ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ৩১ জুলাই ২০২৫, ১৬ শ্রাবণ ১৪৩২

অতিমিষ্টি খাওয়া ছাড়াও, দৈনন্দিন কিছু অভ্যাসের কারণে বাড়তে পারে ডায়াবেটিসের ঝুঁকি

নিজস্ব প্রতিবেদক

 প্রকাশিত: জুলাই ৩০, ২০২৫, ০৪:৫৬ দুপুর  

ছবি: সংগৃহিত

আজকের দিনে ডায়াবেটিস রোগ অনেকটাই সাধারণ হয়ে উঠেছে। প্রায় প্রতিটি পরিবারের কারো না কারো ক্ষেত্রে দেখা যায় এই সমস্যা। তবু অনেকের মধ্যেই ডায়াবেটিস সম্পর্কে সঠিক ধারণা নেই। অধিকাংশ মানুষ মনে করে রক্তে শর্করার মাত্রা বৃদ্ধির কারণ শুধু অতিরিক্ত মিষ্টি খাওয়া বা নিয়ন্ত্রণহীন খাদ্যাভ্যাসই। কিন্তু ডাক্তার ও বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, মিষ্টি খাওয়া ছাড়াও এমন অনেক দৈনন্দিন অভ্যাস আছে, যা সরাসরি না হলেও রক্তে সুগারের মাত্রা বাড়িয়ে দিতে পারে। বিশেষ করে যারা ডায়াবেটিসে আক্রান্ত, তাদের জন্য এই বিষয়গুলো সতর্কতার সঙ্গে মেনে চলা জরুরি। চলুন জেনে নেওয়া যাক সেসব কারণ-

মানসিক চাপ ও উদ্বেগ:

চাপ, উদ্বেগ বা মানসিক টেনশন হলে শরীরে কর্টিসল ও অ্যাড্রেনালিন নামক হরমোনের পরিমাণ বেড়ে যায়। এই হরমোনগুলো শরীরকে উত্তেজিত করে এবং যকৃত থেকে গ্লুকোজ নিঃসরণ বাড়ায়, যার ফলে রক্তে সুগারের মাত্রা বাড়ে। দীর্ঘমেয়াদী মানসিক চাপ হলে এই উচ্চমাত্রা স্থায়ী হয়ে যেতে পারে।

অনিদ্রা ও ঘুমের অভাব:

পর্যাপ্ত ঘুম না হলে দেহের ইনসুলিনের প্রতি সংবেদনশীলতা কমে যায়। এর ফলে শরীর ইনসুলিন সঠিকভাবে ব্যবহার করতে পারে না এবং রক্তে গ্লুকোজ জমতে থাকে। যারা দিনে ৬ ঘণ্টার কম ঘুমান, তাদের মধ্যে টাইপ-২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকি অনেক বেশি থাকে।

সংক্রমণ বা ইনফেকশন:

যেকোনো সংক্রমণ যেমন সর্দি-কাশি বা ইউরিনারি ট্র্যাক্ট ইনফেকশন শরীরের স্ট্রেস হরমোনের পরিমাণ বৃদ্ধি করে, যা রক্তে সুগার বাড়িয়ে দেয়। তাই ডায়াবেটিক রোগীদের মধ্যে সংক্রমণের সময় রক্তের শর্করার পরিমাণ হঠাৎ করে বেড়ে যেতে পারে।

কিছু ওষুধের প্রভাব:

স্টেরয়েড জাতীয় ওষুধ (যেমন প্রেডনিসোলন), কিছু অ্যান্টি-সাইকোটিক ও জন্মনিয়ন্ত্রণের পিল ইনসুলিনের কার্যকারিতা কমিয়ে দিতে পারে। এর ফলে রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা বাড়তে পারে। তাই চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া এসব ওষুধ গ্রহণ করা ঝুঁকিপূর্ণ।

শরীরচর্চার অভাব:

শরীরচর্চা করলে রক্তের গ্লুকোজ পেশিগুলোতে শোষিত হয়, যা রক্তে সুগারের মাত্রা কমাতে সাহায্য করে। কিন্তু যারা অধিক সময় বসে থাকে, বিশেষ করে অফিসে কাজ করা মানুষ, তাদের দেহে ইনসুলিনের প্রভাব কমে যায়। ফলে খাবার ঠিকমতো হজম হলেও রক্তে গ্লুকোজ জমতে থাকে।

ধূমপান ও অতিরিক্ত অ্যালকোহল গ্রহণ:

ধূমপান ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স বাড়ায়। আর অতিরিক্ত মদ্যপান প্রথমদিকে রক্তের সুগার কমিয়ে দিতে পারে, কিন্তু পরে তা হঠাৎ করে বেড়ে যায়।

সুতরাং ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করতে চাইলে শুধুমাত্র খাদ্যাভ্যাস নিয়ন্ত্রণ করাই যথেষ্ট নয়। আমাদের দৈনন্দিন জীবনযাপন, মানসিক অবস্থা, ঘুমের পরিমাণ, শরীরচর্চা এবং ওষুধ ব্যবহারের বিষয়গুলোও সুগার নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। একটি সুশৃঙ্খল, পরিপূর্ণ জীবনধারা হতে পারে ডায়াবেটিসের সঠিক চিকিৎসার চাবিকাঠি।

বাংলাধারা/এসআর