি নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বলেন, নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে হবে এখনই। কে কম সংস্কার চায় আর কে বেশি- এই নাটকের পেছনে সময় নষ্ট করলে চলবে না। জনগণের কাছে যান, তাদের কথা শুনুন এবং সেই অনুযায়ী প্রস্তুতি নিন।

তারেক রহমান বলেন, এখন আর কথার রাজনীতি নয়, বাস্তবায়ন ও দৃষ্টান্ত স্থাপনের সময়। দেশের বিপুল জনসংখ্যাকে জনশক্তিতে রূপান্তরিত করতে পারলে বাংলাদেশ আর পিছিয়ে থাকবে না।

তিনি অভিযোগ করেন, আদালতের প্রতি শ্রদ্ধা না দেখিয়ে ইশরাক হোসেনের শপথে বাধা দেওয়া হয়েছে। এটি প্রমাণ করে স্বৈরশাসনের পুনঃপ্রতিষ্ঠার চেষ্টা চলছে। আমরা যেন ‘উত্তর কোরীয় গণতন্ত্রে’ পরিণত না হই, সেই বিষয়ে সবাইকে সজাগ থাকতে হবে।

তারেক রহমান সমাবেশে উপস্থিত হাজারো তরুণ-তরুণীর উদ্দেশে বলেন, জনগণই বিএনপির শক্তির উৎস। ক্ষমতায় না থেকেও আমরা জনগণের কথা চিন্তা করি। আর ক্ষমতায় এলে জনগণকে নিয়েই দেশ পরিচালনা করব।

তিনি আরও বলেন, যেকোনো কার্যকর নির্বাচনের জন্য দরকার একটি নিরপেক্ষ নির্বাচনকালীন সরকার। শুরু থেকেই বিএনপি এই দাবিতেই আন্দোলন করে আসছে।

সমাবেশে এক পর্যায়ে স্লোগান তুলে তারেক বলেন, “দিল্লি নয়, পিন্ডি নয়- সবার আগে বাংলাদেশ।”

তারেক রহমান জানান, বিএনপি ক্ষমতায় গেলে মৌলিক কর্মমুখী শিক্ষা ও জ্ঞানভিত্তিক সমাজ গঠনের জন্য স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি কর্মসূচি বাস্তবায়ন করবে।

  • ৪ কোটি পরিবারের জন্য ‘ফ্যামিলি কার্ড’:
    গ্রামীণ অসচ্ছল পরিবারগুলোকে আর্থিক সহায়তা দেওয়ার জন্য ‘ফ্যামিলি কার্ড’ চালু করা হবে। এতে স্বাবলম্বী হওয়ার সুযোগ তৈরি হবে।
  • ‘ফারমার্স কার্ড’ চালু:
    কৃষকদের জন্য ‘ফারমার্স কার্ড’ চালু করা হবে যাতে জমির পরিমাণসহ যাবতীয় তথ্য থাকবে এবং কৃষি ভর্তুকি ও সহায়তা পেতে তারা সহজেই উপকৃত হতে পারে।
  • বেকারত্ব হ্রাসে কর্মসংস্থান:
    দেশে সাড়ে তিন কোটি কর্মজীবী মানুষের জন্য নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করা হবে। আইটি, ই-কমার্স ও কারিগরি শিক্ষা খাতে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হবে।
  • স্বাস্থ্যসেবা পরিকল্পনা:
    এক থেকে তিন বছরের মধ্যে সার্বজনীন স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে সরকারি ও বেসরকারি খাতে সমন্বিত কর্মপরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।
  • পরিবেশ উন্নয়নে পদক্ষেপ:
    খাল খনন ও বৃক্ষরোপণকে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। প্রতি পাঁচ বছরে ২৫ থেকে ৩০ কোটি গাছ লাগানোর লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।

তারেক রহমান বলেন, “উন্নয়ন ও উৎপাদনের রাজনীতির পথ দেখিয়েছিলেন শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান। বিএনপি ক্ষমতায় গেলে সেই ধারাবাহিকতায় দেশ ও জনগণের প্রতি দেওয়া প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী রাষ্ট্র পরিচালনা করবে।”

তারুণ্যের সমাবেশে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ড. আবদুল মঈন খান, মির্জা আব্বাস, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, গয়েশ্বর চন্দ্র রায় ও সালাউদ্দিন আহমেদ।

যুবদল সভাপতি আবদুল মোনায়েম মুন্না সভাপতিত্বে আরও বক্তব্য রাখেন স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এস এম জিলানী, যুবদলের সাধারণ সম্পাদক মোহম্মদ নুরুল ইসলাম নয়ন, ও ছাত্রদলের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব।

যৌথভাবে অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক রাজিব আহসান এবং ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দিন নাছির।


বাংলাধারা/এসআর