বিএনপিতে ২০০ আসনে মনোনয়নপ্রত্যাশী দেড় হাজার
প্রকাশিত: আগস্ট ০৩, ২০২৫, ১০:০৩ দুপুর
_20250803100210_original_45.webp)
ছবি: সংগৃহিত
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে দলীয় প্রার্থী বাছাইয়ের প্রক্রিয়া শুরু করেছে বিএনপি। ৩০০ আসনের মধ্যে প্রায় ১০০ আসনে প্রার্থীদের নাম অনেকটাই চূড়ান্ত হলেও বাকি ২০০ আসনের জন্য মনোনয়নপ্রত্যাশীর সংখ্যা দেড় হাজার ছাড়িয়ে গেছে। দলটির হাইকমান্ডের নির্দেশে মাঠ পর্যায়ে শুরু হয়েছে তীব্র প্রতিযোগিতা ও প্রস্তুতি।
বিএনপি সূত্র জানায়, এবারের নির্বাচনে প্রার্থী নির্ধারণে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ নীতিমালা অনুসরণ করা হচ্ছে। দীর্ঘদিন দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত, ত্যাগী, সুশিক্ষিত এবং ক্লিন ইমেজের নেতাদের অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি দলের ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব গড়ে তোলার লক্ষ্যে ১০০ আসনে তরুণ নেতাদের অগ্রাধিকার দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। ২০১৮ সালের নির্বাচনে দলের হয়ে যারা প্রার্থী ছিলেন কিংবা মনোনয়ন চেয়েছিলেন, তাদের সঙ্গেও যোগাযোগ রাখা হচ্ছে।
দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান লন্ডন থেকে ভিডিও কনফারেন্স ও অন্যান্য মাধ্যমে সরাসরি তদারকি করছেন। দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের পাশাপাশি মাঠ পর্যায়ের ফিডব্যাক যাচাই করে তৈরি হচ্ছে সম্ভাব্য প্রার্থীদের তালিকা। মনোনয়নপ্রত্যাশীদের কেউ কেউ ইতোমধ্যেই তারেক রহমানের কাছ থেকে নির্দেশনা পেয়েছেন এলাকায় কাজ করার। এতে অনেকেই ধারণা করছেন, তারা কেন্দ্রীয়ভাবে ইতিবাচক ইঙ্গিত পেয়েছেন।
মনোনয়নপ্রত্যাশীরা এলাকায় গণসংযোগ, উঠান বৈঠক, মানবিক সহায়তা, ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক আয়োজনের মাধ্যমে নিজেদের উপস্থিতি জানান দিচ্ছেন। পাশাপাশি ঢাকায় কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ অব্যাহত রেখেছেন। অনেকে আবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও নিজেদের জনপ্রিয়তা তুলে ধরছেন।
বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, দলের সম্ভাব্য প্রার্থীরা সারা দেশের সব সংসদীয় আসনেই নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। বিএনপি আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য পুরোদমে প্রস্তুত। প্রার্থী নির্ধারণে দল এবার সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছে গ্রহণযোগ্যতা, ত্যাগ ও মাঠপর্যায়ের সক্রিয়তাকে।
তিনি বলেন, গত তিনটি জাতীয় নির্বাচনে দেশের মানুষ প্রকৃত ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেনি। এবার মানুষের মধ্যে নির্বাচন নিয়ে প্রবল আগ্রহ তৈরি হয়েছে। বিএনপিও সেই আগ্রহের প্রতিফলন ঘটাতে চায় যোগ্য প্রার্থীদের মাধ্যমে।
দলীয় সূত্রে আরও জানা যায়, লন্ডনে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সাম্প্রতিক বৈঠকে ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারির দ্বিতীয় সপ্তাহে নির্বাচন আয়োজনের বিষয়ে সমঝোতা হয়েছে। এই ঘোষণার পর থেকেই সারা দেশের সম্ভাব্য প্রার্থীরা নির্বাচনি প্রস্তুতি আরও জোরদার করেছেন।
প্রত্যেক সংসদীয় আসনে তিন থেকে পাঁচজন করে সম্ভাব্য প্রার্থীর নাম তালিকাভুক্ত করা হচ্ছে। যাচাই-বাছাই শেষে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর এসব তালিকা চূড়ান্ত করা হবে। এরপর সমমনা দলগুলোর সঙ্গে আসন ভাগাভাগি নিয়ে আলোচনা হবে। সমঝোতা না হলে ৩০০ আসনেই এককভাবে প্রার্থী দেওয়ার প্রস্তুতি রয়েছে দলের।
দলীয় হাইকমান্ড নির্বাচনি প্রস্তুতির অংশ হিসেবে বেশ কিছু শর্ত জারি করেছে। এর মধ্যে রয়েছে—যারা বিগত দেড় দশকের আন্দোলন-সংগ্রামে সক্রিয় ভূমিকা রেখেছেন, তাদের অগ্রাধিকার দেওয়া; প্রার্থীকে হতে হবে পরিচ্ছন্ন ভাবমূর্তির অধিকারী; সন্ত্রাস, দুর্নীতি বা চাঁদাবাজির অভিযোগ রয়েছে—এমন কাউকে প্রার্থী না করা।
২০১৮ সালের নির্বাচনে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশীর সংখ্যা ছিল প্রায় আড়াই হাজার। এবার সংখ্যা কিছুটা কম হলেও দেড় হাজারের বেশি নেতাকর্মী ২০০ আসনের জন্য দৌড়ঝাঁপ করছেন। নির্বাচনে অংশগ্রহণের বাস্তব সম্ভাবনা থাকায় দলীয় কর্মীদের মধ্যে নতুন করে আশাবাদ তৈরি হয়েছে। তাৎপর্যপূর্ণভাবে দলের অনেক নিষ্ক্রিয় নেতাও আবার সক্রিয় হয়ে উঠেছেন।
দলীয়ভাবে প্রার্থী বাছাই ও মাঠ প্রস্তুতি নিয়ে বিএনপি এখন স্পষ্ট ও কৌশলগত অবস্থানে রয়েছে। সবশেষ পরিস্থিতি এবং সম্ভাব্য জোটগত সমঝোতার উপর নির্ভর করেই দলীয় প্রার্থীদের তালিকা আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করা হবে বলে জানা গেছে।
বাংলাধারা/এসআর