নির্বাচনী আবহ তৈরিতে বিএনপির পাল্টা কৌশল
প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১৭, ২০২৫, ১০:৪৬ দুপুর

ছবি: সংগৃহিত
জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়ন ও অনুপাতিক নির্বাচন ব্যবস্থা (পিআর) চালুর দাবিতে জামায়াতসহ কয়েকটি সমমনাদের যুগপৎ আন্দোলনের বিপরীতে পাল্টা কর্মসূচি গ্রহণ করেছে বিএনপি। আন্দোলনের পথে না গিয়ে এবার সারাদেশে নির্বাচনী পরিবেশ সৃষ্টি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটি। এর অংশ হিসেবে ভোটারদের ঘরে ঘরে গিয়ে যোগাযোগ, দলীয় ৩১ দফা ও ইতিবাচক কর্মসূচি প্রচার এবং সম্ভাব্য প্রার্থীদের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি তুলে ধরার ওপর জোর দেওয়া হবে।
সোমবার (১৬ সেপ্টেম্বর) রাতে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
বিএনপি নেতাদের মতে, জামায়াতের নেতৃত্বে ঘোষিত কর্মসূচির মূল লক্ষ্য নির্বাচনের আগে মাঠ দখল করে রাখা এবং নেতাকর্মীদের উজ্জীবিত রাখা। এ পরিস্থিতিতে বিএনপি পাল্টা কৌশল হিসেবে নিজেদের নেতাকর্মীদের নির্বাচনী প্রস্তুতিতে যুক্ত করছে। সম্ভাব্য প্রার্থীদের জনগণের পাশে থেকে তাদের কল্যাণে কাজ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। দলের পরিকল্পনা অনুযায়ী, আসন্ন নির্বাচনে প্রতিটি আসনে একক প্রার্থী দেওয়ার চেষ্টা থাকবে, যাতে বিদ্রোহী প্রার্থীর সুযোগ না থাকে। প্রার্থী চূড়ান্ত না হওয়া পর্যন্ত নেতাকর্মীদের দ্বন্দ্ব এড়িয়ে চলার নির্দেশনাও দেওয়া হয়েছে।
সূত্র জানায়, জামায়াত ও সমমনাদের আন্দোলন সরকার ও বিএনপির ওপর চাপ সৃষ্টি করার কৌশল। তবে বিএনপি মনে করছে, নির্বাচনের মাঠে নিজস্ব অবস্থান শক্ত করা এখন তাদের জন্য সবচেয়ে কার্যকর পথ। বৈঠকে নেতারা আরও প্রস্তাব দেন, জনসম্পৃক্ত নানা কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে জনগণের দোরগোড়ায় গিয়ে নির্বাচনমুখী পরিবেশ তৈরি করতে হবে।
বৈঠকে দলের অভ্যন্তরীণ সাংগঠনিক বিষয় নিয়েও আলোচনা হয়। ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের পর বিভিন্ন অপপ্রচারের মধ্যে অভিযোগের ভিত্তিতে যেসব নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল, তাদের মধ্যে যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হয়নি, তাদের স্বপদে ফিরিয়ে আনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। নেতাদের মতে, এতে সংগঠনে শৃঙ্খলা ফিরে এসেছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনে ভরাডুবি এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (জাকসু) বয়কট প্রসঙ্গেও বৈঠকে ক্ষোভ প্রকাশ করা হয়। নেতারা মনে করেন, এসব নির্বাচনের প্রভাব জাতীয় নির্বাচনে পড়তে পারে। তাই কোথায় দুর্বলতা ছিল এবং কীভাবে তা সমাধান করা যায়, সেটি খুঁজে বের করার কথা বলা হয়েছে।
এ ছাড়া জুলাই জাতীয় সনদ প্রসঙ্গেও দীর্ঘ আলোচনা হয় বৈঠকে। স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, সংবিধান সংশোধনসংক্রান্ত প্রস্তাব বাদে অন্য সংস্কার এখনই সরকার বাস্তবায়ন করতে পারবে। আর যেগুলো অসম্পূর্ণ থাকবে, তা ভবিষ্যৎ সরকার সম্পন্ন করবে। তিনি জানান, ভিন্ন কোনো বৈধ পন্থা বের করতে হলে সুপ্রিম কোর্টের মতামত নেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছে বিএনপি। আলোচনার মাধ্যমে নতুন সমাধান বের হলে দল তাতে আপত্তি করবে না।
বৈঠকে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ড. আব্দুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সালাহউদ্দিন আহমেদ, সেলিমা রহমান, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমদ এবং অধ্যাপক ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন উপস্থিত ছিলেন।
বাংলাধারা/এসআর