ঢাকা, শনিবার, ১৮ অক্টোবর ২০২৫, ১ কার্তিক ১৪৩২

পাঁচ ব্যাংক একীভূতকরণে অগ্রগতি, ইউনিয়ন রাজি, সময় চাইলো এক্সিম

নিজস্ব প্রতিবেদক

 প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ০৪, ২০২৫, ১২:০৭ দুপুর  

ছবি: সংগৃহিত

দুর্বল অবস্থায় থাকা পাঁচ ইসলামী ব্যাংককে একীভূত করার উদ্যোগে এগোচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এরই মধ্যে ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের পর এবার ইউনিয়ন ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদও একীভূত হওয়ার বিষয়ে সম্মতি জানিয়েছে। তবে এক্সিম ব্যাংক জানিয়েছে, তারা নিজস্ব উদ্যোগে ঘুরে দাঁড়াতে চায় এবং এজন্য সময় প্রয়োজন।

বুধবার (৩ সেপ্টেম্বর) ইউনিয়ন ও এক্সিম ব্যাংকের সঙ্গে আলাদা বৈঠক করে বাংলাদেশ ব্যাংক। বৈঠকে গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর ভার্চুয়ালি যুক্ত ছিলেন। উপস্থিত ছিলেন চার ডেপুটি গভর্নর ও রেজল্যুশন বিভাগের কর্মকর্তারা। বৈঠকে ব্যাংক দুটির আর্থিক সূচক নিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক উপস্থাপনা দেয়। তথ্য অনুযায়ী, ইউনিয়ন ব্যাংকের ২৮ হাজার কোটি টাকার ঋণের ৯৮ শতাংশই খেলাপি, আর এক্সিম ব্যাংকের ৫২ হাজার কোটি টাকার ঋণের প্রায় অর্ধেক খেলাপি অবস্থায় রয়েছে।

ইউনিয়ন ব্যাংকের বৈঠকে চেয়ারম্যান এম ফরিদ উদ্দীন ও এমডি হুমায়ুন কবির অংশ নেন। অন্যদিকে এক্সিম ব্যাংকের পক্ষ থেকে উপস্থিত ছিলেন চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম স্বপন ও ভারপ্রাপ্ত এমডি আব্দুল আজিজ। বৈঠকে ইউনিয়ন ব্যাংক একীভূতকরণের বিষয়ে সম্মতি জানালেও এক্সিম ব্যাংক সময় চায় পুনর্গঠনের জন্য। এ সময় গভর্নর বলেন, “আমাদের আপনারা সহায়তা করেন।” উত্তরে এক্সিম চেয়ারম্যান বলেন, “স্যার, দোয়া করেন। আমরা ঘুরে দাঁড়াতে পারব।”

বৈঠক শেষে ইউনিয়ন ব্যাংকের চেয়ারম্যান ফরিদ উদ্দীন জানান, আমানতকারীরা নিয়মিত অর্থ তুলতে গিয়ে সমস্যায় পড়ছেন। তাই যত দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে, ততই ভালো। তিনি অভিযোগ করেন, ব্যাংক থেকে এস আলম গ্রুপ ২৮ হাজার কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে, তবে যাদের নামে ঋণ দেখানো হয়েছে তাদের খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। এছাড়া ১৭ হাজার কোটি টাকার জামানত দেখালেও এর প্রকৃত মূল্য এক হাজার কোটির কম।

অন্যদিকে এক্সিম ব্যাংকের চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম স্বপন বলেন, আর্থিক সূচক উন্নয়নে তারা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছেন। তবে বৈঠকে কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। সূত্র জানায়, এক্সিম ব্যাংক ঘুরে দাঁড়ানোর একটি পরিকল্পনা পেশ করলেও তা আরও পরিমার্জন করে আনতে বলা হয়েছে। বিশেষ করে আমানত ফেরত, খেলাপি ঋণ আদায়, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ধার (৮ হাজার ৫০০ কোটি টাকা) পরিশোধ এবং মূলধনের ঘাটতি মোকাবিলার সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা দিতে হবে। পরিকল্পনা বাস্তবসম্মত হলে সেটি বিবেচনা করা হবে।

এক্সিম ব্যাংকের এক কর্মকর্তা বলেন, ব্যাংকটি স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরতে অন্তত দুই বছর সময় লাগবে। তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক সেই সময় দেবে কিনা, সেটিই এখন বড় প্রশ্ন। তিনি আরও স্বীকার করেন, প্রতিবছর অডিট হওয়ার পরও সাবেক চেয়ারম্যান বিপুল অঙ্কের টাকা সরিয়ে নিয়েছেন, যার দায় এড়ানোর সুযোগ নেই।

উল্লেখ্য, আমানতকারীদের অর্থ ফেরত নিশ্চিত করে আর্থিক খাতে স্থিতিশীলতা ফেরাতে দুর্দশাগ্রস্ত পাঁচ ইসলামী ব্যাংককে একীভূত করে একটি ব্যাংক করার উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

বাংলাধারা/এসআর