অন্তত ১০ দলের সঙ্গে চলছে অনানুষ্ঠানিক আলোচনা
বিএনপি-জামায়াতের বাইরে বলয় গড়ার চেষ্টায় এনসিপি
প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২৬, ২০২৫, ১১:৪১ দুপুর

ছবি: সংগৃহিত
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে নতুন সমীকরণ তৈরি হয়েছে দেশের রাজনীতিতে। নির্বাচনী জোট গঠনে পর্দার আড়ালে চলছে দফায় দফায় আলোচনা। এর কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে জুলাই অভ্যুত্থানে সামনের সারিতে থাকা তরুণদের নেতৃত্বে গড়ে ওঠা দল জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। রাজনৈতিক অঙ্গনে গুঞ্জন ছিল বিএনপি ও জামায়াতের সঙ্গে সম্ভাব্য জোট নিয়ে। তবে এনসিপি শুরুতেই স্পষ্ট করে দিয়েছে, তারা এ পথে হাঁটছে না। বরং বিএনপি-জামায়াত বলয়ের বাইরে থেকে মধ্যপন্থি শক্তিগুলোকে নিয়ে একটি নতুন রাজনৈতিক বলয় গড়ে তোলার উদ্যোগ নিয়েছে দলটি।
এনসিপির নেতারা মনে করছেন, বিএনপি বা জামায়াতের সঙ্গে জোটে গেলে নিজেদের রাজনৈতিক অস্তিত্ব ঝুঁকির মুখে পড়তে পারে। তাই বিকল্প শক্তিগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ জোরদার করেছেন তারা। এরই মধ্যে গণঅধিকার পরিষদসহ কয়েকটি দলের সঙ্গে অনানুষ্ঠানিক বৈঠক হয়েছে। ইতিবাচক সাড়া পাওয়ার কথাও জানিয়েছেন দলটির দায়িত্বশীল নেতারা। আলোচনায় রয়েছে আমার বাংলাদেশ পার্টি (এবি পার্টি), নাগরিক ঐক্য, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, গণসংহতি আন্দোলন, ভাসানী পরিষদ, ইউনাইটেড পিপলস বাংলাদেশ ও ইনকিলাব মঞ্চসহ কয়েকটি সংগঠন।
সম্প্রতি গণতন্ত্র মঞ্চের ছয় দলের সঙ্গেও বৈঠক করেছে এনসিপি, এবি পার্টি ও গণঅধিকার পরিষদ। সেখানে অংশ নেন গণসংহতি আন্দোলন, নাগরিক ঐক্য, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন, জেএসডি ও ভাসানী জনশক্তি পার্টির নেতারা। রাজনৈতিক শূন্যতায় বিকল্প শক্তি তৈরির প্রয়োজনীয়তার কথাও আলোচনায় উঠে আসে।
শুধু জোট নয়, গণঅধিকার পরিষদের সঙ্গে একীভূত হওয়ার আলোচনা চলছে বলেও জানা গেছে। যদিও সেটি এখনো চূড়ান্ত হয়নি। তরুণদের নেতৃত্বে গড়ে ওঠা আপ বাংলাদেশসহ আরও কয়েকটি রাজনৈতিক সংগঠন এই প্রক্রিয়ায় যুক্ত হতে পারে।
এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক সারোয়ার তুষার বলেন, তারা মধ্যপন্থি, গণতান্ত্রিক ও বাংলাদেশপন্থি শক্তিগুলোকে নিয়ে একটি বলয় গড়ে তুলতে চান এবং সেই বলয়ের ভরকেন্দ্র হবে এনসিপি। যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক আরিফুর রহমান তুহিন জানান, বিএনপি-জামায়াতের বাইরে থেকে গণহত্যার বিচার, জুলাই সনদের বাস্তবায়ন, গণপরিষদ নির্বাচন ও নতুন সংবিধানের দাবিতে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন গড়ে তোলাই তাদের মূল লক্ষ্য।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরাও মনে করছেন, তরুণদের নেতৃত্বে একটি বিকল্প বলয় গড়ে উঠলে দেশের রাজনীতিতে বড় পরিবর্তন আসতে পারে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. আইনুল ইসলাম বলেন, সারা বিশ্বেই তরুণদের উত্থান ঘটছে, বাংলাদেশও তার বাইরে নয়। জুলাই অভ্যুত্থানে তার প্রমাণ মিলেছে। আগামীর রাজনীতিতে তরুণ নেতৃত্ব সামনে চলে আসবে বলেই তিনি মনে করেন।
এনসিপির মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী জানান, নির্বাচনের আগেই এনসিপির নেতৃত্বে একটি বৃহত্তর রাজনৈতিক ব্লক গঠনের প্রস্তুতি চলছে। সেই ব্লকের নামও থাকবে এনসিপি। তার ভাষায়, তারা বিএনপি-জামায়াতের সঙ্গে কোনো জোটে যাবে না; বরং নিজেদের স্বতন্ত্র শক্তি হিসেবেই রাজনীতির ময়দানে থাকতে চায়।
দলটির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামও একই সুরে বলেন, বিএনপি বা জামায়াতসহ কোনো দলকেই তারা দেশের নেতৃত্বের জন্য উপযুক্ত মনে করেন না। তাই নিজেদের শক্তি গড়ে তুলতেই তারা নতুন দল করেছেন। অন্য কোনো শক্তি যদি যুক্ত হতে চায়, তবে সেটি স্বাগত জানানো হবে, তবে মূল লক্ষ্য হলো নিজেদের পথে এগিয়ে যাওয়া।
বাংলাধারা/এসআর