ঢাকা, বুধবার, ৩০ জুলাই ২০২৫, ১৫ শ্রাবণ ১৪৩২

এক ব্যক্তি সর্বোচ্চ ১০ বছর প্রধানমন্ত্রী থাকবেন, একমত রাজনৈতিক দলগুলো

নিজস্ব প্রতিবেদক

 প্রকাশিত: জুলাই ২৭, ২০২৫, ০৬:০৩ বিকাল  

ছবি: সংগৃহিত

প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদসীমা নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্য তৈরি হয়েছে। সর্বোচ্চ ১০ বছর একজন ব্যক্তি প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে পারবেন, এমন প্রস্তাবে সংলাপে অংশ নেওয়া দলগুলো একমত হয়েছে। একইসঙ্গে পুলিশ বাহিনীর জবাবদিহিতা ও পেশাদারিত্ব নিশ্চিত করতে ‘স্বাধীন পুলিশ কমিশন’ গঠনের বিষয়েও ঐকমত্যে পৌঁছেছেন নেতারা।

রোববার (২৭ জুলাই) রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে চলমান দ্বিতীয় ধাপের সংলাপের ১৯তম দিনে এ সিদ্ধান্তের কথা জানান জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ। তিনি বলেন, আমরা আগে একমত হয়েছিলাম যে একজন ব্যক্তি জীবনে সর্বোচ্চ ১০ বছর প্রধানমন্ত্রী পদে থাকতে পারবেন। এ বিষয়ে সনদে উল্লেখ করা হবে। আজ আবারও নিশ্চিত করতে চাই, এ বিষয়ে কি সবাই একমত?

এ সময় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, আমরা আগেই বলেছি, একজন ব্যক্তি ১০ বছরের বেশি প্রধানমন্ত্রী পদে বহাল থাকতে পারবেন না। আমাদের প্রস্তাব ছিল নির্বাচন কমিশনসহ সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানে নিয়োগের ক্ষেত্রে একটি স্বাধীন কমিটি গঠনের। সেটি বিবেচনায় নেওয়া হলে আমরা এই প্রস্তাব সমর্থন করব। ১০ বছরের সীমা নিয়ে ঘোষণা দিতে পারেন এটি মূলত আমাদেরই প্রস্তাব।

উল্লেখ্য, সংলাপে বিএনপি, জামায়াত, এনসিপিসহ মোট ৩০টি রাজনৈতিক দল অংশ নিলেও আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি এবং ১৪ দলীয় জোটকে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি।

আলোচনার শুরুতে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন স্বাধীন পুলিশ কমিশন গঠনের প্রস্তাব উপস্থাপন করে। প্রস্তাবটি নিয়ে আলোচনার পর রাজনৈতিক দলগুলো নীতিগতভাবে একমত হয়। আলী রীয়াজ বলেন, পুলিশ কমিশন গঠনে সবাই একমত হয়েছেন। এর কাঠামো ও আইনগত দিক নিয়ে পরবর্তী আলোচনায় চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

প্রস্তাব অনুযায়ী, পুলিশ বাহিনীকে একটি শৃঙ্খলাবদ্ধ, আইনসম্মত এবং জনবান্ধব বাহিনী হিসেবে গড়ে তোলা হবে। পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে সাধারণ নাগরিকদের অভিযোগ এবং নাগরিকদের বিরুদ্ধে পুলিশের অভিযোগ উভয় ক্ষেত্রেই কমিশন তদন্ত করবে। প্রস্তাবিত বাংলাদেশ পুলিশ কমিশনের নেতৃত্ব দেবেন একজন অবসরপ্রাপ্ত আপিল বিভাগের বিচারপতি (৭২ বছরের কম বয়সী)। কমিশনের সদস্য সচিব হবেন একজন অবসরপ্রাপ্ত অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক (অ্যাডিশনাল আইজিপি), যিনি ৬২ বছরের কম বয়সী হবেন।

কমিশনে সরকার ও বিরোধী দলের সমান প্রতিনিধিত্ব থাকবে। সদস্যদের মধ্যে থাকবেন সংসদের সরকার দলীয় নেতা, বিরোধীদলীয় নেতা, স্পিকার, বিরোধীদলীয় ডেপুটি স্পিকার, একজন সুপ্রিম কোর্টের অভিজ্ঞ আইনজীবী (কমপক্ষে ১৫ বছরের অভিজ্ঞতা), একজন অভিজ্ঞ মানবাধিকার কর্মী (কমপক্ষে ১০ বছরের বাস্তব অভিজ্ঞতা) এবং একজন অবসরপ্রাপ্ত অতিরিক্ত আইজিপি। খসড়ায় উল্লেখ করা হয়েছে, কমিশনের অন্তত দুইজন সদস্য নারী হতে হবে।

সদস্য বাছাইয়ের জন্য একটি বাছাই কমিটি থাকবে, যেখানে থাকবেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান এবং একজন হাইকোর্ট বিভাগের অভিজ্ঞ বিচারক। চেয়ারপারসন ও সদস্য সচিব পূর্ণকালীন দায়িত্ব পালন করবেন। বাকি সাতজন সদস্য স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে দায়িত্ব পালন করলেও বৈঠক ও দাপ্তরিক কাজে সম্মানী বা ভাতা নিতে পারবেন। কমিশনের কার্যক্রম ও সদস্যদের দায়িত্ব, ক্ষমতা এবং অপসারণের প্রক্রিয়া একটি আইন দ্বারা নির্ধারিত হবে। কমিশনের নীতিগত ও নির্বাহী সিদ্ধান্তগুলো সদস্যদের সংখ্যাগরিষ্ঠ মতের ভিত্তিতে অনুমোদিত হবে।

বাংলাধারা/এসআর