মাইলস্টোন ট্রাজেডি
প্রাণ হারানো শিক্ষকরা মানবতার দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবেন : প্রধান উপদেষ্টা
প্রকাশিত: আগস্ট ১৯, ২০২৫, ০৮:৫২ রাত

ছবি: সংগৃহিত
মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের বিমান দুর্ঘটনায় প্রাণ হারানো তিন শিক্ষক মাহেরীন চৌধুরী, মাসুকা বেগম ও মাহফুজা খাতুন মানবতা ও সাহসিকতার অনন্য দৃষ্টান্ত হয়ে জাতির কাছে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবেন বলে মন্তব্য করেছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। মঙ্গলবার বিকেলে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় নিহত শিক্ষকদের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে তিনি এ কথা বলেন।
সাক্ষাতে উপস্থিত ছিলেন শিক্ষক মাহেরীন চৌধুরীর স্বামী মনসুর হেলাল, দুই ছেলে আদিল রশিদ ও আয়ান রশিদসহ তার ঘনিষ্ঠ আত্মীয়রা। ছিলেন শিক্ষক মাসুকা বেগমের বোন পাপড়ি রহমান ও ভগ্নিপতি খলিলুর রহমান এবং শিক্ষক মাহফুজা খাতুনের মেয়ে আয়েশা সিদ্দিকা, বোন মুরশিদা খাতুন ও নিকটাত্মীয়রা। প্রধান উপদেষ্টা বলেন, বেশ কিছু সময় পার হয়ে গেলেও এই দুর্ঘটনার ক্ষত এখনও সবার মনে দগদগে হয়ে আছে। তিনি জানান, ঘটনার পরপরই তিনি পরিবারগুলোর সঙ্গে দেখা করতে চেয়েছিলেন, তবে সেই সময়ে শোকাহত অবস্থায় তা সমীচীন হয়নি। তিনি আরও বলেন, “আমরা আপনাদের প্রতি সমবেদনা জানাতে পারি, কিন্তু এ দুঃসহ স্মৃতি মুছে দেওয়ার ক্ষমতা আমাদের নেই। তবে এটুকু নিশ্চিত করতে চাই, এই শোক কেবল আপনাদের নয়, এটি পুরো জাতির শোক।”
সাক্ষাতে নিহত শিক্ষকদের পরিবার স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে আবেগে ভেঙে পড়েন। মাহেরীন চৌধুরীর স্বামী মনসুর হেলাল জানান, দুর্ঘটনার পর তাকে যখন হাসপাতালে নেওয়া হচ্ছিল তখন ফোনে কথা হয়েছিল। তিনি বলেন, “বার্ন ইউনিটে যে দৃশ্য আমি দেখেছি তা ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব নয়। কয়েকজন শিশু আমাকে বলল, মিস আমাদের টেনে বের করেছেন। তখন আমি তাকে জিজ্ঞেস করলাম, তুমি বের হয়ে এলে না কেন? তোমার নিজের সন্তানের কথা একবারও ভাবলে না? সে উত্তর দিয়েছিল—ওরাও তো আমার সন্তান, ওদের একা রেখে কীভাবে চলে আসি।”
মাহফুজা খাতুনের মেয়ে আয়েশা সিদ্দিকা কান্না ভেঙে বলেন, “মা অনেকটাই সুস্থ হয়ে উঠেছিলেন। আমি ভেবেছিলাম মাকে নিয়ে বাড়ি ফিরব। মাকে যখন হুইলচেয়ারে বসালাম, মনে হয়েছিল আমি বিশ্ব জয় করেছি। কিন্তু সব স্বপ্ন শেষ হয়ে গেল। বাবা নেই, এখন মাও চলে গেলেন। আমি এতিম হয়ে গেলাম।”
অন্যদিকে মাসুকা বেগমের ভগ্নিপতি খলিলুর রহমান বলেন, দুর্ঘটনার পর থেকেই তিনি অসুস্থ ছিলেন। তবুও নিয়মিত বাবার চিকিৎসার খোঁজ নিতেন, বোনের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতেন এবং পরিবারের জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করতেন। পরিবার আর স্কুল, এই ছিল তার জীবনের মূল ভরসা।
শিক্ষকদের পরিবারের এসব বেদনাময় স্মৃতিচারণ শুনে প্রধান উপদেষ্টা গভীর আবেগে বলেন, “তাদের গল্প শুনতে কষ্ট হয়, আবার একই সঙ্গে গর্বও হয়। আমাদের দেশে এমন মানুষ আছেন, যারা নিজের জীবন বাজি রেখে শিশুদের বাঁচাতে আগুনে ঝাঁপ দিয়েছেন। তারা আমাদের আদর্শ, আমাদের গর্ব। তাদের স্মৃতি জাতির ভেতরে চিরকাল বেঁচে থাকবে। এজন্য যা কিছু করা প্রয়োজন, আমরা তা করব।”
এসময় পরিবেশ উপদেষ্টা রিজওয়ানা হাসান, স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নূরজাহান বেগম, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার, মহিলা ও শিশু বিষয়ক উপদেষ্টা শারমিন এস মুরশিদ, সড়ক পরিবহন ও বিদ্যুৎ উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান, শিক্ষা উপদেষ্টা সি আর আবরার, গৃহায়ন ও গণপূর্ত উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান এবং প্রধান উপদেষ্টার এসডিজি বিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক লামিয়া মোরশেদ উপস্থিত ছিলেন।
বাংলাধারা/এসআর