চিকিৎসায় নোবেল পেলেন তিন বিজ্ঞানী, ইমিউন টলারেন্স গবেষণায় অনন্য অবদান
প্রকাশিত: অক্টোবর ০৬, ২০২৫, ০৪:৩৫ দুপুর

ছবি: সংগৃহিত
চিকিৎসাবিদ্যায় অনবদ্য অবদান রাখার জন্য চলতি বছরের নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন তিন চিকিৎসাবিজ্ঞানী- মেরি ই. ব্রাঙ্কো, ফ্রেড রামসডেল এবং শিমন সাকাগুচি। সোমবার (৬ অক্টোবর) বাংলাদেশ সময় বিকেল সাড়ে ৩টায় সুইডেনের স্টকহোম থেকে ক্যারোলিনস্কা ইনস্টিটিউট আনুষ্ঠানিকভাবে ২০২৫ সালের চিকিৎসাবিজ্ঞানে নোবেল বিজয়ীদের নাম ঘোষণা করে।
তাদের পুরস্কৃত করা হয়েছে মানবদেহের পেরিফেরাল ইমিউন টলারেন্স প্রক্রিয়া নিয়ে যুগান্তকারী গবেষণার জন্য। ইমিউন সিস্টেমের কাজ হলো শরীরকে বাইরের জীবাণু ও ভাইরাস থেকে রক্ষা করা। কিন্তু কখনও কখনও এটি ভুলবশত নিজের শরীরের টিস্যুকেই আক্রমণ করে বসে, যার ফলে সৃষ্টি হয় অটোইমিউন রোগ।
দীর্ঘদিন ধরে বিজ্ঞানীরা কেন্দ্রীয় সহনশীলতা বা সেন্ট্রাল টলারেন্স প্রক্রিয়া নিয়ে গবেষণা করে আসছিলেন। এতে থাইমাসে টি-সেল গঠনের সময় শরীরের নিজের উপাদানের বিরুদ্ধে প্রতিক্রিয়া দেখানো কোষগুলো ধ্বংস হয়ে যায়। কিন্তু সব কোষ ধ্বংস হয় না; কিছু সেলফ-রিঅ্যাক্টিভ টি-সেল শরীরে থেকে যায়। এগুলোকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে কাজ করে আরেকটি প্রক্রিয়া, পেরিফেরাল ইমিউন টলারেন্স।
চলতি বছরের নোবেলজয়ীরা এই প্রক্রিয়ার মূল রহস্য উন্মোচন করেছেন। তাদের গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে, রেগুলেটরি টি-সেল (Treg) নামের বিশেষ কোষ এই কাজ করে এবং এর বিকাশ নিয়ন্ত্রণ করে FOXP3 জিন।
শিমন সাকাগুচি ১৯৯০-এর দশকে প্রথম দেখান যে মানবদেহে এমন বিশেষ টি-সেল আছে, যা শরীরকে নিজের টিস্যুর বিরুদ্ধে অপ্রয়োজনীয় আক্রমণ থেকে রক্ষা করে।
পরে মেরি ই. ব্রাঙ্কো ও ফ্রেড র্যামসডেল প্রমাণ করেন, ইঁদুর ও মানুষের শরীরে FOXP3 জিনে ত্রুটি দেখা দিলে এই টি-সেলের কার্যকারিতা নষ্ট হয়ে যায়।
ফলে, FOXP3 জিনকে এখন পেরিফেরাল ইমিউন টলারেন্সের ভিত্তি হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
এই আবিষ্কারের ফলে চিকিৎসক ও বিজ্ঞানীরা আরও ভালোভাবে বুঝতে পারছেন অটোইমিউন রোগ কেন হয়, কীভাবে ক্যানসার কোষ ইমিউন সিস্টেমকে এড়িয়ে যায় এবং কীভাবে এই জটিল রোগগুলোর চিকিৎসা আরও কার্যকর করা সম্ভব।
তিন বিজ্ঞানীকে নোবেল মেডেল ও সনদপত্রের পাশাপাশি দেওয়া হবে ১ কোটি ১০ লাখ সুইডিশ ক্রোনা। এর মাধ্যমে তারা মানবদেহের ইমিউন সিস্টেম বোঝার ক্ষেত্রে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করলেন বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
প্রসঙ্গত, ১৯০১ সাল থেকে শুরু হওয়া নোবেল পুরস্কার বিশ্বের সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ স্বীকৃতি। সুইডিশ বিজ্ঞানী আলফ্রেড নোবেলের নামে এ পুরস্কার চালু হয়। তার উইল অনুযায়ী পদার্থবিদ্যা, রসায়ন, চিকিৎসা, সাহিত্য ও শান্তি,এই পাঁচ খাতে নোবেল দেওয়া হয়। পরে ১৯৬৯ সালে অর্থনীতিও যুক্ত হয় তালিকায়।
গত বছর চিকিৎসায় নোবেল পান মার্কিন বিজ্ঞানী ভিক্টর অ্যামব্রোস ও গ্যারি রাভকুন, মাইক্রো-আরএনএ আবিষ্কার এবং জিন নিয়ন্ত্রণ গবেষণায় অবদানের জন্য।
আগামীকাল মঙ্গলবার বাংলাদেশ সময় বিকেল সাড়ে ৩টায় রয়্যাল সুইডিশ অ্যাকাডেমি অব সায়েন্স ঘোষণা করবে পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল বিজয়ীদের নাম।
বাংলাধারা/এসআর