ঢাকা, মঙ্গলবার, ০৮ জুলাই ২০২৫, ২৩ আষাঢ় ১৪৩২

লঘুচাপে উত্তাল বঙ্গোপসাগর, পর্যটকশূন্য কক্সবাজারের হোটেল-মোটেল

কক্সবাজার প্রতিনিধি:

 প্রকাশিত: জুলাই ০৭, ২০২৫, ১১:৪১ রাত  

ছবি: সংগৃহিত

বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট লঘুচাপের প্রভাবে টানা চার দিন ধরে বৃষ্টিপাত আর উত্তাল সাগরের ঢেউয়ে স্থবির হয়ে পড়েছে পর্যটননগরী কক্সবাজারের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা। দিনের অধিকাংশ সময় মেঘলা আকাশ, কখনো মাঝারি, কখনো মুষলধারে বৃষ্টি, আর বিশাল ঢেউয়ে আতঙ্কে রয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দা ও পর্যটকরা।

পর্যটকদের নিরাপত্তার ঝুঁকি এবং বিরূপ আবহাওয়ায় সৈকতে নামা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়েছে। ফলে অনেকেই হোটেল বুকিং বাতিল করে আগেই ফিরে যাচ্ছেন। এতে বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়েছেন স্থানীয় পর্যটন ব্যবসায়ীরা।

কক্সবাজার হোটেল-মোটেল-রিসোর্ট মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মুকিম খান জানান, তিন দিনের ছুটি উপলক্ষে কক্সবাজারের হোটেল, মোটেল, রিসোর্ট ও গেস্টহাউসের প্রায় ৯০ শতাংশ কক্ষ আগাম বুকিং করা ছিল। কিন্তু বৈরী আবহাওয়ার কারণে অনেকেই বুকিং বাতিল করে ফিরে গেছেন।

তিনি বলেন, শহরের পাঁচ শতাধিক হোটেল-মোটেল, রিসোর্ট ও গেস্টহাউসের অধিকাংশ কক্ষ এখন ফাঁকা। দুপুরের মধ্যেই বড় অংশের পর্যটক শহর ছেড়ে চলে গেছেন।

আবহাওয়া অধিদপ্তর কক্সবাজারসহ দেশের চারটি সমুদ্রবন্দরে তিন নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত জারি রেখেছে। পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, ৯ জুলাই পর্যন্ত এ অঞ্চলে ভারি থেকে অতি ভারি বৃষ্টি হতে পারে। এতে পাহাড়ি এলাকায় পাহাড়ধসের ঝুঁকিও তৈরি হয়েছে।

এদিকে টানা বৃষ্টিতে কক্সবাজার শহরের বিভিন্ন এলাকা এবং জেলার ৯ উপজেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। সড়কে পানি ওঠায় যান চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। উখিয়ার রোহিঙ্গা শিবিরগুলোতেও দেখা দিয়েছে জলাবদ্ধতা।

কক্সবাজার আবহাওয়া অফিসের সহকারী আবহাওয়াবিদ আবদুল হান্নান জানান, সোমবার দুপুর ৩টা পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় ১৫৩ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।

উখিয়ার ইউএনও মোহাম্মদ কামরুল হোসেন চৌধুরী বলেন, টানা বৃষ্টিতে উপজেলার নিম্নাঞ্চল ও পাহাড়ের পাদদেশে থাকা রোহিঙ্গা শিবিরগুলো প্লাবিত হয়েছে।

উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা এ টি এম কাউছার আহমদ জানান, ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার তালিকা প্রস্তুতের জন্য জনপ্রতিনিধিদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বলেন, রোহিঙ্গা শিবিরের নিচু এলাকায় বসবাসকারী অনেকের শেড পানির নিচে তলিয়ে গেছে। ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তায় সংশ্লিষ্ট সংস্থা ও শিবির ইনচার্জদের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।

সমুদ্রের পরিস্থিতি নিয়েও বাড়তি সতর্কতা নেওয়া হয়েছে। সি-সেফ লাইফগার্ডের সুপারভাইজার সাইফুল্লাহ সিফাত জানান, কয়েক দিন ধরে সাগর উত্তাল থাকায় সৈকতের ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলো লাল নিশানা দিয়ে চিহ্নিত করা হয়েছে। তবে অনেক পর্যটক সতর্কবার্তা অমান্য করে সাগরে নেমে যাচ্ছেন।

কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন বলেন, অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্ঘটনা এড়াতে সৈকতের ঝুঁকিপূর্ণ অংশে লাল নিশানা টাঙানো হয়েছে। পর্যটকদের সতর্ক করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও তৎপর রয়েছে।

টানা বর্ষণ, উত্তাল সাগর আর সতর্ক সংকেতের কারণে বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকতের পর্যটন এখন প্রায় থমকে গেছে। স্থানীয় ব্যবসায়ীরা শঙ্কায়, এ অবস্থার প্রভাব পড়তে পারে তাদের মৌসুমি আয়ে।

 

বাংলাধারা/এসআর