ঢাকা, শনিবার, ০২ আগস্ট ২০২৫, ১৮ শ্রাবণ ১৪৩২

কয়লার দাম নিয়ে জটিলতা, আলোচনায় বসছে পিডিবি ও আদানি

নিজস্ব প্রতিবেদক

 প্রকাশিত: মে ০৩, ২০২৫, ১১:৪৭ দুপুর  

ছবি: সংগৃহিত

ভারতের আদানি গ্রুপের কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ কেনার ক্ষেত্রে কয়লার মূল্য নির্ধারণ নিয়ে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) ও আদানির মধ্যে মতবিরোধ দেখা দিয়েছে। আন্তর্জাতিক সূচকের গড় মূল্য ধরে কয়লার দাম নির্ধারণ করায় আদানির বিল তুলনামূলকভাবে বেশি পড়ছে বলে অভিযোগ করছে পিডিবি। বিষয়টি সমাধানে দুই প্রতিষ্ঠানের মধ্যে শিগগিরই একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক হতে যাচ্ছে।

বিদ্যুৎ বিভাগ সূত্র জানায়, আদানি গ্রুপ নিজস্ব খনি থেকে কয়লা সরবরাহ করলেও তারা আন্তর্জাতিক বাজারের দুইটি সূচকের উন্নতমানের কয়লার গড় মূল্য ধরে দাম নির্ধারণ করে। এতে পিডিবির মতে, ব্যবহৃত কয়লার প্রকৃত দামের চেয়ে প্রতি টনে ২০ থেকে ২৫ ডলার পর্যন্ত বেশি দাবি করছে আদানি। বিপরীতে, পায়রা ও রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের ক্ষেত্রে কয়লা কেনা হয় দীর্ঘমেয়াদি চুক্তির মাধ্যমে, যেখানে ২০ থেকে ৪০ শতাংশ পর্যন্ত ছাড় পাওয়া যায়। সেই সুবিধা আদানির সঙ্গে চুক্তিতে নেই।

পিডিবির একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, “পায়রা ও রামপাল কয়লা আমদানির সময় আন্তর্জাতিক বাজারে দরদাম করে ছাড় নিয়ে আসে। কিন্তু আদানির চুক্তিতে ছাড়ের কোনো ধারা নেই। তারা একতরফাভাবে সূচকভিত্তিক দাম চায়, যা বাস্তব ব্যবহৃত কয়লার দামের সঙ্গে অনেক সময়ই সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।”

তিনি আরও জানান, অন্যান্য বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো কয়লার আমদানিকৃত প্রকৃত দামের ভিত্তিতে বিল করে। কিন্তু আদানি নিজস্ব সূত্রে কয়লা সরবরাহ করায় তাদের মূল্য নির্ধারণে আন্তর্জাতিক সূচকের গড় ধরে দাম দাবি করে থাকে।

এই দ্বন্দ্বের পাশাপাশি আদানির বকেয়া বিল নিয়েও আলোচনা চলছে। জানা গেছে, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বিল পরিশোধে অনিয়মের কারণে আদানির পাওনা বেড়ে দুই বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছিল। তবে অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে মাসিক বিলের সঙ্গে পুরোনো বকেয়াও পরিশোধ শুরু করেছে। বার্তা সংস্থা রয়টার্সের বরাতে জানা যায়, বর্তমানে আদানির বকেয়া নেমে এসেছে ৯০০ মিলিয়ন ডলারে। যদিও পিডিবি চেয়ারম্যান রেজাউল করিম এই অঙ্কের সঙ্গে একমত নন।

তিনি বলেন, “আমাদের হিসাবে বকেয়া ৯০০ মিলিয়ন ডলার নয়। তবে বর্তমান পরিমাণ নির্দিষ্টভাবে এখনই বলা সম্ভব নয়। আদানির কয়লার দাম নির্ধারণ নিয়ে আমাদের আপত্তি আছে। আমরা বাস্তব আমদানি করা দামের ভিত্তিতে বিল পরিশোধ করি। কিন্তু আদানি সূচকভিত্তিক গড় মূল্য ধরে। এতে মূল্যবিভ্রাট তৈরি হয়।”

তিনি জানান, আদানি আলোচনার জন্য চিঠি দিয়েছে এবং দ্রুতই দুই পক্ষ বসবে। “এক বৈঠকে সমস্যার পুরোপুরি সমাধান নাও হতে পারে। তবে ধারাবাহিক আলোচনার মাধ্যমে সমাধানে পৌঁছাতে চাই,” বলেন তিনি।

উল্লেখ্য, ২০১৭ সালে ভারতের ঝাড়খণ্ডের গোড্ডা জেলায় আদানি গ্রুপের ১ হাজার ৪৯৮ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের অনুমতি দেয় বাংলাদেশ সরকার। একই বছর আদানির সঙ্গে ২৫ বছরের জন্য বিদ্যুৎ কেনার চুক্তি করে পিডিবি। চুক্তি অনুযায়ী, এই কেন্দ্র থেকে বাংলাদেশে বিদ্যুৎ রপ্তানি করা হচ্ছে।

কয়লার মূল্য নিয়ে এই বিরোধ না শুধুমাত্র আর্থিক দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ, বরং এটি বাংলাদেশ-ভারতের দ্বিপাক্ষিক অর্থনৈতিক সম্পর্কেও নতুন চাপ তৈরি করছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।


বাংলাধারা/এসআর