ঢাকা, মঙ্গলবার, ২১ অক্টোবর ২০২৫, ৫ কার্তিক ১৪৩২

একনেকে ১৩ প্রকল্প অনুমোদন, স্থগিত হাওরের জলবায়ু সহনশীল জীবনমান উন্নয়ন প্রকল্প

নিজস্ব প্রতিবেদক

 প্রকাশিত: অক্টোবর ২১, ২০২৫, ০৪:৪৩ দুপুর  

ছবি: সংগৃহিত

জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) ১ হাজার ৯৮৮ কোটি টাকার ১৩টি উন্নয়ন প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছে। তবে আলোচিত ‘জলবায়ু সহনশীল জীবনমান উন্নয়ন প্রকল্প’ (সিআরএলইপি) অনুমোদন পায়নি। হাওর ও খরাপ্রবণ বরেন্দ্র অঞ্চলে টেকসই জীবিকা ও জলবায়ু সহনশীলতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে নেওয়া এই প্রকল্পটি কাঠামোগত কারণে ফেরত পাঠানো হয়েছে।

মঙ্গলবার রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে এনইসি সম্মেলন কক্ষে প্রধান উপদেষ্টা ও একনেক চেয়ারপারসন ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় এসব সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। সভায় উপস্থিত ছিলেন পরিকল্পনা উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ, আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল, স্বরাষ্ট্র ও কৃষি উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী, শিল্প উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান, বিদ্যুৎ ও সেতু উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান, স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া, স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নূরজাহান বেগম, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক উপদেষ্টা ফারুক ই আজম বীর প্রতীক ও পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন।

অনুমোদিত ১৩ প্রকল্পের মধ্যে সরকারি অর্থায়ন ১ হাজার ৮৮৫ কোটি ৭ লাখ টাকা, প্রকল্প ঋণ ৫৩ কোটি ২ লাখ টাকা এবং সংস্থার নিজস্ব অর্থায়ন ৫০ কোটি টাকা। এর মধ্যে তিনটি নতুন প্রকল্প, সাতটি সংশোধিত এবং তিনটির মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে ব্যয় না বাড়িয়ে।

সভায় পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান ‘জলবায়ু সহনশীল জীবনমান উন্নয়ন প্রকল্প’-এর কাঠামো নিয়ে আপত্তি তোলেন। তিনি বলেন, “জলবায়ু সহনশীলতার নামে এখানে মূল জোর দেওয়া হয়েছে অবকাঠামো নির্মাণে, ইট-পাথরের কাজে। অথচ টেকসই জীবিকা ও দারিদ্র্য হ্রাসের বিষয়টি উপেক্ষিত।”

তার আপত্তির প্রেক্ষিতে একনেক সভায় সিদ্ধান্ত হয়, হাওর অঞ্চলের প্রকৃত চাহিদা অনুযায়ী প্রকল্পের অবকাঠামোগত অংশ কমিয়ে জীবিকা ও প্রশিক্ষণ উপাদান বাড়িয়ে পুনর্গঠন করতে হবে। পুনর্গঠনের পরই এটি আবার একনেকে উপস্থাপন করা যাবে।

উল্লেখ্য, প্রকল্পটির মোট ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছিল ১ হাজার ২৬৮ কোটি ৮০ লাখ টাকা। এর মধ্যে সরকারের অনুদান ৩০৫ কোটি, আন্তর্জাতিক কৃষি উন্নয়ন তহবিল (ইফাদ) ঋণ ৮৫৪ কোটি এবং ডেনমার্কের উন্নয়ন সংস্থা ডানিডা অনুদান দেবে ১০৯ কোটি ৮০ লাখ টাকা। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) ছিল বাস্তবায়নকারী সংস্থা।

পাঁচ বছর মেয়াদি এই প্রকল্পে ৩৩৪ কিলোমিটার সড়ক নির্মাণ, ৫৮টি বাজার পুনর্বাসন, ৩৪টি ঘাট, ৭২টি আশ্রয়কেন্দ্র, ৪৮০টি শৌচাগার ও ৭২০টি নলকূপ স্থাপনের পরিকল্পনা ছিল। পাশাপাশি ৪০ হাজার যুবককে প্রশিক্ষণ ও ২০ হাজারকে উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে তোলার উদ্যোগও অন্তর্ভুক্ত ছিল।

তবে পরিকল্পনা কমিশনের মূল্যায়নে দেখা যায়, প্রকল্পের দুই-তৃতীয়াংশ অর্থ সড়ক, বাজার ও আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণে ব্যয় হওয়ার কথা। ফলে প্রকল্পের শিরোনাম ও বাস্তব কার্যক্রমের মধ্যে সাযুজ্য ছিল না। এ কারণেই একনেক সভায় প্রকল্পটি ফেরত পাঠানো হয়।

একনেকে অনুমোদিত প্রকল্পগুলোর মধ্যে রয়েছে, কক্সবাজারে কৃষি খাদ্য ব্যবস্থা রূপান্তরের মাধ্যমে স্থিতিশীলতা বৃদ্ধি, খুলনা বিভাগের পল্লী অবকাঠামো উন্নয়ন, গ্রামীণ কাঁচা রাস্তা টেকসইকরণ, গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের অভ্যন্তরীণ সড়ক ও ফুটপাত উন্নয়ন, উত্তরা লেক উন্নয়ন প্রকল্প, ক্যানবেরায় বাংলাদেশ দূতাবাস ভবন নির্মাণ, কিশোরগঞ্জ থেকে পাকুন্দিয়া-মির্জাপুর টোক সড়ক উন্নয়ন, বিএসটিআই’র পরীক্ষাগার সম্প্রসারণ, ঘোড়াশাল তৃতীয় ইউনিট পুনঃশক্তিকরণ, পাবনা মানসিক হাসপাতালকে আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন ইনস্টিটিউটে রূপান্তর এবং রেলওয়ের পশ্চিম ও পূর্বাঞ্চলের লেভেল ক্রসিং পুনর্বাসন প্রকল্প।

একনেক সূত্রে জানা গেছে, জলবায়ু সহনশীল প্রকল্পটি স্থগিত হলেও বাতিল করা হয়নি। পরিবেশ উপদেষ্টার ভাষায়, “টেকসই উন্নয়নের পথে যেতে হলে প্রকৃতি ধ্বংস নয়, বরং প্রকৃতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ উন্নয়নকেই প্রাধান্য দিতে হবে।”

বাংলাধারা/এসআর