ঢাকা, শনিবার, ১৪ জুন ২০২৫, ৩১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

নতুন ফ্যাসিবাদের আগমন ধ্বনি শোনা যাচ্ছে: আনু মুহাম্মদ

নিজস্ব প্রতিবেদক

 প্রকাশিত: মে ৩১, ২০২৫, ০৮:১৩ রাত  

ছবি: বাংলাধারা

গণতান্ত্রিক অধিকার ক্রমাগত হ্রাস পাচ্ছে, রাষ্ট্রীয় অব্যবস্থাপনা ও দমন-পীড়নের প্রেক্ষাপটে সমাজে একটি নতুন ফ্যাসিবাদের আগমন ধ্বনি শোনা যাচ্ছে- এমন আশঙ্কার কথা জানালেন বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ।

শনিবার বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে অনুষ্ঠিত এক নাগরিক সংহতি সমাবেশে তিনি বলেন, “যে পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে, সেখানে আবার নতুন করে ফ্যাসিবাদী শক্তির নড়াচড়া লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এই বিপজ্জনক প্রবণতার বিরুদ্ধে এখনই প্রতিবাদ গড়ে তোলা প্রয়োজন।”

সমাবেশে আনু মুহাম্মদ আরও বলেন, “যে গণ-অভ্যুত্থানের আশা তৈরি হয়েছিল, যেখানে জনগণ একটি নতুন রাজনৈতিক কাঠামোর স্বপ্ন দেখেছিল, সেখানে আজ সরকারের ভূমিকায় নির্লিপ্ততা। কোথাও রাষ্ট্রের কোনো দায়িত্বশীল উপস্থিতি নেই। বরং কিছু কিছু ক্ষেত্রে রাষ্ট্রীয় বাহিনীর প্রত্যক্ষ কিংবা পরোক্ষ সহায়তায় হামলা ও নির্যাতনের চিত্র দেখা যাচ্ছে।”

গণতান্ত্রিক ছাত্র জোটের ব্যানারে এই নাগরিক সমাবেশের আয়োজন করা হয় যুদ্ধাপরাধী এ টি এম আজহারুল ইসলামকে দায়মুক্তি দেওয়া এবং রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ও চট্টগ্রামে ছাত্র শিবিরের হামলার প্রতিবাদে। এই ঘটনাগুলিকে দেশের গণতান্ত্রিক রাজনীতির জন্য গুরুতর হুমকি হিসেবে চিহ্নিত করেছেন বক্তারা।

আনু মুহাম্মদ বলেন, “আজ আমরা আশাহত হয়ে দাঁড়িয়েছি। যারা গণতন্ত্রের জন্য লড়ছে-ছাত্র, নারী, শ্রমিক-তাদেরই ওপর চলছে হামলা। যুদ্ধাপরাধীদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করলে তাদের ইসলামবিরোধী বলে ট্যাগ লাগিয়ে দমন করা হচ্ছে। এটা গণতন্ত্রের জন্য গভীর উদ্বেগজনক বার্তা বহন করে।”

একজন যুদ্ধাপরাধীকে দায়মুক্তি দেওয়ার বিষয়ে প্রশ্ন তুলে আনু মুহাম্মদ বলেন, “এ টি এম আজহারুল ইসলাম ১৯৭১ সালের গণহত্যায় অংশ নেওয়া একটি কুখ্যাত সংগঠনের নেতা ছিলেন। তাঁর বিরুদ্ধে দলিল-প্রমাণভিত্তিক অভিযোগ ছিল। যদি আদালত কোনো প্রক্রিয়াগত ত্রুটির কারণে পূর্ববর্তী রায় বাতিল করে, তবুও যুদ্ধাপরাধের সত্যতা বিলুপ্ত হয় না।”

তিনি আরও বলেন, “একজন চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধীকে নির্দোষ ঘোষণার মধ্য দিয়ে ইতিহাস বিকৃত করা হয়েছে। এর মাধ্যমে ১৯৭১ সালের শহীদ, নির্যাতিত নারী ও মুক্তিযোদ্ধাদের আত্মত্যাগের সাথেই বিশ্বাসঘাতকতা করা হলো।”

আনু মুহাম্মদ বলেন, “যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের বিরোধিতা করে যখন একে ইসলামবিরোধী বলা হয়, তখন সেটা ধর্মকেই অপমান করা হয়। কারণ শহীদদের অধিকাংশই ছিলেন ধার্মিক মুসলমান। সুতরাং, এই বিচারকে যারা ইসলামবিরোধী বলছে, তারা ইতিহাসের সত্য এবং ইসলামের আদর্শ দুইকেই অবমাননা করছে।”

তরুণ প্রজন্মের প্রতি বার্তা দিয়ে তিনি বলেন, “যারা ৭১-এর পর জন্ম নিয়েছে, তারা নিজে হয়তো যুদ্ধাপরাধে জড়িত ছিল না। কিন্তু যদি তারা সেই রাজনীতি ধারণ করে, তবে সেই অপরাধের দায় থেকেও তারা মুক্ত নয়।”

বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রীর সাধারণ সম্পাদক জাবির আহমেদ জুবেল রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাম্প্রতিক ঘটনায় শিবিরের ভূমিকার নিন্দা জানিয়ে বলেন, “আজহারুল ইসলামের খালাসের প্রতিবাদে আয়োজিত মশাল মিছিলে শিবির দুই দফা হামলা চালিয়েছে। ১৯৯৩ সালে শহীদ রিমুর হত্যার মতোই আবারও রাবিতে শিবির সন্ত্রাস শুরু করেছে।”

তিনি বলেন, “ছাত্ররাজনীতিকে দখলের হাতিয়ার বানিয়ে যারা ক্যাম্পাসে সহিংসতা ছড়াচ্ছে, তাদের প্রতিরোধে শিক্ষার্থীদেরই ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। না হলে দেশের ভবিষ্যৎ গণতান্ত্রিক কাঠামো চরম হুমকির মুখে পড়বে।”

সমাবেশে আরও বক্তৃতা দেন ভাসানী পরিষদের সাধারণ সম্পাদক হারুন উর রশীদ, গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটির সদস্য মানজুর আল মতিনসহ অন্যান্যরা। তাঁরা সবাই রাষ্ট্রের দমন-পীড়নের প্রবণতা, ইতিহাস বিকৃতি ও ধর্মের অপব্যবহার করে রাজনীতিকে দখলদারিত্বের পথে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টার বিরুদ্ধে গণপ্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানান।

তাঁদের মতে, আজ নারী, শিক্ষক, শ্রমিক, ছাত্র- যেই না নিজ অধিকারের কথা বলেন, সেই মুহূর্তেই তাঁকে হামলার শিকার হতে হচ্ছে। হামলাকারীরা থেকে যাচ্ছে অপ্রতিদণ্ডিত, কারণ তাদের পেছনে রয়েছে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা।


বাংলাধারা/এসআর