মোহাম্মদপুরে মা-মেয়েকে নৃশংস হত্যাকাণ্ড: গৃহকর্মী আয়েশাই প্রধান সন্দেহভাজন
প্রকাশিত: ডিসেম্বর ০৯, ২০২৫, ০২:১৪ দুপুর
ছবি: সংগৃহিত
রাজধানীর মোহাম্মদপুরের শাহজাহান রোডের একটি ফ্ল্যাটে মা ও মেয়েকে ছুরিকাঘাতে হত্যা করা হয়েছে। নিহতরা হলেন-লায়লা আফরোজ (৪৮) এবং তাঁর নবম শ্রেণির ছাত্রী মেয়ে নাফিসা নাওয়াল বিনতে আজিজ (১৫)। সোমবার সকালে ঘটে ভয়াবহ এ ঘটনা। পুলিশ বলছে, চার দিন আগে কাজে যোগ দেওয়া নতুন গৃহকর্মী আয়েশাই এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে।
পুলিশ ও ভবনের সিসিটিভি ফুটেজ অনুযায়ী, সকাল ৭টা ৫১ মিনিটে বোরকা পরে বাসায় ঢোকে ওই তরুণী। এর প্রায় দুই ঘণ্টা পর, সকাল ৯টা ৩৬ মিনিটে, সে বের হয় স্কুলড্রেস, মাস্ক ও পিঠে ব্যাগ নিয়ে। তদন্ত-সংশ্লিষ্টদের মতে, হত্যাকাণ্ডের পর নিজের পোশাক বদলে পরিচয় গোপন করতেই এ কৌশল নেয় সে।
মর্গ সূত্র জানায়, লায়লা আফরোজের শরীরে ৩০টির মতো ছুরিকাঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে, যার বেশিরভাগই গলা ও কাঁধে। নাফিসাকে ছুরিকাঘাত করা হয়েছে কমপক্ষে ৬ বার। ধারণা করা হচ্ছে, মাকে হত্যার দৃশ্য দেখার পর নাফিসা নিরাপত্তাকর্মী বা কারও সঙ্গে যোগাযোগের জন্য ইন্টারকমে পৌঁছানোর চেষ্টা করেছিল। কিন্তু হত্যাকারী সেখানে গিয়ে তাকেও ছুরিকাঘাতে হত্যা করে। ধস্তাধস্তির সময় ইন্টারকমের লাইন খুলে যায়।
পুলিশ জানায়, বাসার ভেতর বিভিন্ন স্থানে রক্তের ছাপ, ধস্তাধস্তির চিহ্ন ও এলোমেলো আলমারি পাওয়া গেছে। কয়েকটি মূল্যবান জিনিস, বিশেষ করে লায়লার মোবাইল ফোন নিখোঁজ। বাথরুম থেকে উদ্ধার করা হয়েছে একটি সুইচ গিয়ার চাকু এবং একটি ফল কাটার ছুরি, যা দিয়েই হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়েছে বলে পুলিশের ধারণা।
নাফিসার বাবা, উত্তরা সানবিমস স্কুলের শিক্ষক এম জেড আজিজুল ইসলাম, সকালে স্কুলে গিয়েছিলেন। বেলা ১১টা ৩০ মিনিটের দিকে বাসায় ফিরে প্রথমে ড্রয়িংরুমে মেয়ের রক্তাক্ত দেহ এবং এরপর রান্নাঘরে স্ত্রীর লাশ দেখে হতবাক হয়ে পড়েন তিনি।
চার দিন আগে কর্মী নেওয়ার প্রসঙ্গ তুলে তিনি জানান, বোরকা পরা এক তরুণী কাজের খোঁজে এসে নিজেকে রংপুরের বাসিন্দা, জেনেভা ক্যাম্পে আত্মীয়দের সঙ্গে থাকা এবং বাবা-মা আগুনে পুড়ে মারা যাওয়ার কথা বলে পরিচয় দিয়েছিল। তাঁর শরীরেও আগুনে পোড়া দাগ ছিল। প্রথম দুদিন নিয়মিত এলে তৃতীয় দিনই ঘটে এই হত্যাকাণ্ড।
ফ্ল্যাটের নিরাপত্তাকর্মী জানান, সকালে বোরকা পরা এক নারী ইন্টারকমে লায়লাকে ফোন দেওয়ার পর বাসায় প্রবেশের অনুমতি পায়। পরে স্কুলড্রেস পরে বের হওয়া সেই মেয়েকেই তিনি ডাকলে সে নিজেকে বাসার লোক হিসেবে পরিচয় দিয়ে দ্রুত এলাকা ত্যাগ করে।
ডিএমপির তেজগাঁও বিভাগের উপকমিশনার ইবনে মিজান জানান, “সিসিটিভিতে আপাতত একজনকেই দেখা গেছে। আরও কেউ জড়িত ছিল কি না, তা যাচাই করা হচ্ছে।” লাশ দুটি ময়নাতদন্তের জন্য সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ মর্গে পাঠানো হয়েছে।
নৃশংস এই হত্যাকাণ্ডে শোক আর আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে পুরো এলাকায়। পুলিশ দ্রুত আয়েশাকে গ্রেপ্তারের জন্য অভিযান চালাচ্ছে।
বাংলাধারা/এসআর
