বিচার ও সংস্কার- দুটি অগ্রাধিকারই সামনে রেখে এগোচ্ছে বিএনপি
প্রকাশিত: জুন ১৬, ২০২৫, ১১:২২ দুপুর

জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের এক গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। বৈঠকে শুধু নির্বাচনের সময়সূচি নয়, বরং আওয়ামী লীগের শাসনামলের সময় ঘটে যাওয়া গুম, খুন, অর্থ পাচারসহ নানা অনিয়মের বিচার এবং রাষ্ট্র সংস্কার নিয়েও বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে।
বিএনপি নেতারা বৈঠকে স্পষ্ট করেছেন- বিচার ও সংস্কার এই দুটি প্রক্রিয়াই তারা গুরুত্বের সঙ্গে দেখছেন এবং গণঅভ্যুত্থান-পরবর্তী সরকারের এ সংক্রান্ত উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে সব ধরনের সহযোগিতা করছে দলটি।
বৈঠকে উপস্থিত সূত্র জানায়, আলোচনার প্রথম পর্বে দুই পক্ষের প্রতিনিধি দল অংশ নিলেও পরবর্তী পর্বে তারেক রহমান ও ড. ইউনূস একান্তে বিচার ও সংস্কার নিয়ে গভীর আলোচনা করেন। সেখানে বিএনপির পক্ষ থেকে জানানো হয়, চলমান সংস্কার কার্যক্রমকে তারা রাজনৈতিক ঐকমত্যের ভিত্তিতে এগিয়ে নিতে আগ্রহী এবং এজন্য ‘ঐকমত্য কমিশন’কে গুরুত্বসহকারে মতামত ও প্রস্তাব দিচ্ছে।
বিএনপি জানিয়েছে, যেসব সংস্কার বর্তমান সরকার বাস্তবায়ন করতে পারবে, সেগুলো তাৎক্ষণিকভাবে শেষ করা উচিত। আর যেসব সংস্কার নতুন নির্বাচিত সরকারের হাতে থাকবে, সেগুলো ভবিষ্যতে যথাযথভাবে বাস্তবায়নের জন্য রাজনৈতিক ঐকমত্য বজায় রাখতে হবে।
বিচার প্রক্রিয়া নিয়ে বিএনপির অবস্থান হলো- এটি যেন স্বাধীন ও নিরপেক্ষভাবে পরিচালিত হয়। দলটি মনে করে, কোনো আলটিমেটাম বা সময়সীমা নির্ধারণ করে বিচার কার্যক্রম চাপিয়ে দেওয়া উচিত নয়। বরং বিচার বিভাগকেই পূর্ণ স্বাধীনতা দিয়ে, প্রয়োজনে ট্রাইব্যুনালের সংখ্যা ও লোকবল বাড়িয়ে বিচার ত্বরান্বিত করা যেতে পারে। তারা আশা প্রকাশ করেছে, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের আমলেই কিছু গুরুত্বপূর্ণ মামলার নিষ্পত্তি সম্ভব হবে।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের পররাষ্ট্রবিষয়ক উপদেষ্টা হুমায়ুন কবির বলেন, “নির্বাচনের সময় নিয়ে আলোচনা প্রধানত হলেও বিচার ও সংস্কার বিষয়ে দলের অবস্থান পরিষ্কার করা হয়েছে। বিএনপি ইতোমধ্যে যে ৩১ দফা রাষ্ট্র সংস্কার প্রস্তাব দিয়েছে, তাতে আমাদের আন্তরিকতার প্রমাণ রয়েছে।”
তিনি আরও বলেন, “একান্ত বৈঠকে তারেক রহমান ড. ইউনূসকে আশ্বস্ত করেছেন যে, সামনে যে সংস্কারই জনগণের জন্য কল্যাণকর মনে হবে, বিএনপি সেটিই গ্রহণ করবে। সংলাপ অব্যাহত থাকবে এবং ভবিষ্যতে আরও খোলামেলা আলোচনা হবে।”
লন্ডন বৈঠকের প্রথম ভাগে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। তিনি বলেন, “আওয়ামী লীগের শাসনামলের গুম, খুন, দুর্নীতি, অর্থ পাচারের বিচার নিয়ে কোনো আপস নয়। বর্তমান সরকারকে এ ব্যাপারে সহযোগিতা করবে বিএনপি। আর বিএনপি যদি জনগণের ভোটে রাষ্ট্রক্ষমতায় আসে, তখন এই বিচারের কাজ সম্পূর্ণ করা হবে।”
তিনি বলেন, “ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শহীদদের হত্যার বিচার নিশ্চিত করাও বিএনপির অঙ্গীকার। এজন্য দায়ীদের আইনের আওতায় আনা হবে।”
রাষ্ট্র সংস্কার প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, “প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান রাষ্ট্র সংস্কার বিষয়ে দলের অবস্থান আবারও স্পষ্ট করেছেন। বর্তমান সরকার যেসব সংস্কার উদ্যোগ নিয়েছে, সেগুলো রাজনৈতিক ঐকমত্যের ভিত্তিতে বাস্তবায়ন হলে বিএনপির সমর্থন থাকবে।”
লন্ডন বৈঠকের মাধ্যমে একটি বিষয় স্পষ্ট হয়েছে- বিএনপি সংস্কারকে নির্বাচনের আগে কিংবা পরে আলাদা করে দেখছে না। বরং তারা চাইছে, দুই প্রক্রিয়াই একসঙ্গে, ধারাবাহিকভাবে চলুক। এ আলোচনার মধ্য দিয়ে "সংস্কার আগে না নির্বাচন আগে"- এই বিতর্কও কিছুটা প্রশমিত হয়েছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এই বৈঠক শুধু একটি কূটনৈতিক যোগাযোগ নয়; এটি বিচার ও সংস্কার প্রক্রিয়াকে একত্রে অগ্রসর করার একটি সমন্বিত পদক্ষেপ। এবং যদি এই ধারা বজায় থাকে, তাহলে অন্তর্বর্তী সরকারের কার্যক্রম এবং ভবিষ্যৎ নির্বাচনী ব্যবস্থার ওপর জনগণের আস্থা আরও দৃঢ় হতে পারে।
বাংলাধারা/এসআর