ঢাকা, শনিবার, ১৪ জুন ২০২৫, ৩১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

ইসরায়েলের জন্য ‘করুণ পরিণতি’ অপেক্ষা করছে: হুঁশিয়ারি খামেনির

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

 প্রকাশিত: জুন ১৩, ২০২৫, ১১:০৮ দুপুর  

ছবি: সংগৃহিত

মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনার পারদ যখন চরমে, ঠিক তখনই ইসরায়েলের ভয়াবহ এক হামলায় কেঁপে উঠেছে ইরানের রাজধানী তেহরান। ভোররাতে চালানো এই হামলায় একাধিক সামরিক ও পরমাণু স্থাপনা গুঁড়িয়ে দেওয়ার পাশাপাশি নিহত হয়েছেন ইরানের রেভল্যুশনারি গার্ডের প্রধান জেনারেল হোসেইন সালামিসহ বেশ কয়েকজন উচ্চপদস্থ সামরিক কর্মকর্তা ও পরমাণু বিজ্ঞানী। এমন প্রেক্ষাপটে ইসরায়েলকে কড়া হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি।

শুক্রবার (১৩ জুন) মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন এক প্রতিবেদনে জানায়, ইরানে চালানো এই হামলার জন্য ইসরায়েলকে “কঠোর শাস্তি” পেতে হবে বলে হুঁশিয়ার করে দিয়েছেন খামেনি। তিনি বলেন, “এই দখলদার শাসকগোষ্ঠীর জন্য একটি করুণ এবং যন্ত্রণাময় পরিণতি অপেক্ষা করছে, এবং তারা তা অচিরেই উপলব্ধি করবে।”

ইরানের রাষ্ট্রীয় বার্তাসংস্থা আইআরএনএ-কে দেওয়া এক বিবৃতিতে খামেনি বলেন, “এই হামলা ছিল ভোররাতে সংঘটিত এক নিষ্ঠুর অপরাধ। ইসরায়েল কেবল সামরিক স্থাপনাই নয়, বরং আবাসিক এলাকাও টার্গেট করেছে।” তিনি আরও বলেন, “এই জঘন্য অপরাধের জন্য ইসরায়েলকে কঠিন মূল্য দিতে হবে।”

খামেনি নিশ্চিত করেছেন, হামলায় বেশ কয়েকজন সামরিক কমান্ডার ও পরমাণু বিজ্ঞানী শহীদ হয়েছেন। তবে তিনি আশ্বস্ত করে বলেন, “তাদের সহকর্মীরা ও স্থলাভিষিক্তরা, ইনশাআল্লাহ, কোনো বিরতি ছাড়াই তাদের দায়িত্ব অব্যাহত রাখবেন।”

স্থানীয় সময় ভোর ৪টার দিকে ইরানের রাজধানী তেহরানে একাধিক বিকট বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায়। এর কিছু সময় পর, ভোর ৫টা ৩০ মিনিটে ইরানে এবং ইসরায়েলের সময় সকাল ৫টায় দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রী এই হামলার দায় স্বীকার করে জরুরি অবস্থা জারি করেন।

ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়াভ গ্যালান্ত জানান, ইরানের পরমাণু কর্মসূচি এবং সামরিক অবকাঠামো লক্ষ্য করেই এই অভিযান চালানো হয়েছে। তিনি বলেন, “খুব শিগগিরই ইরান থেকে পাল্টা হামলা আসতে পারে,” তাই দেশজুড়ে সতর্কতা জারি করা হয়েছে।

ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু এই হামলাকে ‘সফল অপারেশন’ আখ্যা দিয়ে বলেন, “এই আক্রমণ ইরানের পরমাণু সমৃদ্ধকরণ কর্মসূচির কেন্দ্রে আঘাত হেনেছে, এবং এটি অনির্দিষ্টকাল চালিয়ে যাওয়া হবে।”

অন্যদিকে, ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর এক শীর্ষ কর্মকর্তা বিবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে জানান, ইরানের কাছে এমন পরিমাণে পরমাণু উপাদান মজুত রয়েছে যা দিয়ে কয়েক দিনের মধ্যেই তারা পারমাণবিক বোমা তৈরি করতে পারে। তিনি দাবি করেন, “এই হামলার মাধ্যমে ইরানের সেই সক্ষমতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করা হয়েছে।”

হামলার সময়ে ইসরায়েলের সাধারণ মানুষ ঘুমিয়ে ছিলেন। কিন্তু হঠাৎ জরুরি সাইরেনের বিকট শব্দ এবং মোবাইলে সতর্কবার্তা পেয়ে অনেকে আতঙ্কিত হয়ে ওঠেন। পরিস্থিতির গুরুত্ব অনুধাবন করে দেশটির বিভিন্ন স্থানে বাংকারে আশ্রয় নিতে দেখা যায় বহু মানুষকে।

মধ্যপ্রাচ্যের ভূরাজনৈতিক অঙ্গনে এমন হামলা এক নতুন সংঘাতের ইঙ্গিত দিচ্ছে। ইরান এরই মধ্যে পাল্টা জবাবের প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে রেভল্যুশনারি গার্ড বাহিনীকে সর্বোচ্চ সতর্কতায় রাখা হয়েছে। ইসরায়েলও সীমান্তজুড়ে সামরিক তৎপরতা বাড়িয়েছে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, যদি ইরান এই হামলার প্রত্যুত্তরে সরাসরি সামরিক প্রতিক্রিয়া জানায়, তবে তা মধ্যপ্রাচ্যে একটি পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধের সূচনা করতে পারে। যার প্রভাব কেবল অঞ্চলেই সীমাবদ্ধ থাকবে না, বরং বৈশ্বিক শক্তির সংঘর্ষেও রূপ নিতে পারে।

ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যে এই উত্তপ্ত পরিস্থিতি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে চরম উদ্বেগের জন্ম দিয়েছে। আয়াতুল্লাহ খামেনির “করুণ পরিণতির” হুঁশিয়ারি এবং ইসরায়েলের হুমকিমূলক বার্তা — সব মিলিয়ে আগামীর দিনগুলোতে মধ্যপ্রাচ্যের আকাশে আরও অনেক ঘন কালো মেঘ জমার ইঙ্গিত দিচ্ছে। সংঘর্ষ কত দূর গড়াবে, সেটা এখন শুধু সময়ের অপেক্ষা।

 

বাংলাধারা/এসআর