প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ছুটি কমানোর পরিকল্পনা সরকারের
প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ০৭, ২০২৫, ০২:১৯ দুপুর

ছবি: সংগৃহিত
সরকারি ও বেসরকারি সব প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বার্ষিক ছুটির সংখ্যা কমানোর উদ্যোগ নিচ্ছে সরকার। রোববার (৭ সেপ্টেম্বর) আন্তর্জাতিক সাক্ষরতা দিবস উপলক্ষে সচিবালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার এ তথ্য জানান।
তিনি বলেন, বর্তমানে বছরে মাত্র ১৮০ দিন বিদ্যালয় খোলা থাকে। শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বেশি সময় কাটাতে এবং পাঠদানে কার্যকারিতা বাড়াতে অপ্রয়োজনীয় ছুটি কমানোর পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এ জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় যৌথভাবে কাজ করবে। পাশাপাশি শিক্ষকদের শিক্ষাবহির্ভূত কাজে সম্পৃক্ত না করার দিকেও গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।
বিধান রঞ্জন রায় আরও জানান, দেশে প্রায় ৩২ হাজার প্রতিষ্ঠানে প্রধান শিক্ষকের পদ শূন্য। দীর্ঘদিন ধরে মামলার কারণে পদোন্নতি আটকে থাকায় এই সংকট তৈরি হয়েছে। দ্রুত সমস্যা সমাধানে উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। নতুন নীতিমালা অনুযায়ী, ৮০ শতাংশ প্রধান শিক্ষক পদোন্নতির মাধ্যমে এবং ২০ শতাংশ সরাসরি নিয়োগের মাধ্যমে পূরণ করা হবে। পাশাপাশি শিক্ষকদের বদলি শতভাগ অনলাইনে করার ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস)-এর সর্বশেষ তথ্যে দেখা যায়, দেশে সাত বছর বা তার বেশি বয়সী জনগোষ্ঠীর মধ্যে সাক্ষরতার হার দাঁড়িয়েছে ৭৭ দশমিক ৯ শতাংশে। অর্থাৎ এখনো প্রায় ২২ দশমিক ১ শতাংশ মানুষ নিরক্ষর। এরা মূলত বিদ্যালয় বহির্ভূত বা ঝরে পড়া শিশু ও প্রাপ্তবয়স্ক নারী-পুরুষ।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব আবু তাহের মো. মাসুদ রানা সংবাদ সম্মেলনে বলেন, জাতিসংঘ ঘোষিত টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সাক্ষরতা অপরিহার্য। তিনি জানান, কেবল পড়তে-লিখতে পারাই সাক্ষরতা নয়, বরং মাতৃভাষায় অনুধাবন, গণনা, মৌখিক ও লিখিত যোগাযোগ এবং ডিজিটাল দক্ষতা অর্জনও সাক্ষরতার অংশ। মানবসম্পদ উন্নয়নে মৌলিক শিক্ষা, দক্ষতাভিত্তিক সাক্ষরতা, জীবনব্যাপী শিক্ষা এবং বাজারমুখী প্রশিক্ষণ জরুরি বলে তিনি উল্লেখ করেন।
উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা আইন-২০১৪ অনুযায়ী বিদ্যালয় বহির্ভূত শিশু ও প্রাপ্তবয়স্কদের শিক্ষা কার্যক্রম চলমান রয়েছে। ২০২৪ সালের শেষ নাগাদ উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা কর্মসূচির আওতায় ৬৩ জেলায় ২৫ হাজার ৮১৫টি শিখনকেন্দ্রে ৮ লাখ ২৫ হাজার শিক্ষার্থী ভর্তি হয়েছিল। এর মধ্যে প্রায় দুই লাখ ৪৬ হাজার শিক্ষার্থী মূল ধারার শিক্ষায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।
এছাড়া মৌলিক সাক্ষরতা প্রকল্পের মাধ্যমে ৬৪ জেলার ২৪৮টি উপজেলায় প্রায় ৪৪ লাখ ৬০ হাজার প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ সাক্ষরজ্ঞান অর্জন করেছে।
কক্সবাজারে চালু হওয়া একটি পাইলট প্রকল্পে ৬ হাজার ৮২৫ কিশোর-কিশোরীকে সাক্ষরতার পাশাপাশি ১৩টি পেশায় কারিগরি প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। ২০২৫ সালের জুনে এ প্রকল্প শেষ হওয়ার পর আরও ১৬ জেলায় সম্প্রসারণের উদ্যোগ নেওয়া হবে।
সার্বিকভাবে, সরকারের লক্ষ্য হলো প্রাথমিক শিক্ষায় মানোন্নয়ন, শিক্ষক সংকট নিরসন এবং শিক্ষা কার্যক্রমকে সময়োপযোগী করে তুলতে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা।
বাংলাধারা/এসআর