তুরস্কের ভয়াবহ ভূমিকম্পে ব্যর্থ গুগলের সতর্কতা ব্যবস্থা
প্রকাশিত: জুলাই ২৮, ২০২৫, ১০:৪০ দুপুর

ছবি: সংগৃহিত
২০২৩ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি তুরস্কে আঘাত হানা ভয়াবহ ভূমিকম্পের সময় গুগলের অ্যান্ড্রয়েড সতর্কতা ব্যবস্থা কার্যকর ভূমিকা রাখতে ব্যর্থ হয়েছিল। বৈশ্বিক এই টেক জায়ান্ট প্রতিষ্ঠানটি এ ব্যর্থতার বিষয়টি স্বীকার করেছে। ভয়াবহ ওই ভূমিকম্পে অর্ধলক্ষাধিক মানুষের মৃত্যু হয় এবং লাখো মানুষ আহত হন।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, ভূমিকম্পের কেন্দ্র থেকে ১৫৮ কিলোমিটার ব্যাসার্ধের অন্তত ১ কোটি মানুষকে ‘টেক অ্যাকশন’ সতর্কতা পাঠানো সম্ভব ছিল। এতে মানুষ প্রায় ৩৫ সেকেন্ড আগেই নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে পারত। কিন্তু বাস্তবে প্রথম ভূমিকম্পের সময় মাত্র ৪৬৯ জন ব্যবহারকারী এমন সতর্কতা পেয়েছিলেন। এছাড়া প্রায় পাঁচ লাখ ব্যবহারকারী হালকা কম্পনের ‘বি অ্যাওয়ার’ সতর্কবার্তা পান, যা ফোনের স্ক্রিনে তেমনভাবে চোখে পড়ে না এবং জরুরি সাউন্ডও বাজায় না।
ভূমিকম্পের সময় গুগল আগে দাবি করেছিল যে তাদের সতর্কতা ব্যবস্থা “ভালো কাজ করেছে।” অথচ অ্যান্ড্রয়েড চালিত ফোন ব্যবহারকারীর সংখ্যা তুরস্কে ৭০ শতাংশের বেশি হলেও অধিকাংশ মানুষ কোনো সতর্কতা পাননি। স্থানীয় সময় ভোর ৪টা ১৭ মিনিটে প্রথম ভূমিকম্প আঘাত হানে, যখন অধিকাংশ মানুষ ঘুমিয়ে ছিলেন। কেবল উচ্চস্বরের ‘টেক অ্যাকশন’ বার্তাই তখন মানুষকে জাগাতে পারত।
গুগলের গবেষণাপত্রে জানানো হয়, প্রথম ভূমিকম্পের সময় সিস্টেমটি প্রকৃত ৭.৮ মাত্রার কম্পনকে ভুলভাবে ৪.৫ থেকে ৪.৯ মাত্রা হিসেবে শনাক্ত করেছিল। দ্বিতীয় ভূমিকম্পের সময় কিছুটা ভালো কাজ করলেও তখনও মাত্র ৮ হাজার ১৫৮ জনকে ‘টেক অ্যাকশন’ বার্তা পাঠানো হয় এবং প্রায় ৪০ লাখ মানুষ পান ‘বি অ্যাওয়ার’ সতর্কতা। পরবর্তীতে অ্যালগরিদমের পরিবর্তন আনার পর গুগল নতুন সিমুলেশন চালিয়ে দেখে, সেই আপডেট সংস্করণ হলে ১ কোটি মানুষকে ‘টেক অ্যাকশন’ সতর্কবার্তা এবং আরও ৬ কোটি ৭০ লাখ মানুষকে ‘বি অ্যাওয়ার’ বার্তা পাঠানো সম্ভব হতো।
কলোরাডো স্কুল অব মাইনসের সহকারী অধ্যাপক এলিজাবেথ রেড্ডি এই বিলম্বিত তথ্য প্রকাশের সমালোচনা করে বলেন, দুই বছরের বেশি সময় পরে তথ্য প্রকাশ হতাশাজনক। প্যাসিফিক নর্থওয়েস্ট সিসমিক নেটওয়ার্কের পরিচালক হ্যারল্ড টোবিনও বলেন, গুগলের সতর্কতা ব্যবস্থা নিয়ে স্বচ্ছ তথ্য প্রকাশ অত্যন্ত জরুরি।
গুগল জানায়, তাদের অ্যান্ড্রয়েড আর্থকুয়াক অ্যালার্টস বর্তমানে ৯৮টি দেশে চালু আছে। তবে এটি কোনো দেশের জাতীয় সতর্কতা ব্যবস্থার বিকল্প নয়, বরং একটি সম্পূরক ব্যবস্থা। বিবিসি গুগলের কাছে ২০২৫ সালের মিয়ানমার ভূমিকম্পে এই প্রযুক্তি কতটা কার্যকর ছিল তা জানতে চাইলেও এখনও কোনো উত্তর মেলেনি।
বাংলাধারা/এসআর