শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খানের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা
প্রকাশিত: জুন ০১, ২০২৫, ০৪:৩২ দুপুর

ফাইল ছবি
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল ২০২৫ সালের ঐতিহাসিক জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থনে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুনের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ (ফরমাল চার্জ) আমলে নিয়েছে। রোববার (১ জুন) বিচারপতি গোলাম মোর্তজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল এ সিদ্ধান্ত দেয়।
আলোচিত এ মামলায় ট্রাইব্যুনাল শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খানের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে। অপর আসামি সাবেক আইজিপি মামুন বর্তমানে কারাগারে আছেন।
দেশের ইতিহাসে এই প্রথমবারের মতো কোনো যুদ্ধাপরাধ-সংশ্লিষ্ট মামলার বিচার কার্যক্রম সরাসরি সম্প্রচার করা হয় রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন চ্যানেল বিটিভিতে। এতে সাধারণ মানুষ এই ঐতিহাসিক বিচারিক প্রক্রিয়ার সাক্ষী হওয়ার সুযোগ পান।
রোববার দুপুর ১২টার দিকে চিফ প্রসিকিউটর মুহাম্মদ তাজুল ইসলাম আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের রেজিস্ট্রার কার্যালয়ে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ জমা দেন। অভিযোগপত্রে শেখ হাসিনাকে 'মাস্টারমাইন্ড' এবং ‘সুপিরিয়র কমান্ডার’ হিসেবে উল্লেখ করে বলা হয়েছে, তিনি গত আগস্টের শুরুর দিকে (৩-৫ আগস্ট) শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে অংশ নেওয়া সাধারণ মানুষের বিরুদ্ধে সরাসরি মারণাস্ত্র, হেলিকপ্টার, ড্রোন, এপিসি ব্যবহারের নির্দেশ দেন।
প্রসিকিউশনের দাবি, শেখ হাসিনার নির্দেশে সরাসরি গুলির আদেশ বাস্তবায়ন করেন তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান, এবং পুলিশ বাহিনীকে সেই আদেশ কার্যকর করতে নেতৃত্ব দেন তৎকালীন আইজিপি মামুন। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে থাকা প্রমাণের মধ্যে রয়েছে কল রেকর্ড, ভিডিও ফুটেজ, উদ্ধার করা বুলেট, হেলিকপ্টারের ফ্লাইট শিডিউল ও সংশ্লিষ্ট বাহিনীর কমিউনিকেশন লগ।
চিফ প্রসিকিউটরের দপ্তর থেকে জানানো হয়, মামলায় মোট পাঁচটি অভিযোগ আনা হয়েছে।
১. শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধে উসকানি ও প্ররোচনা দেওয়া।
২. শান্তিপূর্ণ জনতার বিরুদ্ধে গুলির নির্দেশ প্রদান।
৩. নির্দিষ্ট সময় ও স্থানে নিরীহ নাগরিকদের ওপর গুলিবর্ষণ ও হত্যাকাণ্ডে নেতৃত্বের অভিযোগ।
৪. গণহত্যার উদ্দেশ্যে রাষ্ট্রীয় যন্ত্রকে ব্যবহার করা।
৫. আহতদের চিকিৎসা ও দাফন কাজেও বাধা দেওয়ার চেষ্টার অভিযোগ।
মামলায় সাক্ষী হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে আহতদের চিকিৎসাসেবায় নিয়োজিত চিকিৎসক, নিহতদের পরিবারের সদস্য, প্রত্যক্ষদর্শী সাধারণ নাগরিক, সাংবাদিক, আইনজীবী, এবং সরকারবিরোধী আন্দোলনের নেতৃত্বদানকারী ছাত্রনেতাদের। সবমিলিয়ে সাক্ষীর সংখ্যা ৮২ জন।
এ মামলার তদন্ত শুরু হয় আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পরপরই। তদন্ত সংস্থা গত ১২ মে চূড়ান্ত তদন্ত প্রতিবেদন চিফ প্রসিকিউটরের দপ্তরে জমা দেয়। সেই প্রতিবেদনের ভিত্তিতে মামলার আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল হয় এবং আজ তা আমলে নেয় ট্রাইব্যুনাল।
প্রসিকিউশনের দাবি অনুযায়ী, শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের পতনের মুহূর্তে রাষ্ট্রযন্ত্রকে কাজে লাগিয়ে সাধারণ মানুষকে দমন করতে গিয়ে সরকার মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটন করে। কল রেকর্ডে উঠে এসেছে শেখ হাসিনার কণ্ঠে সেনা, পুলিশ ও র্যাব কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথোপকথন, যেখানে তিনি আন্দোলন দমনে ‘শূন্য সহনশীলতা’ নীতিতে চলার নির্দেশ দেন।
এই মামলার প্রেক্ষিতে রাজনৈতিক অঙ্গনে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে। মানবাধিকার সংস্থা ও আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলো বিষয়টি ঘনিষ্ঠভাবে পর্যবেক্ষণ করছে। সাধারণ জনগণের মধ্যেও ব্যাপক আলোচনার সৃষ্টি হয়েছে, বিশেষ করে বিটিভিতে সরাসরি বিচারিক কার্যক্রম সম্প্রচারের ফলে সাধারণ মানুষের মধ্যে আগ্রহ ও অংশগ্রহণ বেড়েছে।
এই বিচার কার্যক্রম এক ঐতিহাসিক নজির হয়ে থাকবে বাংলাদেশের রাজনৈতিক ও বিচারিক ইতিহাসে, বিশেষ করে যখন একজন সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে অভিযুক্ত করে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে।
বাংলাধারা/এসআর