যুক্তরাষ্ট্রে পাল্টা শুল্ক কমিয়ে ২০ শতাংশ, স্বস্তিতে রপ্তানি খাত
প্রকাশিত: আগস্ট ০২, ২০২৫, ১০:২১ দুপুর

ছবি: সংগৃহিত
যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের রপ্তানি পণ্যের ওপর আরোপিত পাল্টা শুল্ক ৩৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২০ শতাংশ করেছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের এক নির্বাহী আদেশে এই সিদ্ধান্ত জানানো হয়, যা হোয়াইট হাউসের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়েছে।
এই ঘোষণায় কিছুটা স্বস্তি ফিরে পেয়েছে দেশের রপ্তানি খাত। ব্যবসায়ীদের মতে, প্রতিদ্বন্দ্বী দেশগুলোর তুলনায় বাংলাদেশ এখন একটি তুলনামূলক প্রতিযোগিতামূলক অবস্থানে রয়েছে।
এর আগে ২ এপ্রিল যুক্তরাষ্ট্র ৩৭ শতাংশ পাল্টা শুল্ক আরোপ করে, যা পরে কমিয়ে ৩৫ শতাংশে নামানো হয়। ৩১ জুলাইয়ের মধ্যে আলোচনার মাধ্যমে নতুন সিদ্ধান্ত কার্যকরের সুযোগ দিয়েছিল ওয়াশিংটন। সে অনুযায়ী বাংলাদেশ সরকারের প্রতিনিধিদল যুক্তরাষ্ট্রে উচ্চ পর্যায়ের আলোচনায় অংশ নেয়।
উচ্চ পর্যায়ের আলোচনায় অর্জিত ফলাফল
বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশির উদ্দিনের নেতৃত্বে যুক্তরাষ্ট্র সফরকারী বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলে ছিলেন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান, বাণিজ্য সচিব মাহবুবুর রহমান ও অতিরিক্ত সচিব নাজনীন কাউসার চৌধুরী। মার্কিন পক্ষের নেতৃত্বে ছিলেন ইউএসটিআরের সহকারী বাণিজ্য প্রতিনিধি ব্রেন্ডন লিঞ্চ।
আলোচনা শেষে হোয়াইট হাউস বাংলাদেশের ওপর নতুন ২০ শতাংশ পাল্টা শুল্কের ঘোষণা দেয়। এই হার কার্যকর হবে আদেশ জারির সাত দিন পর থেকে।
স্বস্তির মধ্যেও রয়েছে শর্তের চাপ
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শুল্ক হ্রাসের বিনিময়ে বাংলাদেশকে বেশ কিছু বাণিজ্যিক প্রতিশ্রুতি দিতে হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে-
* পাঁচ বছরে ৩৫ লাখ টন গম আমদানি,
* এলএনজি, তুলা, সয়াবিন তেল, চিকিৎসা সরঞ্জামসহ মার্কিন পণ্য দীর্ঘমেয়াদে কেনা,
* ২৫টি বোয়িং উড়োজাহাজ কেনার চুক্তি,
* চীনা সামরিক ও প্রযুক্তিপণ্য থেকে সরে আসা,
* মার্কিন নিয়ন্ত্রক সংস্থার অনুমোদন বাধ্যতামূলক করা।
বিশ্লেষকদের আশঙ্কা, এসব প্রতিশ্রুতির ফলে বাংলাদেশের নীতিনির্ধারণী স্বাধীনতা কিছুটা সংকুচিত হতে পারে এবং দেশি শিল্প খাত বিদেশি নিয়ন্ত্রণের ঝুঁকিতে পড়তে পারে।
বাজারে প্রভাব ফেলতে পারে নতুন শুল্ক
পাল্টা শুল্ক কার্যকর হলে মার্কিন আমদানিকারকদের মোট ৩৫ শতাংশ শুল্ক পরিশোধ করতে হবে, যার প্রভাব পড়বে পণ্যের দামে। আগে ১৫ ডলারে বিক্রি হওয়া একটি শার্ট এখন ১৭-১৮ ডলারেও বিক্রি হতে পারে। এতে বাজারে বিক্রি কমার শঙ্কা রয়েছে বলে মনে করছেন রপ্তানিকারকেরা।
বাণিজ্য খাতের প্রতিক্রিয়া
বিজিএমইএ সভাপতি মাহমুদ হাসান খান বলেন, "প্রতিযোগী দেশগুলোর তুলনায় আমাদের অবস্থান এখন কিছুটা ভালো। যদিও নতুন শুল্কে বায়ারদের খরচ বাড়বে, তারপরও আমরা এই ধাক্কা মোকাবিলা করতে পারব।"
বিকেএমইএর সাবেক সভাপতি ফজলুল হক বলেন, "মার্কিন শুল্ক হ্রাস দেশের রপ্তানি খাতের জন্য বড় সুখবর। তবে বায়াররা দাম কমাতে চাপ দিতে পারেন, তাই প্রস্তুত থাকতে হবে।"
সরকার বলছে, রপ্তানি বাধাগ্রস্ত হবে না
বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশির উদ্দিন বলেছেন, "বাংলাদেশ ২০ শতাংশ শুল্কের আওতায় থাকলেও রপ্তানিতে বড় কোনো প্রতিবন্ধকতা হবে না। আমাদের প্রতিযোগিতামূলক অবস্থান বজায় থাকবে।"
জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ড. খলিলুর রহমান বলেছেন, “সম্ভাব্য ৩৫ শতাংশ পাল্টা শুল্ক এড়াতে পারা বাংলাদেশের জন্য স্বস্তির বিষয়। বিশেষ করে তৈরি পোশাক খাত এবং এর সঙ্গে জড়িত লাখো মানুষের জন্য এটি ভালো বার্তা।”
বিশ্লেষকদের পরামর্শ: দরকার স্বচ্ছ কূটনীতি ও প্রস্তুতি
সানেমের নির্বাহী পরিচালক ড. সেলিম রায়হান মনে করেন, “শুল্ক কমানো স্বল্পমেয়াদে স্বস্তি দিলেও এর পেছনে কী প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে, তা জানা জরুরি। অনেক চুক্তি এখনো গোপনীয়তার আওতায়।”
সিপিডির মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, “শুল্ক কমাতে গিয়ে আমরা মেধাস্বত্ব, ট্রেড ইউনিয়ন কার্যকারিতা, খাদ্যপণ্য আমদানি ইত্যাদি বিষয়ে নানা প্রতিশ্রুতি দিয়েছি। এসব বাস্তবায়নে প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বাড়ানো প্রয়োজন।”
পলিসি এক্সচেঞ্জের চেয়ারম্যান মাশরুর রিয়াজ বলেন, “চীনের ওপর নির্ভরতা কমিয়ে ৪০ শতাংশ স্থানীয় মূল্য সংযোজন নিশ্চিত করতে হবে। তা না হলে দীর্ঘমেয়াদে রপ্তানিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।”
যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশি পণ্যের ওপর পাল্টা শুল্ক কমানো রপ্তানি খাতের জন্য ইতিবাচক হলেও এর সঙ্গে জড়িত নানা প্রতিশ্রুতি ও শর্ত ভবিষ্যতে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াতে পারে। এখন সময় নীতিনির্ধারণী প্রস্তুতি ও বাণিজ্য কূটনীতিতে স্বচ্ছতা বাড়ানোর।
বাংলাধারা/এসআর