ঈদযাত্রায় রক্তাক্ত সড়ক: ১৫ দিনে প্রাণ হারালেন ৩৯০ জন
প্রকাশিত: জুন ১৬, ২০২৫, ০২:১১ দুপুর

ফাইল ছবি
ঈদের আনন্দ শেষে কর্মস্থলে ফিরেছেন মানুষ। তবে ফিরলেন অনেকে বুকভরা শোক নিয়ে- হারানো স্বজনের স্মৃতি বুকে চেপে। কারণ ঈদুল আজহার এবারের যাত্রাপথেও ছিল না স্বস্তি, বরং প্রতিবারের মতোই ঘটেছে মর্মান্তিক দুর্ঘটনা, ঝরেছে শত শত প্রাণ।
বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ঈদ উপলক্ষে যাত্রা শুরুর আগের দিন থেকে ঈদের পরে কর্মস্থলে ফেরার দিন পর্যন্ত ১৫ দিনে (৩ জুন থেকে ১৭ জুন পর্যন্ত) দেশের সড়ক-মহাসড়কে ৩৭৯টি দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন ৩৯০ জন। আহত হয়েছেন আরও ১১৮২ জন।
সোমবার (১৬ জুন) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনি মিলনায়তনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য তুলে ধরেন যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক চৌধুরী।
তিনি জানান, শুধু সড়কপথেই নয়- রেলপথে ২৫টি দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন ২৫ জন এবং আহত হয়েছেন ১২ জন। নৌপথেও ঘটেছে ১১টি দুর্ঘটনা, যাতে প্রাণ হারিয়েছেন ১২ জন, নিখোঁজ রয়েছেন আরও ৬ জন। সবমিলিয়ে ঈদযাত্রার সময়ে সড়ক, রেল ও নৌপথে মোট ৪১৫টি দুর্ঘটনায় ৪২৭ জন নিহত এবং ১১৯৪ জন আহত হয়েছেন।
যাত্রী কল্যাণ সমিতির পর্যবেক্ষণ বলছে, এবারের দুর্ঘটনাগুলোর পেছনে মূলত কয়েকটি কারণ দায়ী-
- বৃষ্টির কারণে সড়কে গর্ত তৈরি হওয়া এবং সেগুলোতে দ্রুতগতির যানবাহনের নিয়ন্ত্রণ হারানো
- চালকদের বিরামহীনভাবে গাড়ি চালানো, ফলে ধকল ও ঘুমে তন্দ্রাচ্ছন্ন অবস্থায় সংঘর্ষ
- মহাসড়কে দাঁড়িয়ে থাকা ট্রাকের পেছনে ধাক্কা লাগা
- ফিটনেসবিহীন যানবাহনের চলাচল
- অভিজ্ঞ ও প্রশিক্ষিত চালকের অভাব
- ট্রাফিক আইনের দুর্বল প্রয়োগ
- ঈদকেন্দ্রিক অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের নৈরাজ্য
এবারও মধ্য ও নিম্ন আয়ের মানুষদের ঈদের যাত্রা ছিল চরম দুর্ভোগপূর্ণ। অতিরিক্ত ভাড়া, টিকিট সংকট ও পরিবহন সংকটের কারণে অনেকেই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বাসের ছাদে, ট্রেনের ছাদে কিংবা পণ্যবাহী ট্রাকে চেপে বাড়ি যেতে বাধ্য হয়েছেন। মোজাম্মেল হক বলেন, “এটা কেবল পরিবহন নৈরাজ্য নয়—এটা মানবিক বিপর্যয়।”
সংগঠনটির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী মনে করেন, এ ধরনের দুর্ঘটনা রোধে কেবল তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ নয়- প্রয়োজন দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা। তিনি বলেন-
- ঈদের আগে কমপক্ষে চার দিনের ছুটি ঘোষণার মাধ্যমে যাত্রা ছড়িয়ে দেওয়া
- ছোট যানবাহন মহাসড়ক থেকে উচ্ছেদ
- পর্যাপ্ত ও নিরাপদ গণপরিবহন নিশ্চিত করা
- দক্ষ চালক তৈরিতে প্রশিক্ষণ কর্মসূচি
- ফিটনেসবিহীন যানবাহন নিষিদ্ধ
- মানসম্পন্ন সড়ক অবকাঠামো
- এবং সর্বোপরি, ট্রাফিক আইন কঠোরভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে
প্রতিবারের মতো এবারও একই ধরনের চিত্র। কিছুদিন আলোচনা, তারপর বিস্মৃতির অতলে হারিয়ে যায় সবকিছু। সড়ক যেন আজও নিরাপদ নয়; বরং এক একটি ঈদে সেটি যেন মৃত্যুর মিছিলের প্রধান মঞ্চ হয়ে ওঠে।
দেশজুড়ে প্রশ্ন উঠছে- কীভাবে এমন প্রাণহানি রোধ করা যায়? আর কত প্রাণ ঝরলে আমরা সড়কের প্রতি নিরাপত্তা নিয়ে সত্যিকারের উদ্যোগ দেখব?
বাংলাধারা/এসআর