ঢাকা, শনিবার, ০২ আগস্ট ২০২৫, ১৮ শ্রাবণ ১৪৩২

নাহিদের ফেসবুক পোস্ট 

জাতীয় সরকার ও অভ্যুত্থান নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে তীব্র বিতর্ক

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

 প্রকাশিত: আগস্ট ০১, ২০২৫, ০২:২৩ দুপুর  

ফাইল ছবি

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তির সময়ে একটি ফেসবুক পোস্ট ঘিরে নতুন করে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে রাজনৈতিক অঙ্গন। জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বৃহস্পতিবার (৩১ জুলাই) দুপুরে দেওয়া এক পোস্টে জাতীয় সরকার গঠন, ছাত্রশক্তির ভুমিকা, এবং সামরিক হস্তক্ষেপ ঠেকানো নিয়ে বিস্তৃত মন্তব্য করেন। সেই পোস্টকে কেন্দ্র করে বিএনপি, ছাত্রশিবির ও প্রবাসী সাংবাদিক জুলকারনাইন সায়েরসহ একাধিক পক্ষ নিজেদের অবস্থান ব্যাখ্যা করতে বাধ্য হয়েছে।

নাহিদ ইসলামের দাবি, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষ থেকে অন্তর্বর্তীকালীন জাতীয় সরকার ও নতুন সংবিধান প্রণয়নের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল ৫ আগস্টের পর তারেক রহমানের সঙ্গে একটি ভার্চুয়াল বৈঠকে। নাহিদের ভাষায়, বিএনপি তখনো প্রস্তাবে সম্মত না হলেও, নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের অন্তর্ভুক্ত করে একটি নির্বাচনকালীন সরকার গঠনের প্রস্তাব আসে বিএনপির দিক থেকে। এ প্রেক্ষাপটেই ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে প্রস্তাব করা হয়।

অন্যদিকে, বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এই বক্তব্যকে ‘ভিত্তিহীন’ বলে উড়িয়ে দিয়েছেন। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, “নাহিদ ইসলাম যে দাবি করেছেন, সেটা ঠিক নয়। বললেই তো হবে না। আমাদের পক্ষ থেকে জাতীয় সরকারের কোনো কথা হয়নি।”

নাহিদের পোস্টে ইসলামী ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় নেতা মো. আবু সাদিক কায়েমের বিরুদ্ধেও তীব্র ভাষায় অভিযোগ তোলা হয়। নাহিদের ভাষায়, “শিবির আমাদের গঠনপ্রক্রিয়ায় যুক্ত ছিল- এটা সম্পূর্ণ মিথ্যাচার। সংযোগ বা সহযোগিতা মানে অংশীদারিত্ব নয়।” তাঁর দাবি, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্ব ছিল গণতান্ত্রিক ছাত্রশক্তির হাতে, এবং শিবিরের ভূমিকা ছিল সীমিত।

সাদিক কায়েম এই অভিযোগ নাকচ করে বলেন, “আমি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত নীতিনির্ধারণ ও মাঠপর্যায়ে সম্পৃক্ত ছিলাম। নাহিদ নিজেই এসব বলে নিজের অবস্থান দুর্বল করছেন।” তিনি আরও দাবি করেন, প্রথম সারির অনেক সমন্বয়ক অনুপস্থিত থাকায় তিনিই দায়িত্ব নিয়েছিলেন সমন্বয় ও নেতৃত্বে।

নাহিদের পোস্টে সবচেয়ে বিস্ময়কর অংশ ছিল ২ আগস্ট রাতে সামরিক হস্তক্ষেপের অভিযোগ। তাঁর দাবি, প্রবাসী সাংবাদিক জুলকারনাইন সায়েরের নেতৃত্বে একটি গোষ্ঠী ছাত্র সমন্বয়কদের চাপ দিয়েছিল, যেন তাঁরা সেনাবাহিনীর হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরের লক্ষ্যে ‘এক দফা’ ঘোষণা করেন। তিনি লিখেছেন, “আমাদের ওপর চাপ দেওয়া হয় যাতে আমরা আমাদের অবস্থান বদলাই এবং ক্ষমতা সেনাবাহিনীকে হস্তান্তরের পথ সুগম করি। আমরা তা প্রত্যাখ্যান করি।”

এই অভিযোগে প্রতিক্রিয়া জানিয়ে জুলকারনাইন সায়ের বলেন, “এটা শুধু মিথ্যা না, হাস্যকরও। এটি একটি সস্তা অপচেষ্টা। যারা অপকর্ম করেছে, এখন তারা দৃষ্টি সরানোর চেষ্টা করছে।”

নাহিদ তাঁর পোস্টে অভিযোগ করেছেন, “সায়েরদের নেতৃত্বে একটি গোষ্ঠী নিয়মিতভাবে কলরেকর্ড ফাঁস, নজরদারি ও অপপ্রচারে লিপ্ত। তারা চরিত্রহনন ও বিভ্রান্তিমূলক প্রচারে ব্যস্ত। বর্তমান উপদেষ্টাদের বিরুদ্ধে যে পরিমাণ অপপ্রচার চলছে, বাংলাদেশের ইতিহাসে এমন নজির বিরল।”

এর জবাবে জুলকারনাইন সায়ের পাল্টা পোস্টে দাবি করেন, তিনি কোনো নজরদারি করেননি বরং তাকে মিথ্যা তথ্য দিয়ে বিভ্রান্ত করা হয়েছে বলে নাহিদের ক্ষোভ।

নাহিদ ইসলামকে সরাসরি জিজ্ঞেস করা হলে তিনি জানান, “যা বলার ছিল, ফেসবুক পোস্টে বলেছি। এ নিয়ে এখন আর কিছু বলব না।” তবে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এই পোস্ট শুধু একটি ব্যক্তিগত অবস্থান নয়-বরং অভ্যুত্থানের অন্তরালের নানা দ্বন্দ্ব ও গোপন টানাপোড়েনের জানালা খুলে দিয়েছে।

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের এক বছর পূর্তিতে এমন বিতর্ক রাজনীতিতে নতুন আলোচনার জন্ম দিয়েছে। ছাত্র আন্দোলন, বিএনপি, ইসলামপন্থি সংগঠন, প্রবাসী গোষ্ঠী ও সেনা-সম্পৃক্ত গুজবের টানাপোড়েন আগামী দিনগুলোতে আরও প্রকাশ্যে আসবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

 

 

বাংলাধারা/এসআর