জাপা কার্যালয়ে আবারও হামলা ও অগ্নিসংযোগ
প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ০৬, ২০২৫, ১১:১৮ দুপুর

ছবি: সংগৃহিত
রাজধানীর কাকরাইলে জাতীয় পার্টির (জাপা) কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আবারও হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। শুক্রবার সন্ধ্যা ৭টা ১০ মিনিটে শুরু হওয়া এ হামলায় ভবনের নিচতলা থেকে পঞ্চম তলা পর্যন্ত ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। কার্যালয়ের আসবাবপত্র, নথিপত্র পুড়ে যায়, এরশাদের ম্যুরাল ও ছবি ভাঙচুর করা হয় এবং সড়কে ফেলে দেওয়া হয় দলের চেয়ারম্যান জি এম কাদেরের ছবি।
এর আগে বিকেলে শাহবাগে ১৪ দল নিষিদ্ধের দাবিতে সংহতি সমাবেশ করে গণঅধিকার পরিষদ। সমাবেশ শেষে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে তারা মিছিল নিয়ে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের উদ্দেশে রওনা দেয়। প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি, মিছিলের একটি অংশ থেকে কিছু লোক পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙে জাপা অফিসে হামলা চালায়। প্রায় আধাঘণ্টা ধরে চলে এ তাণ্ডব।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে প্রথমে জলকামান ব্যবহার করে পুলিশ। পরে সাউন্ড গ্রেনেড ও টিয়ার শেল ছুড়ে আগুন নেভানো হয়। তবে এরই মধ্যে ভবনের ভেতরে আগুন ছড়িয়ে পড়ে।
জাপার কার্যালয়ের ভেতরে তখন কয়েকজন নেতা উপস্থিত ছিলেন। তাঁরা হামলার আশঙ্কায় সরে যান। হামলায় অন্তত চারজন জাপা নেতা-কর্মী আহত হন। আগুন ও ভাঙচুরে ভবনের পাঁচতলার নিচতলা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আশপাশের এলাকায় যান চলাচল বন্ধ হয়ে তীব্র যানজট সৃষ্টি হয়।
হামলার জন্য সরাসরি গণঅধিকার পরিষদকে দায়ী করেছে জাতীয় পার্টি। জাপার যুগ্ম মহাসচিব যুবের আলম খান বলেন, “ঈদে মিলাদুন্নবী উপলক্ষে দোয়া মাহফিল নিয়ে আমরা সভা করছিলাম। হঠাৎ মিছিল থেকে আমাদের অফিসে হামলা হয়।”
অন্যদিকে গণঅধিকার পরিষদের নেতারা দাবি করেছেন, এ হামলা তাদের কর্মীরা নয়, ক্ষুব্ধ সাধারণ মানুষ চালিয়েছে। দলের উচ্চতর পরিষদের সদস্য আবু হানিফ বলেন, “জাতীয় পার্টি আওয়ামী লীগের দোসর হিসেবে কাজ করছে। তাই জনগণ ক্ষুব্ধ হয়ে তাদের ওপর হামলা চালিয়েছে।”
জাপার মহাসচিব শামীম হায়দার পাটোয়ারী গণঅধিকার পরিষদকে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে নিষিদ্ধ করার দাবি জানান। তিনি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, “২৪ ঘণ্টার মধ্যে দোষীদের গ্রেপ্তার না হলে দেশব্যাপী আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।”
বিএনপি এক বিবৃতিতে এ হামলার নিন্দা জানিয়েছে। তারা বলেছে, এ ধরনের ঘটনা গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র গঠনের প্রত্যাশাকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে। জামায়াতে ইসলামীর নেতারা এ ঘটনায় জাতীয় পার্টির রাজনীতি নিষিদ্ধ করার দাবি তুলেছেন।
এর আগেও একাধিকবার জাতীয় পার্টির কার্যালয়ে হামলা হয়েছে। ২৯ আগস্ট সংঘর্ষের পর জাপার কার্যালয়ে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। এরপর টাঙ্গাইল, ময়মনসিংহ, রাজশাহী, ঠাকুরগাঁও, খুলনা এবং ঢাকার বিভিন্ন স্থানে জাপা অফিসে হামলা হয়। সর্বশেষ ৩ সেপ্টেম্বর খুলনায় জাপা কার্যালয়ে অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটের ঘটনা ঘটে।
তবে শুক্রবারের হামলা সবচেয়ে ভয়াবহ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে, যেখানে পুরো ভবনের বড় অংশ পুড়ে গেছে এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশকে ব্যাপকভাবে তৎপর হতে হয়েছে।
বাংলাধারা/এসআর