ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ৩১ জুলাই ২০২৫, ১৬ শ্রাবণ ১৪৩২

ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচন: তারিখ ঘোষনা হতে পারে শীঘ্রই

নিজস্ব প্রতিবেদক

 প্রকাশিত: জুলাই ২৬, ২০২৫, ১০:৩৯ রাত  

ফাইল ছবি

নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারির দ্বিতীয় সপ্তাহে জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজনের লক্ষ্যে কাজ করছে। প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, সরকার মেয়াদ বাড়ানোর কোনো পরিকল্পনা না রেখে নির্বাচনের রোডম্যাপে অটল আছে।

একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ক্ষমতা আঁকড়ে থাকার কোনো ইচ্ছা নেই। লক্ষ্য একটাই-একটি বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন। রোডম্যাপ স্পষ্ট, আমরা বিলম্ব করব না।

তবে সাম্প্রতিক কয়েকটি ঘটনা অন্তর্বর্তী সরকারের দৃঢ়তাকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলেছে। পুরান ঢাকায় দিনের বেলায় খুন, উত্তরা মাইলস্টোন স্কুলের কাছে সামরিক জেট বিধ্বস্ত হয়ে প্রাণহানি এবং প্রশাসনিক দুর্বলতা নিয়ে বিতর্ক বাড়ছে। ২০২৪ সালের আগস্টে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর দায়িত্ব নেওয়া এই সরকারকে এখন এসব সংকট মোকাবিলা করে অগ্রসর হতে হচ্ছে।

শনিবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় ১৪টি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে বৈঠকে ড. ইউনূস “পতিত শক্তিগুলোর” বিরুদ্ধে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, এই পরাজিত শক্তিগুলো বারবার বিশৃঙ্খলা তৈরি করে নির্বাচন প্রক্রিয়াকে ব্যাহত করার চেষ্টা করছে। যদি আমরা গণতন্ত্রপন্থী সব শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ করতে না পারি, তাহলে একটি ঐতিহাসিক সুযোগ হারাবো।

বৈঠকে বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক দলের নেতারা আইন-শৃঙ্খলার অবনতির সমালোচনা করে নির্বাচনের প্রস্তুতিকে আরও সুসংগঠিত করার আহ্বান জানান। বাংলাদেশ লেবার পার্টির নেতা মোস্তাফিজুর রহমান বলেন,
“আমরা প্রধান উপদেষ্টাকে বলেছি, প্রশাসনকে এখনই স্পষ্ট পদক্ষেপ নিতে হবে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ব্যর্থ হচ্ছে। এর পরিবর্তন কবে হবে?”

এখনও চূড়ান্ত তারিখ ঘোষণা না হলেও সরকারের অভ্যন্তরীণ সূত্র নিশ্চিত করেছে যে ফেব্রুয়ারি নির্বাচন আয়োজনের সম্ভাব্য সময়সীমা। জাতীয় পার্টি (কাজী জাফর) চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল হায়দার বৈঠকের পর জানান, প্রধান উপদেষ্টা আমাদের নিশ্চিত করেছেন যে ৪-৫ দিনের মধ্যেই নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা হবে। এর চেয়ে ভালো খবর আর নেই।

জাতীয় গণতন্ত্রী দলের ফরিদুজজামান এবং জাতীয় গণফ্রন্টের আমিনুল হক টিপু জানিয়েছেন, ফেব্রুয়ারির প্রথম দিকেই ভোট অনুষ্ঠিত করার বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টা আশ্বস্ত করেছেন। টিপু বলেন,
“তিনি স্পষ্টভাবে বলেছেন, রমজানের আগেই নির্বাচন হবে।”

এ বক্তব্য প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সেক্রেটারি শফিকুল আলমের আগের ঘোষণার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। ৮ জুলাই তিনি বলেছিলেন, “২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারি বা এপ্রিলের মধ্যেই নির্বাচন হবে এবং আগস্টের প্রথম দিকেই চূড়ান্ত তারিখ ঘোষণা করা হবে।”

তবে সবাই এতটা আশাবাদী নন। গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান জোনায়েদ সাকি সরকারকে “নির্বাচন স্থগিতের ষড়যন্ত্র” করার অভিযোগ তুলে অবিলম্বে তারিখ ঘোষণা ও “জুলাই সনদ” প্রকাশের দাবি করেছেন। বিএনপিও সম্ভাব্য বিলম্ব নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। যদিও জুন মাসে লন্ডনে ড. ইউনূস ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপার্সন তারেক রহমানের বৈঠক রমজানের আগেই ভোটের বিষয়ে ইতিবাচক ইঙ্গিত দিয়েছিল।

২০২৪ সালের আগস্টের গণঅভ্যুত্থানের পর দায়িত্ব নেওয়া ইউনূস সরকারকে একটি বিভক্ত ও সংকটময় রাষ্ট্রীয় কাঠামো পুনর্গঠন করতে হচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির ভাঙন, প্রশাসনিক অচলাবস্থা এবং জনবিশ্বাসের সংকট কাটিয়ে সরকার এখন কাঠামোগত সংস্কারের পথে হাঁটছে।

অন্তর্বর্তী সরকারের একটি বড় অঙ্গীকার হলো “জুলাই সনদ”, যেখানে প্রাতিষ্ঠানিক রূপান্তরের নকশা তুলে ধরা হবে। এছাড়া পূর্ববর্তী সরকারের সময় সংঘটিত নৃশংসতা ও দুর্নীতির বিচারের প্রতিশ্রুতিও বহাল রেখেছে প্রশাসন।

 

বাংলাধারা/এসআর