অভিযোগের তীর জামায়াত-শিবিরের দিকে
সংঘবদ্ধ সাইবার আক্রমণে বিপাকে বিএনপি
প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ৩০, ২০২৫, ১২:১২ দুপুর

ছবি: সংগৃহিত
জাতীয় সংসদ নির্বাচন যত ঘনিয়ে আসছে, বিএনপির ওপর সাইবার আক্রমণের তীব্রতাও তত বাড়ছে। দলের শীর্ষ নেতাদের বিব্রতকর ছবি, ভিডিও ও অডিও বিকৃত করে সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়া এখন নিয়মিত ঘটনায় পরিণত হয়েছে। প্রথমদিকে এসব অপপ্রচারকে তেমন গুরুত্ব না দিলেও সাম্প্রতিক সময়গুলোতে বিষয়টি বিএনপিকে বেশ ভাবাচ্ছে।
ভার্চুয়াল দুনিয়ায় বিএনপির উপস্থিতি তুলনামূলকভাবে দুর্বল। আর্থিক সংকট ও সাংগঠনিক সমন্বয়ের অভাবের কারণে দলটি কার্যকর প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারছে না। এর ফলে নির্বাচনের আগে অপপ্রচার আরও তীব্র আকার নিতে পারে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস ও সালাহউদ্দিন আহমেদসহ সক্রিয় অনেক নেতা এ অপপ্রচারের টার্গেটে রয়েছেন। ব্যঙ্গাত্মক ফটোকার্ড, ভুয়া তথ্য, বিকৃত অডিও-ভিডিও ও মিথ্যা ট্যাগলাইন ছড়িয়ে বিভ্রান্তি তৈরির চেষ্টা করা হচ্ছে। অনেক সময় এসব বিভ্রান্তি থেকে দলের ভেতরে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়ার ঘটনাও ঘটেছে।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক ড. দিলারা চৌধুরী বলেন, আগে মানুষ মূলধারার সংবাদে আস্থা রাখত, কিন্তু এখন সামাজিক মাধ্যমই হয়ে উঠেছে প্রধান ভরসা। সেখানে অপপ্রচার সংগঠিতভাবে ছড়ানো হচ্ছে, আর কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহারের ফলে এর ভয়াবহতা আরও বেড়েছে। নির্বাচন সামনে রেখে এ প্রক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে রাজনৈতিক পরিবেশ সংকটে পড়তে পারে।
বিএনপির আইটি সেলের দাবি, দলটির বিরুদ্ধে প্রায় সত্তর শতাংশ অপপ্রচার ভারত থেকে ছড়ানো হচ্ছে। উত্তর কোরিয়া, পাকিস্তান, তুরস্ক, রাশিয়া ও চীন থেকেও এ ধরনের প্রচারণা চালানো হচ্ছে। তাদের অভিযোগ, বিশেষ করে জামায়াত-শিবির সংগঠিতভাবে এসব কর্মকাণ্ডে যুক্ত এবং এ খাতে বিপুল অর্থ ব্যয় করছে। অন্যদিকে বিএনপি রয়েছে আর্থিক সংকটে, ফলে কার্যকর প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারছে না।
বিএনপির তথ্য ও প্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক অধ্যাপক এ কে এম ওয়াহিদুজ্জামান বলেন, বারবার একই ধরনের নেতিবাচক তথ্য মানুষের মনে প্রবেশ করলে সত্য-মিথ্যা বিভাজন করার ক্ষমতা কমে যায়। দীর্ঘমেয়াদে মানুষ মিথ্যাকেই সত্য বলে ধরে নেয়। একে বলা হয় ‘ইল্যুশন অব ট্রুথ এফেক্ট’।
তবে অভিযোগ অস্বীকার করেছে জামায়াত। দলের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল হামিদুর রহমান আযাদ জানিয়েছেন, সামাজিক মাধ্যম নিয়ন্ত্রণ করার সুযোগ কারও নেই। বরং জামায়াতের বিরুদ্ধেই বেশি অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। বিএনপি আনুষ্ঠানিকভাবে অভিযোগ করলে তা প্রমাণ করতে হবে, নইলে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
আইটি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বর্তমানে ডিপ ফেক, ভয়েস ক্লোনিং, গ্রিন স্ক্রিনসহ নানা উচ্চপ্রযুক্তি ব্যবহার করে ভুয়া কনটেন্ট তৈরি করা হচ্ছে। ভুয়া অনলাইন পোর্টাল ও নকল গণমাধ্যমের লোগো ব্যবহার করে বিভ্রান্তিকর তথ্যকে বিশ্বাসযোগ্য করে তোলা হচ্ছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, অপপ্রচারের বড় অংশ ছড়ানো হয় গভীর রাতে, যখন বিএনপির নেতাকর্মীরা সক্রিয় থাকেন না। ফলে তাৎক্ষণিক প্রতিরোধ সম্ভব হয় না। অথচ আট ঘণ্টার মধ্যে ফ্যাক্ট চেক ও পাল্টা প্রচারণা চালানো গেলে এর ক্ষতি অনেকটাই কমানো যেত।
বিএনপির আইটি সেলের কর্মকর্তাদের দাবি, প্রতিপক্ষ এ খাতে প্রতি মাসে ছয় থেকে আট কোটি টাকা ব্যয় করছে। কিন্তু বিএনপির এ খাতে কোনো বাজেট নেই। দল হিসেবে তারা আর্থিকভাবে দুর্বল, যদিও অনেক নেতা ব্যক্তিগতভাবে সমৃদ্ধ। এর পাশাপাশি আইটি সেল ও মিডিয়া সেলের মধ্যে সমন্বয়হীনতা থাকায় প্রতিরোধের উদ্যোগ আরও দুর্বল হয়ে পড়ছে। অনেক দক্ষ স্বেচ্ছাসেবী তরুণকে বাদ দিয়ে বাণিজ্যিক আইটি বিশেষজ্ঞদের দিয়ে কাজ চালানো হচ্ছে, ফলে আইটি সেল প্রভাবহীন হয়ে পড়ছে।
সব মিলিয়ে সাইবার আক্রমণ এখন রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতার নতুন হাতিয়ার। বিএনপি যদি দ্রুত প্রযুক্তিগত সক্ষমতা ও সাংগঠনিক সমন্বয় গড়ে তুলতে না পারে, তবে আসন্ন নির্বাচনের আগে আরও ভয়াবহ অপপ্রচারের মুখে পড়তে হতে পারে দলটিকে।
বাংলাধারা/এসআর