খালেদা জিয়ার চিকিৎসা নিশ্চিতে সর্বোচ্চ সহযোগিতা দিচ্ছে সরকার: প্রধান উপদেষ্টা
প্রকাশিত: ডিসেম্বর ১৬, ২০২৫, ১১:৪৯ রাত
ছবি: বাংলাধারা
জাতীয় নেত্রী ও বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার চিকিৎসা নিশ্চিতে সরকার সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে প্রয়োজনীয় সব ধরনের সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
মঙ্গলবার (১৬ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে তিনি এ কথা বলেন।
ড. ইউনূস বলেন, দেশের তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও গণতান্ত্রিক রাজনীতির অন্যতম শীর্ষ ব্যক্তিত্ব বেগম খালেদা জিয়া বর্তমানে অসুস্থ অবস্থায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তার শারীরিক অবস্থা দেশের প্রতিটি মানুষের জন্যই উদ্বেগের বিষয়।
তিনি জানান, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার শুরু থেকেই খালেদা জিয়ার চিকিৎসার বিষয়টি সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে দেখছে। বাংলাদেশের ইতিহাসে তার ভূমিকা, স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় অবদান এবং গণতন্ত্রের প্রতি তার দৃঢ় অবস্থানের কথা বিবেচনায় নিয়ে সরকার তাকে রাষ্ট্রের ‘অতিগুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি (ভিআইপি)’ হিসেবে ঘোষণা করেছে।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “তার চিকিৎসা নিশ্চিত করতে পরিবারের ইচ্ছাকে সম্মান জানিয়ে প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। দেশে চিকিৎসার পাশাপাশি প্রয়োজনে বিদেশে উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থাও বিবেচনায় রয়েছে।”
ভাষণে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোট প্রসঙ্গে ড. ইউনূস বলেন, সরকার একটি সত্যিকার অর্থে অংশগ্রহণমূলক, শান্তিপূর্ণ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজন করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। নিরাপত্তা, প্রশাসনিক প্রস্তুতি, প্রযুক্তিগত সহায়তা ও পর্যবেক্ষণ- প্রতিটি ধাপেই সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।
তিনি বলেন, ভোট কেবল একটি আনুষ্ঠানিকতা নয়; এটি নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণে জনগণের সক্রিয় অংশগ্রহণ। দেশের মালিক জনগণ, আর সেই মালিকানার স্বাক্ষর হলো ভোট।
রাজনৈতিক নেতাদের উদ্দেশে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “আপনারা একে অপরকে প্রতিযোগী হিসেবে দেখবেন, কখনো শত্রু হিসেবে নয়।” একটি সুষ্ঠু নির্বাচনী পরিবেশ নিশ্চিত করতে সব দলের দায়িত্বশীল ভূমিকার ওপর তিনি গুরুত্বারোপ করেন।
ভোট কারচুপি ও ভোট বাক্স দখলের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানের কথা জানিয়ে ড. ইউনূস বলেন, যারা ভোটাধিকার হরণ করে, তারা জনগণের শত্রু। ভোট রক্ষা করা মানেই দেশ রক্ষা করা।
নির্বাচন সামনে রেখে মাঠ প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনে রদবদলের বিষয়েও কথা বলেন প্রধান উপদেষ্টা। তিনি জানান, এসব পরিবর্তন কোনো রাজনৈতিক বিবেচনায় নয়, বরং দক্ষতা ও পেশাগত যোগ্যতার ভিত্তিতে করা হয়েছে- যাতে ভোটাররা ভয়মুক্ত পরিবেশে ভোট দিতে পারেন।
ড. ইউনূস বলেন, ‘জুলাই সনদ’ জাতির ভবিষ্যৎ পথচলার একটি ঐতিহাসিক দলিল। রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, দুর্নীতি হ্রাস, প্রশাসনিক জবাবদিহিতা ও অর্থনৈতিক পুনর্গঠনের মতো সংস্কার প্রস্তাব বাস্তবায়নে জনগণের সরাসরি মতামত নেওয়ার লক্ষ্যেই গণভোট আয়োজন করা হয়েছে।
তিনি বলেন, একই দিনে সংসদ নির্বাচন ও গণভোট অনুষ্ঠিত হওয়ায় এবারের ভোটের গুরুত্ব শতবর্ষব্যাপী প্রভাব ফেলবে।
প্রধান উপদেষ্টা জানান, প্রথমবারের মতো লাখো প্রবাসী বাংলাদেশি পোস্টাল ব্যালটের মাধ্যমে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে যাচ্ছেন। ভবিষ্যতে এই সুযোগ আরও সম্প্রসারিত হবে বলেও আশ্বাস দেন তিনি।
ভাষণের শেষভাগে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিশ্চিত করার অগ্রগতির কথা তুলে ধরে ড. ইউনূস বলেন, বিচার বিভাগকে স্বতন্ত্র প্রশাসনিক কাঠামোর আওতায় এনে পৃথক সচিবালয় গঠন করা হয়েছে। এটি বাংলাদেশের বিচারব্যবস্থা সংস্কারের ইতিহাসে একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ।
বাংলাধারা/এসআর
