ঢাকা, শনিবার, ১৮ অক্টোবর ২০২৫, ১ কার্তিক ১৪৩২

বাজার নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতা

মধ্যস্বত্বভোগীর কারসাজিতে ভোক্তা হাঁসফাঁস

নিজস্ব প্রতিবেদক

 প্রকাশিত: আগস্ট ২৩, ২০২৫, ১১:০৬ দুপুর  

ছবি: সংগৃহিত

অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর প্রথম কয়েক মাস নিত্যপণ্যের দাম ছিল সহনীয়। এমনকি গত রোজাতেও দ্রব্যমূল্যের উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধি দেখা যায়নি, যা সরকারের জন্য প্রশংসা বয়ে এনেছিল। কিন্তু সম্প্রতি বাজারে আবারও অস্বাভাবিকভাবে খাদ্যপণ্যের দাম বাড়তে শুরু করেছে। একটি গোয়েন্দা সংস্থার অনুসন্ধান প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই মূল্যবৃদ্ধির মূল কারণ মধ্যস্বত্বভোগীদের কারসাজি। তারা অতিরিক্ত মুনাফার লোভে বাজারে অস্থিরতা সৃষ্টি করছে এবং সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করারও চেষ্টা চালাচ্ছে।

গোয়েন্দাদের অনুসন্ধান বলছে, কৃষকের উৎপাদনমূল্য ও পরিবহন ব্যয় তুলনামূলক কম হলেও আড়তদার, দালাল ও কমিশনভোগীদের তৈরি জটিল ব্যবস্থার কারণে ঢাকার বাজারে পণ্যের দাম দ্বিগুণ থেকে তিনগুণ পর্যন্ত বেড়ে যায়। এতে কৃষক ন্যায্য দাম পান না, আবার ভোক্তাকেও বেশি দামে কিনতে হয়। সবজি, চাল, ডাল, পেঁয়াজসহ খাদ্যপণ্য সরবরাহের ১০টি গুরুত্বপূর্ণ রুটে যাত্রীবেশে ভ্রমণ করে গোয়েন্দারা তথ্য সংগ্রহ করেছেন। তাদের অনুসন্ধানে মহাসড়কে বড় ধরনের চাঁদাবাজির প্রমাণ না মিললেও ট্রাক ভাড়া ও বাজারে প্রবেশের সময় নানা খাতে অতিরিক্ত খরচ করতে হয়।

কারওয়ান বাজারে প্রবেশ করা মাত্রই ট্রাকপ্রতি সিটি করপোরেশনের ফি, পার্কিং চার্জ, বাজার খাজনা, দালালি, শ্রমিক ও সমিতির চাঁদাসহ বিভিন্ন খাতে টাকা গুনতে হয়। যদিও এসব খরচ তুলনামূলক কম, ব্যবসায়ীরা এটিকে দাম বাড়ানোর অজুহাত হিসেবে ব্যবহার করেন। আসল প্রভাবক হলো আড়তদার ও কমিশনভোগী মধ্যস্বত্বভোগীরা, যারা উৎপাদন ও খুচরা বাজারের মধ্যে অস্বাভাবিক ব্যবধান তৈরি করছে।

কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সহসভাপতি এস এম নাজের হোসেন মনে করেন, আড়তদার বা বেপারিরা কোনো উৎপাদন বা আমদানিতে জড়িত না থেকেও কমিশন খাচ্ছে। তারা এখন শুধু কমিশন এজেন্টে পরিণত হয়েছে। করপোরেট গ্রুপগুলো দাদন দিয়ে চাষাবাদ করাচ্ছে। তার অভিযোগ, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সবসময় ব্যবসায়ীদের স্বার্থ রক্ষা করে, ফলে ভোক্তাদের স্বার্থ উপেক্ষিত থেকে যায়। এ কারণে ভোক্তা সুরক্ষায় আলাদা মন্ত্রণালয়ের দাবি তুলেছিলেন তারা।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ে সাধারণ মানুষ ভীষণ ক্ষুব্ধ। বাজার নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হওয়ায় সরকারের ভাবমূর্তিও প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে। তাই রাজনৈতিক চাপ নয়, বরং মধ্যস্বত্বভোগী চক্রকে চিহ্নিত করে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি। প্রতিবেদনে সতর্ক করা হয়েছে। এই চক্র নিয়ন্ত্রণে আনা না গেলে বাজার কখনোই স্থিতিশীল হবে না। উৎপাদনকারী থেকে ভোক্তা, উভয়কেই বঞ্চিত করে বছরের পর বছর মুনাফা লুটে আসছে তারা, অথচ কোনো সরকারই এখনো পর্যন্ত কার্যকর পদক্ষেপ নিতে পারেনি।

বাংলাধারা/এসআর