ঢাকা, শনিবার, ১৮ অক্টোবর ২০২৫, ২ কার্তিক ১৪৩২

ডাক্তাররা কি ওষুধ কোম্পানির দালাল? প্রশ্ন আসিফ নজরুলের

নিজস্ব প্রতিবেদক

 প্রকাশিত: আগস্ট ১৬, ২০২৫, ০৩:৩৭ দুপুর  

ছবি: সংগৃহিত

ডাক্তাররা কি ওষুধ কোম্পানির দালাল হয়ে যাচ্ছেন, এমন প্রশ্ন তুলেছেন আইন উপদেষ্টা ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক আসিফ নজরুল। তিনি বলেছেন, রোগীদের সবসময় নির্দিষ্ট কোম্পানির ওষুধ প্রেসক্রাইব করার প্রবণতা বন্ধ করতে হবে।

শনিবার (১৬ আগস্ট) সকালে রাজধানীর মিন্টু রোডের শহীদ আবু সাঈদ আন্তর্জাতিক কনভেনশন সেন্টারে বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক মালিক সমিতির বার্ষিক সাধারণ সভায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে তিনি এসব কথা বলেন।

আসিফ নজরুল অভিযোগ করেন, রোগীদের বাধ্য করা হচ্ছে নির্দিষ্ট কোম্পানির ওষুধ কিনতে। পৃথিবীর অন্য কোথাও ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিদের জন্য চিকিৎসকদের আলাদা সময় বরাদ্দের প্রচলন নেই, অথচ বাংলাদেশে তা নিয়মে পরিণত হয়েছে। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, এসব অত্যাচার বন্ধ করতে হবে। বাংলাদেশের মানুষ খুব গরিব। বড়লোকদের থেকে নিলেও সমস্যা নেই, কিন্তু গরিবের ওপর বোঝা চাপানো যাবে না।

তিনি নিজের অভিজ্ঞতার একটি উদাহরণ তুলে ধরে বলেন, তার বাসার এক সহকারী ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে গেলে তাকে ১৪টি টেস্ট করতে বলা হয়। পরে ক্ষুব্ধ হয়ে তিনি ঢাকার বাইরে চিকিৎসা নেন, যেখানে এতগুলো টেস্টের প্রয়োজন হয়নি।

চিকিৎসা সেবার মান নিয়েও সমালোচনা করেন আসিফ নজরুল। তিনি বলেন, একজন নার্স যদি মাত্র ১২ হাজার টাকা বেতন পান, তাহলে তিনি কীভাবে ভালো মেজাজে থেকে রোগীদের সেবা দেবেন? হাসপাতাল মালিকদের উদ্দেশে তিনি আহ্বান জানান, মুনাফা কিছুটা কমিয়ে কর্মীদের বেতন-সুবিধা এবং রোগীসেবার মান উন্নয়নে মনোযোগী হতে হবে।

তিনি বলেন, বাংলাদেশের মানুষ স্বেচ্ছায় বিদেশে চিকিৎসা নিতে যায় না। কিন্তু দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থার প্রতি আস্থা হারিয়ে অনেকেই ভারত বা ব্যাংককে যেতে বাধ্য হন। এখনই সচেতন না হলে বাংলাদেশ প্রায় ৫ বিলিয়ন ডলারের স্বাস্থ্যসেবা বাজার হারানোর ঝুঁকিতে রয়েছে। তার মতে, দেশে মানসম্মত চিকিৎসা নিশ্চিত করা গেলে আর কেউ বিদেশে যাবে না, বরং একসময় বিদেশিরাই চিকিৎসার জন্য বাংলাদেশে আসবেন।

বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিক মালিকদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে আসিফ নজরুল বলেন, আপনারা যে মুনাফা করবেন তার অন্তত ১০ শতাংশ কর্মীদের সন্তুষ্টি ও সেবার মান উন্নয়নে ব্যয় করুন। এতে শুধু রোগীদের আস্থাই বাড়বে না, দীর্ঘমেয়াদে মুনাফাও বৃদ্ধি পাবে।

তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, সঠিক পদক্ষেপ নিলে একদিন এমন সময় আসবে যখন দেশের স্বাস্থ্যসেবা নতুন আস্থার প্রতীক হয়ে উঠবে।

বাংলাধারা/এসআর