ঢাকা, শনিবার, ১৮ অক্টোবর ২০২৫, ২ কার্তিক ১৪৩২

নির্বাচন ঘিরে ভুয়া ভিডিও-তথ্যের বন্যা, প্রশ্ন ইসির সক্ষমতায়

নিজস্ব প্রতিবেদক

 প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২০, ২০২৫, ০১:৫৮ দুপুর  

ছবি: সংগৃহিত

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) অপব্যবহার আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রতিনিয়ত ছড়ানো হচ্ছে ডিপফেক ভিডিও, বিকৃত ছবি ও ভুয়া তথ্য। রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে হেয় করা ও জনমত প্রভাবিত করার উদ্দেশ্যে এসব কনটেন্ট ব্যবহৃত হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

নির্বাচন কমিশন (ইসি) এআইর অপব্যবহারকে নির্বাচনের জন্য হুমকি হিসেবে দেখলেও কার্যকর উদ্যোগ নিতে না পারায় প্রতিষ্ঠানটির সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে, দেশে প্রায় আট কোটি ইন্টারনেট ব্যবহারকারী রয়েছেন, যার মধ্যে ৭০ শতাংশ সামাজিক মাধ্যমে সক্রিয়। ভুয়া তথ্য যাচাইয়ের অভ্যাস না থাকায় এসব ব্যবহারকারীর বড় অংশ সহজেই বিভ্রান্ত হচ্ছেন।

গবেষণা প্রতিষ্ঠান ডিসমিসল্যাব জানিয়েছে, চলতি বছরের মে-জুন মাসে ভুয়া তথ্য ছড়ানোর প্রবণতা বেড়েছে ১৭ শতাংশ, যার মধ্যে ৪৪ শতাংশ রাজনীতি-সংক্রান্ত। ফেসবুক ছাড়াও ইউটিউব, টিকটক, হোয়াটসঅ্যাপ ও এক্স প্ল্যাটফর্মে ব্যাপক হারে এসব কনটেন্ট ছড়ানো হচ্ছে। নারীনেত্রীদের বিরুদ্ধে চরিত্র হননের উদ্দেশ্যে এআই-নির্ভর যৌন ইঙ্গিতপূর্ণ ভিডিওও তৈরি হয়েছে।

বিশ্বের বিভিন্ন দেশে নির্বাচনে এআইর অপব্যবহার নিয়ে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রে জো বাইডেনকে লক্ষ্য করে ডিপফেক ভিডিও ছড়ানো হয়, ভারতে শতাধিক প্রার্থীর নামে ভুয়া প্রচারণা চালানো হয়, আর রোমানিয়ায় এআই হস্তক্ষেপের অভিযোগে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন বাতিল করা হয়। এ কারণে যুক্তরাষ্ট্র, ভারত, চীন ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন এআই নিয়ন্ত্রণে আইন ও নীতি গ্রহণ করেছে। কিন্তু বাংলাদেশে পূর্ণাঙ্গ আইন না থাকায় কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।

অপতথ্যের শিকার রাজনৈতিক দলগুলো এ বিষয়ে উদ্যোগ না নিয়ে সরকারের সহযোগিতায় ইসিকে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে আহ্বান জানিয়েছে। এনসিপি, বিএনপি ও জামায়াতের নেতারা বলেন, এআইর অপব্যবহার ঠেকাতে এখনই ব্যবস্থা না নিলে নির্বাচনে মহামারি আকার নেবে ভুয়া তথ্য।

ইসি আচরণবিধিতে নতুন করে ডিপফেক, বিকৃত ছবি ও ভুয়া তথ্য প্রচার নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এসব লঙ্ঘন করলে প্রার্থিতা বাতিল ও দেড় লাখ টাকা পর্যন্ত জরিমানার বিধান যুক্ত হয়েছে। তবে কমিশনের কর্মকর্তাদের মতে, সামাজিক মাধ্যম নিয়ন্ত্রণ ও দ্রুত অপতথ্য শনাক্ত করার মতো সক্ষমতা ইসির হাতে নেই।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে ডিপফেক শনাক্ত করা, সংবাদমাধ্যম ও ফ্যাক্ট চেকিং প্রতিষ্ঠানকে সহায়তা দেওয়া এবং জনগণের প্রযুক্তি সাক্ষরতা বাড়ানো জরুরি। তা না হলে একটি ভুয়া তথ্যও কয়েক ঘণ্টার মধ্যে পুরো নির্বাচনী পরিবেশকে অস্থিতিশীল করে দিতে পারে।

বাংলাধারা/এসআর