ঢাকা, শনিবার, ১৮ অক্টোবর ২০২৫, ২ কার্তিক ১৪৩২

ড. ইউনূসকে পূর্ণ সমর্থনের অঙ্গীকার বিশ্বনেতাদের

নিজস্ব প্রতিবেদক

 প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২৭, ২০২৫, ১২:৫৭ দুপুর  

ছবি: সংগৃহিত

বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের প্রতি অকুণ্ঠ সমর্থন জানালেন বিশ্বের প্রভাবশালী নেতা ও আন্তর্জাতিক ব্যক্তিত্বরা। শুক্রবার নিউইয়র্কের একটি হোটেল স্যুইটে আয়োজিত এক অনানুষ্ঠানিক বৈঠকে তারা বাংলাদেশকে এই সংকটকালীন সময়ে সব ধরনের সহযোগিতা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন।

সভায় সভাপতিত্ব করেন লাটভিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট এবং নিজামী গঞ্জাভি আন্তর্জাতিক কেন্দ্রের (এনজিআইসি) কো-চেয়ার ভাইরা ভিকে-ফ্রাইবারেগা। সেখানে অংশ নেন স্লোভেনিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট বরুট পাহোর, সার্বিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট বোরিস তাদিচ, লাটভিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট এগিলস লেভিটস, ইউরোপীয় পরিষদের সাবেক প্রেসিডেন্ট ও বেলজিয়ামের সাবেক প্রধানমন্ত্রী চার্লস মিশেল, গ্রিসের সাবেক প্রধানমন্ত্রী জর্জ পাপানড্রেউ, বুলগেরিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট রোজেন প্লেভনেলিভ ও পেটার স্টোয়ানভ, ক্রোয়েশিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট আইভো জোসিপোভিচ, বসনিয়া ও হার্জেগোভিনার সাবেক প্রেসিডেন্ট ম্লাডেন ইভানিক এবং মৌরিশাসের সাবেক প্রেসিডেন্ট আমিনাহ গুরিব-ফাকিম।

এছাড়া উপস্থিত ছিলেন কমনওয়েলথের সাবেক মহাসচিব, জর্জিয়ার সাবেক উপপ্রধানমন্ত্রী, জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের চার সাবেক প্রেসিডেন্ট, বেশ কয়েকজন সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী, বিশ্বব্যাংকের সাবেক উপ-সভাপতি ও এনজিআইসি-এর কো-চেয়ার ইসমাইল সেরাজেলদিন, রবার্ট এফ কেনেডি হিউম্যান রাইটসের প্রেসিডেন্ট কেরি কেনেডি এবং আইএইএ ও জর্জটাউন ইনস্টিটিউট ফর উইমেন, পিস অ্যান্ড সিকিউরিটির সিনিয়র প্রতিনিধিরা।

বক্তারা প্রফেসর ইউনূসের আজীবন দারিদ্র্য বিমোচন ও সামাজিক ন্যায় প্রতিষ্ঠার অবদানকে শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেন। এক নেতা স্পষ্টভাবে বলেন, “আমরা এখানে আপনার এবং বাংলাদেশের জনগণের পাশে আছি। আমরা সম্পূর্ণভাবে আপনাদের সমর্থনে।”

নেতারা বাংলাদেশের সাম্প্রতিক অগ্রগতির প্রশংসা করলেও গত ১৬ বছরের দুর্নীতি ও শোষণ থেকে বেরিয়ে আসার কঠিন চ্যালেঞ্জের কথাও তুলে ধরেন। কয়েকজন আন্তর্জাতিক সহায়তার প্রতিশ্রুতি দিয়ে বলেন, “আমরা প্রস্তুত আছি, যেকোনো সহায়তা দরকার হলে শুধু জানাবেন।”

কেরি কেনেডি বাংলাদেশের মানবাধিকার অগ্রগতিকে ‘অসাধারণ’ বলে অভিহিত করেন। আর জর্জটাউন ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক মেলান ভেরভিয়ার জানান, তাদের প্রতিষ্ঠান খুব শিগগিরই বাংলাদেশের “জুলাই বিপ্লবের” প্রতি আনুষ্ঠানিক সমর্থন ঘোষণা করবে।

এনজিআইসি-এর কো-চেয়ার ইসমাইল সেরাজেলদিন প্রতিশ্রুতি দেন, “আপনাদের প্রয়োজনে আমরা সবসময় আছি।”

অভূতপূর্ব এই সমর্থনের জন্য গভীর কৃতজ্ঞতা জানিয়ে প্রফেসর ইউনূস বলেন, “এটি আমার কাছে একেবারেই অপ্রত্যাশিত। আপনাদের একত্রিত হয়ে আমাদের পাশে দাঁড়ানো সত্যিই অবিশ্বাস্য। আমি অত্যন্ত মুগ্ধ।”

তিনি অন্তর্বর্তী সরকারের সামনে থাকা কঠিন চ্যালেঞ্জের সঙ্গে একটি প্রাকৃতিক দুর্যোগের তুলনা করেন। তাঁর ভাষায়, “দেশটি গত ১৫ বছর ধরে এক ধরনের ভূমিকম্পের মধ্য দিয়ে গেছে, যার মাত্রা ছিল রিখটার স্কেলে ৯।”

তরুণ প্রজন্মের স্বপ্ন পূরণকে সরকারের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার উল্লেখ করে তিনি বলেন, “মানুষ দ্রুত পরিবর্তনের আশা করছে, যদিও আমাদের সম্পদ সীমিত। তবে তরুণরা একটি নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখছে, সেটি পূরণ করা আমাদের দায়িত্ব।”

আগামী ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিতব্য সাধারণ নির্বাচনে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সমর্থনও চান তিনি। “আমরা আপনার দিকনির্দেশনা, সমর্থন এবং নৈতিক শক্তি চাই,” যোগ করেন তিনি।

সভায় এসডিজি কো-অর্ডিনেটর লামিয়া মোরশেদও উপস্থিত ছিলেন।

বাংলাধারা/এসআর