ঢাকা, শনিবার, ১৪ জুন ২০২৫, ৩১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

পলিটেকনিকে ভর্তিতে আসছে ভর্তি পরীক্ষা: মানোন্নয়নে নতুন পদক্ষেপ

নিজস্ব প্রতিবেদক

 প্রকাশিত: মে ২৬, ২০২৫, ০৬:০৪ বিকাল  

ছবি: সংগৃহিত

কারিগরি শিক্ষার মানোন্নয়নে বড় ধরনের পরিবর্তনের পথে হাঁটছে সরকার। দেশের সরকারি ও বেসরকারি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটসহ সকল কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি প্রক্রিয়ায় পরীক্ষা গ্রহণের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, আগামী শিক্ষাবর্ষ থেকেই এই নতুন নিয়ম কার্যকর হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

বর্তমানে এসএসসি পাস করলেই সরাসরি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে ভর্তি হওয়া সম্ভব। এই নিয়মে সুবিধার পাশাপাশি কিছু সমস্যাও দেখা দিচ্ছে। অনেক সময় ছাত্রছাত্রীরা সঠিকভাবে প্রস্তুত না হয়েই বা প্রকৃত আগ্রহ ছাড়াই ভর্তি হচ্ছে। এতে ক্লাসে উপস্থিতি কমে যাচ্ছে, কোর্স শেষ করার হার কমছে, এমনকি অনেক শিক্ষার্থী মাঝপথেই অধ্যয়ন ছেড়ে দিচ্ছে। ফলে কারিগরি শিক্ষার মান ও সুনাম প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে।

এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের লক্ষ্যেই শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগ এবার নতুন উদ্যোগ নিতে যাচ্ছে।

কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের সচিব ড. খ ম কবিরুল ইসলাম জানিয়েছেন, শিক্ষার্থীদের যোগ্যতা যাচাই করে ভর্তির ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে একটি পূর্ণাঙ্গ ভর্তি পরীক্ষা চালুর পরিকল্পনা রয়েছে। তার ভাষায়, “শুধু এসএসসি পাস করলেই হবে না, এখন থেকে শিক্ষার্থীদের প্রস্তুতি ও দক্ষতার ভিত্তিতে ভর্তি নিশ্চিত করা হবে, যাতে তারা ভবিষ্যতে সুশিক্ষিত ও দক্ষ কারিগরি জনশক্তি হিসেবে গড়ে উঠতে পারে।”

তিনি আরও বলেন, “ভর্তির জন্য ১০০ নম্বরের মূল্যায়ন পদ্ধতি থাকবে, যার মধ্যে ৭০ নম্বরের এমসিকিউ (বহুনির্বাচনী প্রশ্ন) পরীক্ষার মাধ্যমে নেওয়া হবে, আর বাকি ৩০ নম্বর বিবেচনা করা হবে শিক্ষার্থীর একাডেমিক যোগ্যতার ওপর ভিত্তি করে।”

বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই উদ্যোগের মাধ্যমে কারিগরি শিক্ষায় শৃঙ্খলা ফিরে আসবে এবং আগ্রহী ও দক্ষ শিক্ষার্থীদের একটি যোগ্য ব্যাচ তৈরি করা সম্ভব হবে। পাশাপাশি কোর্স সম্পন্নের হার বাড়বে এবং পাসের হারেও ইতিবাচক প্রভাব পড়বে।

কারিগরি শিক্ষার গুণগত মান বাড়লে শিল্প, গার্মেন্টস, তথ্যপ্রযুক্তি, নির্মাণসহ দেশের বিভিন্ন খাতে দক্ষ জনশক্তি নিশ্চিত করা সহজ হবে, যা জাতীয় অর্থনীতির জন্যও সুফল বয়ে আনবে।

শুধু ডিগ্রিধারী হওয়ার প্রবণতা কমিয়ে বাস্তবমুখী ও কর্মক্ষম শিক্ষা গ্রহণে আগ্রহী করার জন্য এ ধরনের সংস্কারকে সময়োপযোগী বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। অনেকেই মনে করেন, এই উদ্যোগ বাস্তবায়িত হলে পলিটেকনিক শিক্ষার প্রতি সমাজে ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গির সৃষ্টি হবে।

কারিগরি শিক্ষা হচ্ছে দেশের উন্নয়নের অন্যতম চালিকাশক্তি। সেখানে গুণগত মান নিশ্চিত করা সময়ের দাবি। পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে ভর্তি পরীক্ষার মতো সিদ্ধান্ত এই খাতে একটি যুগান্তকারী পরিবর্তন আনতে পারে। তবে, এর বাস্তবায়ন ও তদারকি সঠিকভাবে না হলে সুফল মিলবে না। সুতরাং সরকারকে পরিকল্পনার পাশাপাশি বাস্তবায়নের দিকেও সমান গুরুত্ব দিতে হবে।

বাংলাধারা/এসআর