দেশজুড়ে দখল-চাঁদাবাজি: নতুন বন্দোবস্তে অশনি সংকেত দিলো টিআইবি
প্রকাশিত: আগস্ট ২৪, ২০২৫, ১০:৫১ রাত

ফাইল ছবি
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) জানিয়েছে, দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে ক্ষমতার অপব্যবহার উদ্বেগজনকভাবে বাড়ছে। তাদের মতে, কর্তৃত্ববাদের পতনের পর শুরু হওয়া দখল ও চাঁদাবাজির সংস্কৃতি নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্তের জন্য অশনি সংকেত হয়ে দাঁড়িয়েছে।
রোববার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, গত এক বছরে প্রভাবশালী রাজনৈতিক দলের কিছু নেতাকর্মীর কর্মকাণ্ড পুরোনো শাসনের দুর্নীতি, দখল ও স্বার্থসিদ্ধির সংস্কৃতির প্রতিচ্ছবি হয়ে উঠেছে।
তিনি উল্লেখ করেন, কর্তৃত্ববাদ পতনের পর থেকেই দেশজুড়ে দখলবাজি, চাঁদাবাজি, মামলা ও গ্রেপ্তার বাণিজ্য, ট্যাগ বাণিজ্য, দলীয় আধিপত্য এবং সহিংসতার বিস্তার ঘটেছে। যা ‘নতুন বাংলাদেশ’-এর জন্য বড় হুমকি।
টিআইবির মতে, এসব কর্মকাণ্ড প্রমাণ করছে- মুখে সংস্কারের প্রতিশ্রুতি দিলেও বাস্তবে দলীয় আধিপত্য ও দুর্বৃত্তায়নের সংস্কৃতি অব্যাহত রয়েছে। এতে নতুন রাজনৈতিক সংস্কৃতি গড়ে ওঠার জনআকাঙ্ক্ষা পদদলিত হচ্ছে।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, বিভিন্ন রাজনৈতিক শক্তির যোগসাজশে ‘মবতন্ত্র’ নামের নতুন এক সংস্কৃতি গড়ে উঠছে। এর আড়ালে সংখ্যালঘু, নারী, আদিবাসী ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর অধিকার হরণ, সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে আক্রমণ ও নারী অধিকার প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টার ওপর নৃশংস আঘাত চালানো হচ্ছে।
ইফতেখারুজ্জামান বলেন, অনেক রাজনৈতিক দলই নেতাকর্মীদের দায়িত্বহীনতা ও স্বার্থসিদ্ধির দৌড়ে জড়িয়ে পড়েছে। যদিও কোনো কোনো ক্ষেত্রে দলীয় পর্যায় থেকে সতর্কবার্তা ও সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে, কিন্তু আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ব্যর্থতা এবং কখনো কখনো সহযোগিতার মনোভাব পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলছে।
তিনি আরও বলেন, স্থানীয় পর্যায়ে দখলদারি ও চাঁদাবাজির প্রবণতা আবারও বেড়েছে। পরিবহন টার্মিনাল, বাজার, সেতু, জলমহাল ও খনিজ সম্পদ দখলের চক্র সক্রিয় হয়ে উঠেছে, যা অতীতের দুঃশাসনের পুনরাবৃত্তি।
টিআইবি জানায়, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন থেকে জন্ম নেওয়া নতুন দলও শুরুতে সুশাসন ও দুর্নীতিমুক্ত রাজনীতির প্রতিশ্রুতি দিলেও বাস্তবে তাদের কিছু নেতাকর্মী চাঁদাবাজি ও অনিয়মে জড়িয়ে পড়েছেন। এতে করে পুরোনো দুর্নীতিপরায়ণ রাজনৈতিক সংস্কৃতিই আবার রোল মডেল হয়ে উঠছে।
ড. ইফতেখারুজ্জামান সতর্ক করে বলেন, নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত পুরোনো অসুস্থ সংস্কৃতির হাতে জিম্মি হয়ে পড়ার ঝুঁকিতে আছে। তিনি প্রশ্ন তোলেন, “রাজনৈতিক দলগুলো কি আসলে কর্তৃত্ববাদের পতন ঘটালেও সেই সংস্কৃতিকে লালন করার পথে হাঁটছে?”
তিনি বলেন, এখনই রাজনৈতিক দলগুলোর উচিত আত্মজিজ্ঞাসা করা এবং বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের মূল চেতনা থেকে শিক্ষা নেওয়া। অভ্যন্তরে গণতান্ত্রিক চর্চা, জবাবদিহি, সততা ও নৈতিকতা প্রতিষ্ঠা করে একটি জনমুখী রাজনৈতিক সংস্কৃতি গড়ে তুলতে হবে।
তিনি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, যদি রাজনৈতিক দলগুলো নিজেদের সংস্কার না করে তবে জুলাই আন্দোলনের শহীদ ও ক্ষতিগ্রস্তদের ত্যাগ বৃথা যাবে। জনগণের মধ্যে হতাশা বাড়বে এবং নতুন বাংলাদেশের রাজনীতি ও পতিত কর্তৃত্ববাদের মধ্যে কোনো পার্থক্য খুঁজে পাওয়া যাবে না।
বাংলাধারা/এসআর