নির্বাচন নিরপেক্ষে সব পদক্ষেপ নেওয়া হবে: প্রধান উপদেষ্টা
প্রকাশিত: অক্টোবর ২২, ২০২৫, ১০:৩৭ রাত

ছবি: সংগৃহিত
আগামী জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সার্বিক প্রস্তুতি ও সরকারের পদক্ষেপ নিয়ে আলোচনা করতে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠক করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) ও বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর শীর্ষ নেতারা।
বুধবার (২২ অক্টোবর) বিকেলে রাজধানীর রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় অনুষ্ঠিত পৃথক দুটি বৈঠকে জুলাই সনদ বাস্তবায়ন, জুলাই হত্যাকাণ্ডের বিচার প্রক্রিয়া ও গণভোটের রোডম্যাপ নিয়ে আলোচনা হয়।
প্রধান উপদেষ্টা বৈঠকে উভয় দলকে আশ্বস্ত করে বলেন, “আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করার লক্ষ্যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার সব প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করবে। দেশের সব রাজনৈতিক দলের সহযোগিতায় একটি শান্তিপূর্ণ ও উৎসবমুখর নির্বাচন আয়োজনই আমাদের লক্ষ্য।”
তিনি আরও বলেন, “আমাদের নিরপেক্ষতা নিয়ে কেউ সন্দেহ না করলেই ভালো। ইতোমধ্যেই আমরা একাধিক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিয়েছি, যা নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে স্বচ্ছ করবে। সামনের দিনগুলোতে আরও দৃশ্যমান পদক্ষেপ দেখতে পাবেন।”
প্রথম বৈঠকে এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামের নেতৃত্বে চার সদস্যের প্রতিনিধিদল অংশ নেয়। উপস্থিত ছিলেন দলের উত্তরাঞ্চলীয় মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক সামন্তা শারমিন এবং যুগ্ম আহ্বায়ক খালেদ সাইফুল্লাহ।
নাহিদ ইসলাম বৈঠকে বলেন, “আমরা নির্বাচনের আগে জুলাই হত্যাকাণ্ডের বিচারের রোডম্যাপ ও জুলাই সনদ বাস্তবায়নের নিশ্চয়তা চাই। এ বিষয়ে সরকারকে দৃঢ় পদক্ষেপ নিতে হবে।”
প্রধান উপদেষ্টা জবাবে বলেন, “জুলাই সনদ জাতির জন্য ঐতিহাসিক ও গুরুত্বপূর্ণ দলিল। এর বাস্তবায়নে সবার অংশগ্রহণ অপরিহার্য।” তিনি এনসিপিকে ঐ সনদে স্বাক্ষর করার আহ্বান জানান এবং জানান যে সনদ বাস্তবায়নের পদ্ধতি নিয়ে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন কাজ করছে।
বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টার পক্ষে উপস্থিত ছিলেন পরিকল্পনা উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ, আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল এবং শিল্প উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান।
এনসিপির বৈঠক শেষে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে দেখা করেন জামায়াতের নেতারা। দলটির নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মুহাম্মদ তাহেরের নেতৃত্বে চার সদস্যের প্রতিনিধিদলে ছিলেন সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এ টি এম মাছুম ও রফিকুল ইসলাম খান।
জামায়াত নেতারা বৈঠকে জুলাই সনদ বাস্তবায়নের জন্য জাতীয় নির্বাচনের আগেই গণভোট আয়োজনের দাবি জানান।
ডা. তাহের বলেন, “জুলাই সনদে এমন অনেক বিষয় রয়েছে যা জাতীয় নির্বাচনের সঙ্গে সরাসরি সম্পর্কিত। তাই নির্বাচনের আগে গণভোট হওয়া জরুরি। নির্বাচন ও গণভোট একই দিনে হলে ভোট প্রক্রিয়া দীর্ঘায়িত হওয়ার ঝুঁকি থাকবে।”
নির্বাচনকালীন প্রশাসনের নিরপেক্ষতা রক্ষায় প্রধান উপদেষ্টার প্রতি পূর্ণ আস্থা প্রকাশ করে জামায়াত নেতারা বলেন, সরকারের গৃহীত পদক্ষেপগুলো গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া পুনরুদ্ধারে সহায়ক হবে।
প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস তাদের আশ্বস্ত করে বলেন, “নির্বাচনের আগে প্রশাসনের যেকোনো পরিবর্তন বা রদবদল আমি নিজেই তদারকি করব। নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সমন্বয়ে আমরা নিরপেক্ষ পরিবেশ নিশ্চিত করব।”
বৈঠক শেষে এনসিপি ও জামায়াত উভয় দলই জানান, সরকারের সদিচ্ছা ও প্রস্তুতির ফলে নির্বাচনের প্রতি জনগণের আস্থা ফিরছে।
প্রধান উপদেষ্টার দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, আগামী সপ্তাহে আরও কয়েকটি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে অনুরূপ বৈঠক করবেন অধ্যাপক ইউনূস, যাতে নির্বাচনের আগে জাতীয় ঐকমত্য গঠনের উদ্যোগ আরও সুদৃঢ় হয়।
বাংলাধারা/এসআর