বরগুনায় ডেঙ্গু আক্রান্ত ৫ হাজার ছাড়িয়েছে, গ্রামাঞ্চলে প্রকোপ বেশি
প্রকাশিত: আগস্ট ০৬, ২০২৫, ১২:১৩ দুপুর

ছবি: সংগৃহীত
বরগুনা জেলায় এ বছর ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা ৫ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। সরকারি হিসাবে এখন পর্যন্ত ছয়জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেলেও, বেসরকারি হিসাবে এ সংখ্যা ৩৯ জন। বিশেষজ্ঞদের মতে, শহরের তুলনায় বর্তমানে গ্রামে ডেঙ্গুর প্রকোপ বেশি। তবে এক মাস আগের তুলনায় আক্রান্তের হার কিছুটা কমছে বলে দাবি করছেন সংশ্লিষ্টরা।
জেলা সিভিল সার্জন অফিসের তথ্য অনুযায়ী, মঙ্গলবার সকাল ৮টা পর্যন্ত পূর্ববর্তী ২৪ ঘণ্টায় জেলায় নতুন করে ৬১ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এর মধ্যে বরগুনা জেনারেল হাসপাতালে ৪৬ জন, পাথরঘাটা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ১০ জন এবং বামনা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হয়েছেন পাঁচজন। বর্তমানে জেলার বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন ১৩৭ জন।
চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত বরগুনায় ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ১১১ জন। তবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ঢাকার কন্ট্রোল রুমের হিসাব অনুযায়ী, এ সংখ্যা ৪ হাজার ৯১২ জন।
সারাদেশের প্রেক্ষাপটে বরগুনার চিত্র উদ্বেগজনক। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছর দেশে মোট ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন ২২ হাজার ৩৮৪ জন। অর্থাৎ, দেশের মোট আক্রান্তের ২২ দশমিক ৮৩ শতাংশই বরগুনা জেলার বাসিন্দা। বরিশাল বিভাগের মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৮ হাজার ৩১৫, যার মধ্যে বরগুনা জেলার রোগী ৬১ দশমিক ৪৬ শতাংশ।
বর্তমানে সারাদেশে হাসপাতালে ভর্তি ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা ১ হাজার ২৫৯ জন। এর মধ্যে একাই বরগুনা জেলায় রয়েছেন ১৩৭ জন, অর্থাৎ মোট ভর্তিকৃত রোগীর প্রায় ১১ শতাংশই বরগুনার।
বরগুনা জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. তাসকিয়া সিদ্দিকা জানান, “এক মাস আগেও প্রতিদিন গড়ে ৮০ থেকে ১০০ জন নতুন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হতেন। তখন হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যা ২০০ থেকে ২৫০ জনে পৌঁছাত। বর্তমানে সে সংখ্যা অনেকটা কমে এসেছে, তবে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ডেঙ্গুর ঝুঁকি থাকবে।”
বরগুনার সিভিল সার্জন ডা. আবুল ফাতাহ বলেন, “জেলায় ডেঙ্গুর যে ভয়াবহ চিত্র দেখা দিয়েছিল, তা অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে এসেছে। এখন শহরের চেয়ে গ্রামে আক্রান্তের হার বেশি। গ্রামাঞ্চলের মানুষকে আরও সচেতন হতে হবে।”
তবে বরগুনা নাগরিক অধিকার ফোরামের সাধারণ সম্পাদক মনির হোসেন কামালের অভিযোগ, “শহরকেন্দ্রিক কিছু কার্যক্রম দেখা গেলেও গ্রামে কার্যত কোনো উদ্যোগ নেই। গ্রামাঞ্চলে সচেতনতামূলক কর্মসূচি জোরদার করার দাবি জানাই।”
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শফিউল আলম বলেন, “সবার সম্মিলিত চেষ্টায় বরগুনায় ডেঙ্গু পরিস্থিতি কিছুটা উন্নতির দিকে। তবে পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আনতে হলে জনগণকে আরও সচেতন হতে হবে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে সচেতনতা বৃদ্ধির নানা কার্যক্রম চলমান আছে।”
স্বাস্থ্য বিভাগের মতে, জনসচেতনতা, পরিচ্ছন্নতা এবং সমন্বিত উদ্যোগের মাধ্যমেই ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলে দ্রুত কার্যকর উদ্যোগ না নিলে পরিস্থিতি আবারও জটিল হয়ে উঠতে পারে।
বাংলাধারা/এসআর